ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারায় সংশোধনী আনা হচ্ছে
Share on:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন’ করে নতুন যে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ করা হচ্ছে সেখানে অনেকগুলো ধারাতে সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সোমবার (৭ আগস্ট) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
এর আগে সকালে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে নতুন একটি আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পরে সচিবালয়ে নিজ কক্ষে খসড়া আইনের অনুমোদন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়নি, পরিবর্তন করা হয়েছে। যদি এখন বলি, বাতিল করা হয়েছে, তাহলে আপনারা প্রশ্ন করবেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রায় সব ধারাই-তো এ আইনে রয়েছে। তাহলে আপনি কেন বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। যে কারণে আমি পরিবর্তন শব্দটি ব্যবহার করেছি।
তিনি বলেন, ডিজিটাল প্রগ্রেস (অগ্রগতি) সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে আইনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’। এ আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তার জন্য যেসব ধারাগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছিল, সেগুলো এখানে অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। সেইগুলোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, যেটা করা হয়েছে—ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেকগুলো ধারা, যেমন মানহানির যে ধারাটা ছিল, সেই ধারায় আগে শাস্তি ছিল কারাদণ্ড। সেই কারাদণ্ডের জায়গায় এখন জরিমানার বিধান করা হয়েছে। অর্থাৎ মানহানির একমাত্র সাজা জরিমানা।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘২৯ ধারায় সাজা ছিল কারাদণ্ড। সেটাকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হচ্ছে। এখানে শুধু শাস্তি হবে জরিমানা। অনাদায়ে হয় ৩ মাস না হয় ৬ মাসের কারাদণ্ড থাকবে।’
জরিমানার পরিমাণ কত জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ২৫ লাখ টাকা।
এটা কি সাধারণ মানুষের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব? তাহলে তো এ আইন আগের মতোই থেকে গেল? এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আগে কারাদণ্ড ছিল এ ধারায়। কারাদণ্ড উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু সাজা রাখা হয়েছে। দেওয়ানি আইনে যদি মানুষ ক্ষতিপূরণ চায় তাহলে আমাদের যে আইন রয়েছে তাতে ক্ষতিপূরণের লিমিট নেই। আমি প্রশ্নের জবাবটা দিয়ে দিচ্ছি। ১০০ কোটি টাকাও ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। সেসব ক্যালকুলেশন করে অনধিক ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে ১ টাকাও জরিমানা হতে পারে, ২৫ লাখও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এখন কোনো কারাদণ্ড নেই (খসড়া আইনে)। আপনাদের (সাংবাদিকদের) অ্যারেস্ট করবে কেন? অ্যারেস্ট তো করার আর কোনো সম্ভাবনাই থাকল না।’
তার মানে অ্যারেস্ট হচ্ছে না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, অ্যারেস্ট হবে না।’
তাহলে মানহানির মামলার ক্ষেত্রে সরাসরি অ্যারেস্ট করা যাবে না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই, এটা তো আর কারাদণ্ডই না।’
মন্ত্রী বলেন, এখানে অনেকগুলো ধারা যেগুলো আগে অজামিনযোগ্য ছিল, সেগুলোকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। তৃতীয়ত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২১-এ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত—এসব নিয়ে যদি কেউ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে, তাহলে সেটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। সেটির সাজা ছিল ১০ বছর কারাদণ্ড, সেটিকে কমিয়ে এখন সাত বছর করা হয়েছে। অনেকগুলো ধারার মধ্যে ছিল, দ্বিতীয়বার যদি কেউ অপরাধ করে, তাহলে সেই সাজা দ্বিগুণ হয়ে যেত কিংবা সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হতো। প্রত্যেকটা আইনে যেখানে দ্বিতীয়বার সাজার কথা আছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।
নতুন আইনে দ্বিতীয়বার অপরাধ করলে প্রথমবার অপরাধের যে সাজা থাকবে, দ্বিতীয়বারের জন্যও একই সাজা থাকবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যেগুলো টেকটিক্যাল অপরাধ, যেগুলো সাইবার সিকিউরিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার, সবসময়ই জনগণের কথা শোনার সরকার, যেটাকে ইংরেজিতে আমরা বলি, উই আরও অ্যা লিসিনিং গভর্নমেন্ট। এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু অপব্যবহার কিংবা মিসইউজ রোধ করতে আমরা নাম পরিবর্তন করেছি। যেমন, আগে মানহানিতে কারাদণ্ড ছিল, সেখানে এখন কারাদণ্ড নেই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনে ও নামে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনেক জায়গায় সাজার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল, সেটি কমানো হয়েছে। যেখানে উপধারা দিয়ে কিংবা দ্বিতীয়বার/পুনঃপুনবার করলে সাজা দ্বিগুণ হয়ে যেত, সেই সব ধারা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। যে কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা না, সাইবার নিরাপত্তা আইন নামেই এটি পরিবর্তন হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের রহিতকরণ ও হেফাজতকরণের প্রভিসন রেখে আমরা সাইবার নিরাপত্তা আইন করেছি।
পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তার যে ধারাটি ছিল, সেটি কি পরিবর্তন হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিজিটাল অপরাধের ক্ষেত্রে অনেক সময় যে যন্ত্র দিয়ে সেটি করা হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো জব্দ করা হয় না, তাহলে সাক্ষ্যপ্রমাণ হারিয়ে যাওয়ার একটি শঙ্কা থাকে। সে কারণে আমার মনে হয়, ৪৩ নম্বর ধারাটি থাকার প্রয়োজন। এ আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ নম্বর ধারায় যে প্রভিসন ছিল, সেটি আছে।
কয়টি ধারা পরিবর্তন হয়েছে, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অনেকগুলো ধারা পরিবর্তন হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগের মামলাগুলো চলবে। তবে মামলার যে কার্যক্রম সেটি সাইবার নিরাপত্তা আইনে চলবে। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আইনটি উঠবে, সেখানে এ আইনি পাস করা হবে।
এমআই