সংলাপে গিয়ে ইসিকে যা বলল ২৬ রাজনৈতিক দল
Share on:
ক্ষমতাসীন দল ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে দাবি করলেও নির্বাচন কমিশনের সংলঅপে এসে কিছু দল অনুকূল পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। ইসির সঙ্গে আলোচনা শেষে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
শনিবার (৪ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে। আগামীতে এটা আরও ভালো হবে। বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, সংবিধানের কোথাও এ কথা লেখা নেই। পৃথিবীর কোনো আইনেও লেখা নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের সময় অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। সুতরাং যেসব রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা নেই, যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণের প্রতি যাদের আস্থা নেই; তারা তো নির্বাচনে আসবেই না।
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা হয়নি। জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধি প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, বরাবরের মতো ইসির সব ধরনের প্রস্তুতি জানানো হয়েছে। পোলিং, প্রিসাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একটি পক্ষের হয়ে ভোটের দিন কাজ করলে আস্থাহীনতা তৈরি হয়। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ নির্বাচনে জড়িত ১৩৭ জনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছিলাম আমরা। তবে কমিশন এ নিয়ে কোনো কিছু জানায়নি।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, যেহেতু একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে সেই অস্থিরতা নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা আছে। আমরা চাই, এই শঙ্কা থেকে দেশবাসী যেন মুক্তি পায়। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক হয়, অবাধ সুষ্ঠু হয় এবং এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ যাতে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে ব্যাপারে কমিশনকে অর্থবহ পদক্ষেপ নিতে হবে। পেশি শক্তিও সন্ত্রাসের দাপটমুক্ত ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন যেন না হয় বিষয়ে নজর দিতে বলেছে সাম্যবাদী দল।
জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারুক। আগামী নির্বাচন দেশের জন্য, জাতির জন্য গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে সম্মিলিত করুক। আমরা এখানে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশের সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে।
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, নির্বাচনে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কমিশনকে আরও কাজ করতে হবে।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোমিনুল আলম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে আয়োজনে সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর যেভাবে দায়িত্ব চাপিয়েছে, তাতে ফেরেশতা ছাড়া আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী মোকাবিলা করে নির্বাচনে টিকে থাকা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক ঐক্যমত্য সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এবং নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা স্থগিতের দাবি জানিয়েছি।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচন জাতি আর দেখতে চায় না। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, ভোটকেন্দ্র দলীয় প্রভাবমুক্ত হতে হবে। নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তাব করেছি।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইসির অধীনে নির্বাচন হবে, সরকারের অধীনে নয়। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক করতে কমিশনকে বলা হয়েছে।
ইনসানিয়াত বিপ্লবের মহাসচিব রায়হান রাহবার বলেন, সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই নির্বাচন পরিচালনা করা হোক। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হোক।
সুপ্রিম পার্টি️র সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বলেন, দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অবরোধ চলছে সেটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। আমরা সিইসিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশে তৈরি করার জন্য অনুরোধ করেছি।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বর্ত️মানে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো পরিবেশ দেশে নেই। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ইসির ওপর আস্থা থাকলেও দলীয় ও সরকারের আজ্ঞাবহ প্রশাসনের কারণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে। নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে আমরা অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে।
গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন জানান, জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সরকার চাই। রাজনৈতিক সরকার হলে গণফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি️র (ন্যাপ) সভাপতি আইভি আহমেদ বলেন, আগামী নির্বাচনের দিকে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি রয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনে পুরোপুরি অনুকূল পরিবেশ তেমন নেই। তবে সব সময় সম্পূর্ণ️ অনুকূল পরিবেশ নির্বাচন করব সেটাও না; ৯৯ ভাগ পরিবেশ অনুকূল হবে, সেটিও বলতে পারি না। অনুকূল পরিবেশ না থাকলেও তার মধ্য দিয়ে আমাদের নির্বাচন করে যেতে হবে।
তরিকত ফেডারেশনের মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী ফারুকী বলেন, সংবিধান যে ক্ষমতা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে তা প্রয়োগ করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, যারা আলোচনায় আসেনি নির্বাচন কমিশনের উচিত তাদের আলোচনায় নিয়ে আসা। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কমিশনকে এই উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষক শ্রমিকের ভোটে অংশ নেওয়ার সুবিধার্থে আয়করের বিষয়টি পরিবর্তন করা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ যে সমর্থন প্রয়োজন হয় এটা উঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিকল্পধারার মহাসচিব আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা চেয়েছি যেন সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়। এখানে কোন কোন দলের অংশগ্রহণ না হয় তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সেখানে পরিবেশ সৃষ্টি করা। খেলার মাঠে একদল খেলল আরেক দল খেলল না তাহলে খেলাতো হলো না।
তিনি বলেন, এর আগে ১১টা নির্বাচন হয়েছে। সব নির্বাচনে ছোটখাটো ভুল ছিল। আমাদের প্রস্তাব ছিল, আগামী নির্বাচনে যেন কোনো ভুল ত্রুটি না হয়। সবাই যাতে অংশগ্রহণ করে। আইনের শাসন আমরা চাই। সবার যদি অংশগ্রহণ না হয়, সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে নির্বাচন সংসদ জনগণের বা দেশের কাজে আসবে না।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচন জাতি আর দেখতে চায় না। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন।
শনিবার ৪৪টি দলের মধ্যে ২৬টি অংশ নিয়েছেন। বিএনপিসহ ১৮টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। সকালে ১৩ টি দলের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা ও বিকেলে ১৩ দলের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। সভায় সিইসির সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
এনএইচ