বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আইন বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের যথোপযুক্ত কারণ ও নোটিস ছাড়া বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না । বার কাউন্সিলের এমন সিদ্ধান্তে ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় পড়েছেন
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আইন বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের যথোপযুক্ত কারণ ও নোটিস ছাড়া বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না । বার কাউন্সিলের এমন সিদ্ধান্তে ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। বার কাউন্সিল সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন বিভাগে উত্তীর্ণ শিার্থীদের তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির জবাবে ইউজিসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বার কাউন্সিলে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়,বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি/এলএলএম প্রোগ্রামে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির নিবন্ধনের ব্যাপারে ইউজিসি থেকে তালিকা পাঠানো সম্ভব নয়। এছাড়া উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের তালিকা কমিশনে যাচাই করাও সম্ভব নয়। কারণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন,পরীক্ষা,ট্রান্সক্রিপ্ট,সার্টিফিকেট ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রমের আওতায় আছে। একই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইউজিসি থেকে সব বেসরকারি (৭৮টি) বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. সামছুল আলম স্বাক্ষরিত এই চিঠিতেও ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি,রেজিস্ট্রেশন,পরীক্ষা, ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রমের আওতায় আছে উল্লেখ করে উত্তীর্ণ শিার্থীদের তালিকা কমিশন কর্তৃক যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানানো হয়। এ চিঠিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী এম ওমর ফারুক জানান, ইউজিসির অনুমতি নিয়েই প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। আমরা তা দেখেই ভর্তি হয়েছিলাম। ইউজিসি অথবা বার কাউন্সিল কারও সমন্বয়হীনতা বা একগুঁয়েমির কারণে আমরা ভুক্তভোগী হতে পারি না। প্রতিষ্ঠান দুটি পরস্পরের প্রতি প্রতিযোগিতায় নেমেছে বলে অভিযোগ করেন এ শিক্ষার্থী। ব্র্যাকের স্কুল অব ল'র সহযোগী অধ্যাপক ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, বার কাউন্সিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এনরোলমেন্টের নিবন্ধন করতে দিচ্ছে না। কিন্তু আইন বিষয়ে অধ্যয়নের দুর্বলতা থাকলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ইউজিসির সমস্যা। এর দায় শিক্ষার্থীরা নিতে পারে না। বার কাউন্সিল এখন কেন এ বিষয়ে বলছে। তারা আগে থেকেই একটা মান নির্ধারণ করে দিতে পারত। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, লন্ডনে পড়াশোনার মান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। সেখানে নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার কাউন্সিলে এনরোলমেন্ট করতে এলে ক্যাটাগরির ভিত্তিতে কাউকে সরাসরি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, আবার কাউকে ৩ মাস কিংবা ৬ মাসের কোর্স সম্পন্ন করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। একই রকম নিয়ম রয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায়ও। বার কাউন্সিলও সে রকম নিয়ম চালু করতে পারে। বার কাউন্সিলের একটা নির্দিষ্ট পলিসি থাকতে হবে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে দেওয়া হচ্ছে না বিষয়টা আমিও শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কোনও দাপ্তরিক আদেশ নেই। খোকন বলেন, পূর্বে বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটিতে তিনজন নির্বাচিত সদস্য থাকতেন। এই কমিটির চেয়ারম্যানও নির্বাচিত প্রতিনিধিই ছিলেন। সরকারের আইন পরিবর্তন করার কারণে বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটিতে এখন একজন মাত্র নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই নির্বাচিত সদস্যের মতামত খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না। ফলে এই সমস্যার উদ্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. সামছুল আলম জানান, আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। তবে বার কাউন্সিল এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে সিদ্বান্ত নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সচিব মো. আলতাফ হোসেন বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানান, আপাতত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের উত্তীর্ণদের নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তবে অচিরেই বার কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। [b]ঢাকা: কেএ, ১৫মে (টাইম নিউজবিডি)// কেবি[/b]