চট্টগ্রামের লোহাগড়ার আলোচিত ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত চার আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এক সংশোধিত রায়ে এই চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছিল, যে রায়ের ব্যাপারে মামলার বাদীপক্ষ কিছুই জানতেন না।
পরে জানাজানি হলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মামলার বাদীপক্ষ আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করেন। গত রোববার ওই লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত এই স্থগিতাদেশ দেন।
আগামী ২২ আগস্ট পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ জারি করে ওই দিন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে বিষয়টির ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। যে চারজনের খালাসের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে তারা হলেন আবুল কাশেম, আলমগীর, আবদুল মালেক ও আইয়ূব আলী।
জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ মার্চ জানে আলমকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বড় ছেলে তজবিরুল আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই বিচারিক আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সৈয়দ আহমেদসহ ১২ জনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। ৮ জন নারী আসামিকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদন্ড।
এরপর মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। এ ছাড়া বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে ২০১৩ সালে বিচারপতি মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত ৮ নারীকে খালাস দেন।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন আনোয়ারা, ইয়াসমিন, রাজিয়া, শাহিনা আক্তার, নূরজাহান বেগম, শাহিদা বেগম, তাছলিমা আক্তার এবং রাজিয়া বেগম। এ ছাড়া মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি জহিরুল ইসলাম এবং নাজিম উদ্দিনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। বাকি ৫ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন।
এই ৫ আসামি হলেন শাসুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, নাসিরউদ্দিন, সাঈদ আহমেদ এবং কারিমুল্লাহ ওরফে কালিমুল্লাহ। তবে শুরু থেকেই পলাতক ৫ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামির ব্যাপারে হাইকোর্টের ওই রায়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অংশে কিছুই উল্লেখ করা ছিল না। এই ৫ আসামি হলেন আবুল কাশেম, আলমগীর, আবদুল মালেক, মো. ইউসুফ এবং আইয়ূব আলী। এদের মধ্যে মো. ইউসুফ গত ফেব্রুয়ারিতে মারা যান।
কিন্তু মামলার বাদীপক্ষ গত বছর হঠাৎ জানতে পারেন ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ একটি সংশোধিত রায়ে ওই পাঁচ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে খালাস দিয়েছেন।
নিহত জানে আলমের পরিবারের সদস্যরা জানান, কারও কোনো আবেদন নেই, অথচ হঠাৎ করেই ২০১৬ সালে ২০১৩ সালের রায়টি সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত রায়ে ৫ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা কিছুই জানি না। সংশোধিত রায়ে বিচারপতি যে স্বাক্ষর দিয়েছেন, ২০১৩ সালের রায়ে দেওয়া স্বাক্ষরের সঙ্গে মিলে না। এজন্য বিষয়টির তদন্ত চেয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছি।
এমআর