ইসিকে নিজ অবস্থানে অটল থাকর পরামর্শ এম সাখাওয়াতের
Share on:
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে ‘ওয়েলকাম’ জানিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এর পরের ধাপগুলোতে ‘স্লিপ’ না করার পরামর্শ দিয়ে নিজেদের অবস্থানে ‘অটল’ থাকতে ইসিকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনের ভোট নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বর্তমান কমিশনের সঙ্গে সাবেকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, ‘তারা (বর্তমান কমিশন) গাইবান্ধা-৫ আসনে যে অ্যাকশন নিয়েছে, আমি তাদের ওয়েলকাম জানিয়েছি। বলেছি, এ পর্যন্ত ঠিক আছে। এর পরের ধাপগুলোতে আপনারা যেন স্লিপ না করেন। যদি করেন তাহলে জাতির কাছে অন্যরকম একটা ম্যাসেজ (বার্তা) যাবে, যে আপনারা এটুকু দেখানোর জন্য করলেন, বাকিগুলোতে করলেন না। আইন আপনাদের যে শক্ত অবস্থানে যেতে বলেছে, প্লিজ ডু ইট।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে অ্যাটমোসফেয়ার ঠিক নেই, তাহলে ইলেকশন বন্ধ করতে পারে, বন্ধ রাখতে পারে। যতক্ষণ না পর্যন্ত মনে করবে যে, পরিবেশ ঠিক হয়নি, ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ রাখতে পারবে। কোথাও কোনো বাধা নেই৷’
বাংলাদেশে এর আগে কোনো কমিশন এই কাজ (নির্বাচন বন্ধ) করতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৯৪ সালে যদি এটি করা হতো, তাহলে আজ পলিটিক্যাল ফিল্ড অন্যরকম হতে পারত।’
আজকের মতবিনিময় সভায় কোনো এজেন্ডা ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে কোনো এজেন্ডা পাইনি। এজেন্ডাভিত্তিক ছিল না। এজেন্ডা হলে ভালো হতো। যে যার মতো কথা বলেছেন।‘
ডিসি এসপিদের সঙ্গে ইসি আনিছুরের বাগবিতণ্ডার প্রসঙ্গ টেনে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘যেটা হয়নি কখনো। এখানে তাদের কনফিডেন্স আনতে হবে যে, আপনারা প্রটেকশন দিচ্ছেন ইলেকশনের সময়ে।’
বরিশালে মেয়র আর ইউএনওর ঘটনা টেনে তিনি বলেন, ‘ইউএনওকে সম্পূর্ণ প্রটেকশন দেওয়া ইলেকশন কমিশনের উচিত বলে আমি মনে করি।’
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে বড় ইলেকশন কমিশন আর কোথাও নেই। তিন হাজার স্থায়ী লোক নিয়ে স্থায়ী অফিস নিয়ে আর কোনো কমিশন নেই। এই লোকগুলোকে ইউটিলাইজ করতে হবে।’
বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা অনুযায়ী সংসদীয় আসনগুলোতে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা দিয়ে কাজ হবে না বলে মন্তব্য করেন সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আইনে কোথাও বলা নেই একজনকেই রিটার্নিং কর্মকর্তা হতে হবে৷’
জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এনআইডি সরকার এখান থেকে কেন নিতে চাচ্ছে সেটা পরিষ্কার নয়। এই এনআইডি নিয়ে এতগুলো বছরে একটি সিস্টেম ডেভেলপ করেছে কমিশনে। এটা যদি আলাদা হয়ে যায়, তাহলে কোনো এক সময়ে ইন ফিউচারে ভোটার লিস্ট নিয়ে কথা উঠবে। কারটা ঠিক?’
‘এনআইডি ঠিক নাকি ভোটার লিস্টটা ঠিক। আলটিমেটলি এটা নিয়ে একটা গন্ডগোল হবে। যেসব দেশে আলাদা আছে সেখানে ভোটার লিস্ট নিয়ে বড় ধরনের গন্ডগোল হচ্ছে। কাজেই এই জায়গায় সরকারকে বোঝাতে হবে বর্তমান কমিশনকে। সরকার চাইলে আলাদা করে করতে পারে। এই সরকারের সময়েই ভোটার লিস্ট তৈরি করেছিলাম। তারা এর মাধ্যমে ইলেকশন করেছিল। তাহলে এখন হঠাৎ এনআইডিটা কেন নিতে চায়? এর বোধগম্যতা আমার কাছে নেই।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভালো হোক মন্দ হোক। দেড়শ আসনে ইভিএম না কিনে সিসি ক্যামেরা কিনুন। এটি শুধু কেন্দ্র থেকে নয়, ভাগ করে দিন। পাঁচজন কমিশনার আছেন। এগুলো রেকর্ডেড থাকবে।’
পেপার ব্যালটে ভোট চুরি করলেই খুব সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে ভোটার তালিকা আছে। স্বচ্ছ ভোটার তালিকায় সিগনেচার আছে। ম্যাচ করা যায়। সূক্ষ্ম কারচুপি যেটা আপনারা দেখলেন ইভিএমে, কোনো ঝামেলা নেই। হইচই নেই। অন্য সিস্টেমে যা হবে, বাইরেও হইচই হবে। একজন লোক পারবে না। বুথ ক্যাপচার করতে পাঁচ ছয়জন লোক লাগবে। তখন প্রতিপক্ষ হইচই করবে। সেটা আপনারা আরও ভালো করে দেখতে পারবেন।’
দলীয় সরকারের অধীনে যে ভোট হয়, তা সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করে সুষ্ঠু করা যাবে কি না— জানতে চাইলে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘পলিটিক্যাল প্রসঙ্গ তো আমি আনিনি।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে জেনে শুনেই তারা (কমিশন) শপথ নিয়েছে। এই সংবিধানেই ইলেকশন হবে।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন কী বলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমিশন কোনো বক্তব্য দেয়নি। তারা নোট করেছে।’
গাইবান্ধা-৫ আসনে ভোট বন্ধ করে কমিশন কোনো সংকটে আছে কি না জানতে চাইলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কোনো সংকটে নেই। সংবিধান যা বলছে, আরপিও যা বলছে, কমিশন তাই করেছে। একটি আসনের জন্য সংসদে তো কোনো গন্ডগোল হচ্ছে না। সরকার পড়ে যাবে বা কিছু।’
নির্বাচন কমিশনকে এই অবস্থানে অটল থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দে হ্যাভ টু শো, শুধু বন্ধ করলাম না, আমার হাতে পাওয়ার আছে, আই উইল টেক অ্যাকশন।’
এমআই