শনিবার ১০, জুন ২০২৩
EN

করোনাঝুঁকি এড়াতে হাসপাতাল থেকে বাসায় খালেদা: মেডিকেল বোর্ড

করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে বাসায় যাচ্ছেন বলে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী জানিয়েছেন।

করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে বাসায় যাচ্ছেন বলে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী জানিয়েছেন।

তবে এভারকেয়ারে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানেই বাসায় বেগম জিয়ার চিকিৎসা চলবে বলেও জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম জিয়ার মেডিকেল বোর্ড আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। এর মধ্য দিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ৮১ দিন পর গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফিরছেন খালেদা জিয়া। 

ডা. মোহাম্মদ সিদ্দিকী বলেন, আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, আপাতদৃষ্টিতে মেজর ব্লিডিংয়ের চান্স সম্ভবত থামানো গেছে। তারপর সিসিইউতে রেখে আমরা আরও ছয়দিন পর্যবেক্ষণ করি। তখনও দেখেছি, উনার আর ব্লিডিং হচ্ছে না। এরপর আমরা উনাকে শিফট করে কেবিনে নিয়ে আসি। এখনো তিনি কেবিনেই আছেন।

বেগম জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের এ সদস্য আরও বলেন, একটা কথা স্পষ্ট বলে রাখা প্রয়োজন, উনার মূল যে অসুখ সেটার যে প্রসিডিউর হাই-প্রেসারের টোটাল সাপোর্টেশনের জন্য বাইপাস ট্রেন তৈরি করে দেওয়া, সেটা কিন্তু আমরা করতে পারিনি।

আমরা যেটা করেছি, দৃশ্যমান বড় যে বেসিকগুলো ফেটে যাচ্ছিল সেগুলোকে ব্যান্ডিং করেছি, ব্লক করা হয়েছে। উনার অবস্থা স্টেবল আছে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে আবার যে ব্লিডিং হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, বেগম জিয়ার প্রধান সমস্যা লিভার সিরোসিস। এই রোগের সর্বশেষ চিকিৎসা লিভার পরিবর্তন করা। কিন্তু আপাতত তিনি সেই শারীরিক অবস্থায় নেই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদের সঞ্চলনায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ডা. এফ এম সিদ্দিক, ডা. নুরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. লুৎফর আজিজ, ডা. শাহরিয়ার, ডা. আরমান রেজা, ডা. আল মামুন, ডা. শামসুল আরেফিন, ডা. আবু জাফর ও ডা. কবির প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজা নিয়ে কারাগারে যেতে হয় খালেদা জিয়াকে। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও তার সাজা হয়।

করোনা মহামারি, স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও বয়স বিবেচনায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চে তাকে শর্তসাপেক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি দেয় সরকার। এরপর কয়েক দফা এ মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

২০২১ সালের মাঝামাঝি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই দফায় বেগম জিয়াকে হাসপাতালে যেতে হয়। ৭৬ বছর বয়সী এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

গত ১১ এপ্রিল বেগম জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। ২৭ এপ্রিল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে কেবিন থেকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

বিএনপির পক্ষ থেকে তার করোনামুক্তির খবর দেওয়া হয় ৯ মে। ৩ জুন চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে কেবিনে ফিরিয়ে আনা হয়। এর ১৬ দিন পর, সব মিলিয়ে তখন প্রায় পৌনে দুই মাস হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়ে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন তিনি। এর মধ্যে করোনার দুই ডোজ টিকাও নেন।

এরপর গত বছরের ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৫ অক্টোবর তার ছোট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়।

করা হয় বায়োপসি পরীক্ষা। সেবার প্রায় এক মাসের মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে গত ৭ নভেম্বর ছাড়পত্র নিয়ে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ ফিরেন খালেদা জিয়া।

সপ্তাহ যেতে না যেতেই সবশেষ গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বেগম জিয়া। সেখানে তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান মেডিকেল বোর্ড।

এর পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে পাঠাতে সরকারের কাছে বারবার আর্জি জানানো হলেও অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তির শর্তের বিষয়টি উল্লেখ করে সরকার কোনোবারই সে আবেদনে সাড়া দেয়নি।

এইচএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *