ইসি আনিছুরের স্মৃতিভ্রম হয়েছে : সিইসি
Share on:
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান মাদারীপুরে বলেছেন, ‘ইভিএমে ত্রুটি ধরতে পারলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন সিইসি’। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল মনে করছেন, কিছুটা স্মৃতিভ্রম হয়ে নির্বাচন কমিশনার ১০ মিলিয়ন ডলারের কথা বলতে পারেন।
মঙ্গলবার (২৪ মে) সকালে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন তিনি। এসময় চার নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে দল ও নানা মহলে চলমান সমালোচনার মধ্যে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন সিইসি।
শনিবার (২১ মে) মাদারীপুরে এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিটি দলে আইটি বিশেষজ্ঞ আছেন। তাদেরও আমরা আমাদের মেশিন দেখাব। ইভিএম তাদের হাতে ছেড়ে দেব, দেখান কোথায় ভুল আছে? আর কোন মেশিন কোথায় যাচ্ছে, কেউ জানে না। ইভিএমের কোনো ভুলত্রুটি যদি কেউ ধরতে পারেন, তার জন্য আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুরের এমন বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সিইসি বলেন, এ ধরনের বক্তব্য শোনার পর ইন্টারনাল তদন্ত শুরু করলাম। কেউ তার ভালোবাসা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারেন। ইভিএম যারা তৈরি করছেন তাদের মধ্যে কেউ বলেছেন। ওইভাবে কেউ একজন বলেছেন, জিনিসটা ওখান থেকেই এসেছে। কিছুটা স্মৃতিভ্রম হয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান ১০ মিলিয়ন ডলারের কথা বলতে পারেন বলে জানান কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, এটা কমিশনের বক্তব্য নয়। কোনোভাবে কমিশনের কোনো কর্মচারীও এ কথা বলেননি, কমিশনার তো দূরের কথা, বলতে পারেন না। মিডিয়ায় কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি। কমিশনকে অপদস্ত করার জন্য, সিইসিকে অপদস্ত করার জন্য এটা কেউ বলেননি। কথাটা আসলে কিছুটা স্মৃতিভ্রমভাবে হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, নির্বাচন কমিশনারদের কথা বলার ক্ষেত্রে সবার সতর্ক অবস্থান নেওয়া উচিত, দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।
ইভিএমে পুরোপুরি আস্থাভাজন হতে পারিনি— মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, তারা প্রহসনের নির্বাচন করতে চান না। নির্বাচন নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হলেও এখনো আস্থাভাজন হতে পারেননি।
তিনি বলেন, আমরা পাঁচটা মিটিং করেছি, পুরোপুরি আস্থাভাজন হতে পারিনি। আরও মিটিং হবে। সেখানে পর্যালোচনা করব। আমরা বলেছি, ইভিএম নিয়ে সবার আস্থা অর্জন করতে চাই। কালও কারিগরি মিটিং হবে। ইভিএমের ত্রুটি শনাক্ত করতে পারলে কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণার মতো কোনো ‘উদ্ভট’ কথাও বলেননি বলে দাবি করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সিইসি বলেন, নির্বাচনকে প্রহসনে রূপান্তর করার কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই। এটা আমরা অন্তর থেকে বলছি। সুন্দর নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সুস্থ ধারা অব্যাহত থাকুক।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এর মাধ্যমে ইসির অবস্থান অবনমিত হয়েছে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এতে। ইসির প্রতি মানুষ আস্থা আনতে চায়, শুরুতে যদি বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে কমিশন আগামী যে জনপ্রত্যাশিত নির্বাচন, তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এখনো চেষ্টা করছি। চার কমিশনার ও আমি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সিইসি বলেন, ১০ মিলিয়ন ডলার কথাটা উচ্চারিত হয়েছে কোনো প্রসঙ্গে, কোনো একটা জায়গায়। আমার মুখ থেকে নয়, কমিশনের কারো মুখ থেকে নয়। এটা ডিগিং করা উচিত নয়। যারা ইভিএম নিয়ে কাজ করছেন, তাদের কেউ পণ্যটার প্রশংসা করতে গিয়ে আবেগবশত হয়ত এ কথাটা বলেছেন। একটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বলতেই পারে, এ ধরনের একটা বক্তব্য কোনো একটা জায়গায় উত্থাপিত হয়েছিল। হয়ত আমার মাথায় নেই। এটা কোট করতে গিয়ে মিস কোটিং হয়েছে। আরও কয়েকটি বৈঠক করে আলাপ আলোচনা করে ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে চ্যালেঞ্জ নেব কি না, এখনো সেই সময়টাই তো আসেনি। বারবার বলেছি দায়িত্বশীল পদে আছি। এ নিয়ে আরও দশটা (মিটিং) হবে, এখন যদি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিই ইভিএমে কোনো ত্রুটি নেই, এটা হতে পারে না।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুরের বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, দিনের ভোট দিনেই হবে। ভোট তার নিয়মানুযায়ী হবে, দিনের ভোট দিনেই হবে। ভোট রাতে হবে না— এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমাদের উনি (ইসি আনিছুর) স্পষ্ট করে বলতে চেয়েছেন, দিনের ভোট দিনেই হবে। ইভিএম নিয়ে বক্তব্য আসার পর বিএনপি নেতাদের সমালোচনাকেও ইতিবাচকভাবে দেখেন বলে জানান সিইসি।
এমআই