রাশিয়ার ভাবনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
Share on:
নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অথচ রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘দুমা’ ও দলীয় কার্যালয়ে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনেই ১৩২টি শ্যাম্পেনের বোতল খুলে উদযাপন করেন রাশিয়ার জাতীয়তাবাদী এক রাজনীতিবিদ।
ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কির উদযাপন করা সেই বিজয়ের হাসিটি হাসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ায় রুশ-মার্কিন সম্পর্কে (ইতিবাচক) পরিবর্তন ঘটবে বলে নিশ্চিত ছিলেন ঝিরিনোভস্কি।
এই আশা ঝিরিনোভস্কির বাইরেও অনেকেই করেছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরটি’র প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ান এক এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় এমন অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেছিলেন যে, মার্কিন পতাকা উড়িয়ে তিনি মস্কোর রাস্তায় গাড়ি চালাতে চান। তখন আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল, যা আমি কখনোই ভুলবো না। সেটি হচ্ছে, একজন রুশ কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন যে, ট্রাম্পের বিজয় উদযাপন করতে তিনি একটি সিগার ধরিয়েছিলেন এবং এক বোতল শ্যাম্পেন (হ্যাঁ, আরও শ্যাম্পেন) পান করেছিলেন।
মস্কো আশা করেছিলো যে, রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাশিয়ার উপর থেকে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবেন। এমনকি, তিনি ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসাবে স্বীকৃতিও দিয়ে দিতে পারবেন।
যদিও বাস্তব ছিল অন্যরকম। এত আশা-প্রত্যাশার বিপরীতে রাশিয়ার প্রাপ্তি এতটুকুই ছিল যে, ক্ষমতায় থাকাকালে ট্রাম্প রাশিয়ায় মানবাধিকারের বিষয়ে কখনোই প্রচারণা চালাননি বলে জানান রাশিয়ার নেজাভিসিমায়া গেজেটা পত্রিকার সত্ত্বাধিকারী ও প্রধান সম্পাদক কনস্ট্যান্টিন রেমচুকভ।
তিনি বলেন, তখন রুশ নাগরিকদের মধ্যে যারা একটু বেশিই আশা করে ফেলেছিলেন, তাদের সেই মোহ কাটতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। অথচ ট্রাম্পের শাসনামলেই রাশিয়ার উপর সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞাটি দেওয়া হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে গত মেয়াদের শেষদিকে তার কার্যক্রম নিয়ে অনেক রাশিয়ান হতাশ হয়েছিল। হয়তো সেকারণেই এবারের মার্কিন নির্বাচনের আগে কোনো রুশ রাজনীতিবিদ বা কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভের সম্ভাবনার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।
ট্রাম্প প্রশ্নে রাশিয়ানরা এখন ঠিক আগের অবস্থানে নেই। বরং এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দেখা গেছে ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী কমালা হ্যারিসের প্রশংসা ও সমর্থন করতে। যদিও পুতিনের ওই প্রশংসা ও সমর্থনকে ক্রেমলিন ট্রোলিং বা ক্রেমলিনের রসিকতা হিসাবেই ব্যাখ্যা করেছেন কেউ কেউ। রুশ প্রেসিডেন্ট এক বক্তব্যে বলেন, তিনি হ্যারিসের ‘সংক্রামক হাসি’কে পছন্দ করেন।
তবে পুতিনের মুখে যে হাসি এখনও টিকে আছে, সেটির কৃতিত্ব যে হ্যারিসের না বরং ট্রাম্পের, সেটি বলতে চান অনেকে।
উদাহরণ দেন, ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা নিয়ে রিপাবলিকানপ্রার্থী ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারণায় বাইডেন প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করছেন। অথচ ইউক্রেনের ওপর পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন চালানোর জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে দায়ী করে বক্তব্য দেওয়ার ব্যাপারে তার ভেতরে যে অনিচ্ছা কাজ করছে, সেটা বেশ স্পষ্টভাবেই বুঝিয়েছেন ট্রাম্প। সাম্প্রতিক নির্বাচনি বিতর্কের সময়েও তিনি ইউক্রেনকে যুদ্ধে জেতানোর বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি।
ট্রাম্প এক প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে এই যুদ্ধ শুরুই হতো না।
একই প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী কমালা হ্যারিস বিপরীত অবস্থান নেন। তিনি সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষ নেন। যুক্তি তুলে ধরে হ্যারিস বলছেন যে, কৌশলগত স্বার্থেই ইউক্রেনকে সমর্থন করা প্রয়োজন। এ সময় তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ‘খুনি স্বৈরশাসক’ বলে সম্বোধন করেন।
এর পাল্টা জবাব দেখা যায়, রাশিয়ার টিভি চ্যানেলে হ্যারিসের প্রশংসা ধরণ দেখে। কয়েক সপ্তাহ আগে রাশিয়ার একজন প্রথম সারির সংবাদ উপস্থাপককে হ্যারিসের রাজনৈতিক জ্ঞান ও সক্ষমতার বিষয়ে প্রশ্ন পর্যন্ত তুলতে দেখা গেছে। মার্কিন এ ডেমোক্র্যাটপ্রার্থীকে তিনি রাজনীতির মাঠ ছেড়ে টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সে যাই হউক মার্কিন নির্বাচনে প্রার্থীর চেয়ে বড় বিষয় কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে সেটি। এটাই রাশিয়ার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কেননা, নির্বাচন যদি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় এবং ট্রাম্প ও হ্যারিসের মধ্যে একজন যদি সামান্য ব্যবধানে হেরে যান, সেক্ষেত্রে দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও রেষারেষি-বিতর্ক বেড়ে যাবে।
তখন সারা দেশে নির্বাচন পরবর্তী বিশৃঙ্খলা ঠেকাতেই মার্কিন সরকার ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈদেশিক নীতির বিষয়ে তাদের মনোযোগ কম থাকবে বলে মনে করেন অনেকে। -বিবিসি
এসএম