রবিবার ১১, জুন ২০২৩
EN

পেঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া, লাগাম টানতে ভারত থেকে ২ লাখ টন

সংকট মোকাবিলায় সরকারকে আরও ২ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির ছাড়পত্র (আইপি) দিতে হয়েছে ভারতকে।

বিগত বছর কয়েক ধরে মৌসুমের শেষদিকে এসে দেশের পেঁয়াজ বাজারে তৈরি হচ্ছে সংকট এবং অস্থিরতা।

এমনকি কোনো কোনো বছর পেঁয়াজের দাম এতটাই বেড়েছে যে, সরকারকে বিমানে করে পেঁয়াজ এনে লাগামহীন বাজার কে স্থিতিশীল করতে।

এর ধারাবাহিকতায় এবছরও অক্টোবর মাস পড়তেই কয়েক দফা বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির পাশাপাশি পেয়াজের দাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ মৌসুমে দেশে ৩৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৮২ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে এক মাইলফলক (এক বছরের হিসাবে)।

গত বছরের চেয়ে যা প্রায় ৮ লাখ টন বেশি। গত বছর (২০১৯-২০ অর্থবছর) ২৫ লাখ ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল। তাহলে প্রশ্ন, এবছর এত পেঁয়াজ গেলো কোথায়?

পাশাপাশি এবছর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কম থাকায় বেসরকারি পর্যায়ে বেড়েছে আমদানিও। তারপরও সংকট!

যা মোকাবিলায় এখন সরকারকে আরও ২ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির ছাড়পত্র (আইপি) দিতে হয়েছে ভারতকে।

এ বিষয়ে কথা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, উৎপাদন অনেক বেড়েছে। তবুও কিছু ঘাটতি রয়েছে।

এখন মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগানোর সময়। এজন্য প্রায় ১ লাখ টন পেঁয়াজ প্রয়োজন হয়। বীজ হিসেবে কৃষক পেঁয়াজ কেনার কারণে বাজারে প্রভাব পড়েছে।

তবে তিনি আশ্বস্ত করেন, অন্য বছরের মতো পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা নেই।

ভারত থেকে ২ লাখ টন পেঁয়াজ শিগগির আসছে। তখন বাজারে দাম কমে যাবে। বেসরকারি পর্যায়েও পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে।

চলতি বছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ায় ‘৪ বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার রোডম্যাপ প্রণয়ন’-কে বাহাবা দিচ্ছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ে এ রোডম্যাপটি উপস্থাপন করা হয়।

তাতে দেশে ১০ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে পূরণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু রোডম্যাপের প্রথম বছর (২০২০-২১ অর্থবছর) ২ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর কথা ছিল।

কিন্তু বাস্তবে বেড়েছে ৮ লাখ টন। এরপরেও এবছর পেঁয়াজের বাজার চড়া।

রোডম্যাপে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ লাখ ২২ হাজার টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে।

কিন্তু যে হারে উৎপাদন বাড়ছে তাতে আগামী এক বছরেই চার বছরের রোডম্যাপের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

অন্যদিকে, গত বছর পর্যন্ত হিসাবে দেশে পেঁয়াজ চাষের আওতায় জমির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর। এসব জমিতে মোট পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৫ লাখ ৬৬ হাজার টন।

যার মধ্যে ২৫ শতাংশ নষ্ট (অবচয়) হয়। তাই প্রকৃত উৎপাদন ১৯ লাখ টন। এরপর বীজ ও অবচয় বাদে মোট চাহিদা ২৫ লাখ ৯৬ হাজার টন। ২৫ শতাংশ সংগ্রহোত্তর বিবেচনায় উৎপাদন দরকার ছিল ৩৪ লাখ ৬১ হাজার টন।

সে অনুযায়ী পেঁয়াজের ঘাটতি ৮ লাখ ৯৫ হাজার টন। এজন্য সরকার ১০ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে চায়।

আমদানির তথ্য বলছে, প্রতি বছর ১০ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৯২০ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪০ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ লাখ ৯১ হাজার টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ লাখ ৭ হাজার ২২০ টন।

এবছরও আমদানির পরিমাণ এর কম হবে না।

তাহলে উৎপাদন অনেকটা বাড়ার পরেও কেন পেঁয়াজ সংকট- এ প্রশ্নের জবাবে গবেষক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়, সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যে তথ্য দেয় সেটা মেলে না।

এ তথ্যের মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে বড় ধরনের ফারাক রয়েছে। যে তথ্য দেওয়া হয় সেসব সামঞ্জস্যহীন।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত যে দাবি করা হচ্ছে যে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে, সেটা ঠিক আছে।

কিন্তু কী পরিমাণ বেড়েছে সেটা কনফার্ম নয়। যেভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, তাতে মনে হয় না ঘাটতি খুব একটা কমেছে।

বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ অনেক কম। দেশে উৎপাদন এত বাড়লে পরিস্থিতি এমন হতো না।

এইচএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *