রবিবার ১১, জুন ২০২৩
EN

ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে

দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় চলমান বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে পণ্য বা সেবামূল্য অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে না। এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল সরকারের ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকায়।

দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় চলমান বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে পণ্য বা সেবামূল্য অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে না। এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল সরকারের ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকায়। কিন্তু এ নির্দেশনা অমান্য করে কিছু কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অ্যাকাউন্টে সরাসরি পণ্যের অগ্রিম মূল্য গ্রহণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ সিদ্ধান্তের আলোকে গতকাল কোম্পানিগুলোর ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সংক্রান্ত নতুন এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রদত্ত ট্রানজেকশন প্রোফাইলের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই, লেনদেনের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ এবং সামগ্রিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ তদারকি নিশ্চিতপূর্বক লেনদেন পরিচালনা করতে হবে। এমন নির্দেশনা গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে অবহিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন ইকমার্স কোম্পানি পণ্য বা সেবা প্রাপ্তির আগেই গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম মূল্য গ্রহণ করে আসছিল। পণ্য বা সেবার জন্য অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করেও পণ্য না পেয়ে বিপুল গ্রাহক ইতোমধ্যে প্রতারিত হয়েছেন। এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করে গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় সরকার ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা জারি করেছিল। এ নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো টাকা জমা নিতে পারবে না। এ বিষয় অবহিত করতে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি পরিপালনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, পণ্য বা সেবাপ্রাপ্তি ছাড়া কোম্পানির অ্যাকাউন্টে অগ্রীম মূল্য গ্রহণ করা যাবে না।

এর আগে গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল পণ্য বা সেবাপ্রাপ্তি ছাড়া অগ্রিম মূল্য গ্রহণ করা যাবে না। এ জন্য একটি বিশেষ সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছিল, যে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করবেন, তা পেমেন্ট গেটওয়েগুলো আটকে রাখবে। ক্রেতাকে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার পর তার ডকুমেন্ট পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর কাছে জমা দেবে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো। সেসব ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে গেটওয়েগুলো ই-কমার্স কোম্পানির অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকের নির্দেশনা ও সরকারের ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা অমান্য করে কিছু ইকমার্স প্রতিষ্ঠান ভিন্ন কৌশলে পণ্যের অগ্রিম মূল্য গ্রহণ করছে। যেমন- কোম্পানির অ্যাকাউন্টে অগ্রিম মূল্য গ্রহণ না করে কোম্পানির সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসেবে অগ্রিম মূল্য গ্রহণ করার অভিযোগ উঠেছে। এহেন লেনদেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারি নির্দেশনার সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নিয়মবহির্ভূত এ লেনদেন ঠেকাতে গ্রাহক স্বার্থে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ব্যাংক হিসাব তদারকি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের আলোকে সরকারি বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করা হচ্ছে না এমন বিষয় নিশ্চিত করে কোম্পানিগুলোর অ্যাকাউন্টে লেনদেন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গতকাল নতুন করে নির্দেশনা দিয়েছে।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোকে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রদত্ত ট্রানজেকশন প্রোফাইলের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই করতে হবে। লেনদেনের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করতে হবে। একই সাথে সামগ্রিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ তদারকি নিশ্চিতপূর্বক লেনদেন পরিচালনা করতে হবে। এ নির্দেশনা কার্যকর করতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ক্রেতারা ডিজিটাল ই-কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার মেনে মূল্য পরিশোধ করলে তাদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। তবে নির্দেশনা অমান্য করে কোম্পানির নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিলে তা পেমেন্ট গেটওয়ে ছাড়াই সরাসরি কোম্পানি ব্যবহার করতে পারে। নির্ধারিত সময়ে ই-কমার্স কোম্পানি পণ্য ডেলিভারি না করলে তা ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ব্যাপারে ক্রেতাদেরও সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্যসূত্র: নয়া দিগন্ত।

এবিএস

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *