রোজার প্রথম সপ্তাহে চিনির দাম ৫ টাকা কমবে : বাণিজ্যমন্ত্রী
Share on:
চিনিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ার কারণে কেজিতে ৫ টাকার মতো ছাড় পাওয়া যাবে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমরা ব্যবসায়ীদের চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমানোর অনুরোধ করেছি। তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আশা করি, রোজার প্রথম সপ্তাহেই চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমবে।
রোববার (১৯ মার্চ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স এর ৬ষ্ঠ সভা’ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চিনির যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেই সুবিধা এখনো পাওয়া যায়নি। শুল্ক ছাড়ের চিনি কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে। আমরা আশা করি, রোজার প্রথম সপ্তাহেই চিনির যে দাম তা থেকে কেজিতে ৫ টাকা কমবে।
রমজানে ব্যবসায়ীদের পণ্যের দাম না বাড়াতে বলেছেন জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ব্যবসায়ীদের বলেছি আমরা আবার রমজানের পরে আপনাদের নিয়ে বসব। এসময়টায় আর কোনো অবস্থাতেই পণ্যের দাম বাড়াবেন না। তারা সম্মত হয়েছেন।
মন্ত্রণালয় দাম নির্ধারণ করে দিলেও মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কোনো মিল পাওয়া যায় না— এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, একটু আগেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের যা প্রয়োজন তার চেয়ে মিনিমাম দেড় গুণ তাদের কাছে মজুত রয়েছে। তাদের হাতে আছে ও পাইপ লাইনে আছে। ফলে কোনোভাবেই সমস্যা হবে না। তেল ও চিনি— দুটোই তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে আছে। ফলে কোনো সমস্যা হবে না। ছোলা যে দামে আনা হচ্ছে তার থেকে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা বাজারে গেলে গরমিল পাচ্ছেন, সেটাও ঠিক। তবে এটাও ঠিক যে কারওয়ান বাজারে যে দাম উত্তরার বাজারে তার থেকে ২০ টাকা বেড়ে যেতে পারে। যদি বলেন কারওয়ান বাজারে ৫০ টাকা, উত্তরায় ৮০ টাকা। তাহলে ৮০ টাকা ধরেই দাম বাড়ানো শুরু করবে। তাই লেখার আগে একটু পজিটিভ লিখলে বাজারে পজিটিভ প্রভাব পড়বে।
রমজান সামনে রেখে আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের কাছে যে চিনি-তেল আছে তাতে বর্তমান বাজারে যে দাম চলছে বা যেটা ঠিক করে দেওয়া আছে তার চেয়ে বাড়ার কোনো কারণ নেই। যা খরচ, তার চেয়েও কম দামে পাওয়া যাবে ছোলা। কয়েক বছর পরে রমজান উন্মুক্তভাবে হচ্ছে, এবার ইফতার পার্টিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। যে কারণে দাম একটু বাড়তে পারে, সমস্যা হওয়ার কথা না— যোগ করেন মন্ত্রী।
টিপু মুনশি বলেন, পেঁয়াজ যথেষ্ট পরিমাণ আছে। ভারত থেকে আমদানিও স্লো (ধীর গতি) করে দিয়েছি। যাতে করে আমাদের কৃষকরা (দাম) পায়। ভোক্তারাও যাতে ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারে। তবে আমরা নিবিড়ভাবে বাজার মূল্যায়ন করব। যদি দেখি দাম বাড়তে শুরু করেছে তাহলে আমদানিতে যে বিধিনিষেধ দেওয়া আছে সেটা উঠিয়ে দেব। কোনো অবস্থাতেই সমস্যা হওয়ার কথা না।
তিনি বলেন, দেশে প্রচুর পরিমাণ সয়াবিন তেল আছে। পাইপলাইনে আছে। আমরা বহু হিসাবনিকাশ করে দেখেছি, যে মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সেটিই তারা রাখতে পারবে। বাড়ানোর কোনো কারণ নেই। কমানোর মতো সুযোগও আমরা পাচ্ছি না। এক টাকা বা পঞ্চাশ পয়সা কোথাও বাড়ছে, কোথাও কমছে।
মন্ত্রী বলেন, সার্বিকভাবে প্যানিক হওয়ার কোনো কারণ নেই। সাংবাদিকদের কাছে যে সাহায্যটি চাই, আপনারা একটি বার্তা দেন, যাতে লোকজন প্যানিক হয়ে কিনতে না যান। স্বাভাবিকভাবে যাতে কিনতে যান। ধরেন, রোজার চার দিনের মাথায় দেখা গেল, নতুন দামে চিনি ঠিক করা হয়েছে, সেটা বাজারে আসছে। এখন কিনতে গেলে তো চার টাকা পাঁচ টাকা বেশি দিয়ে তাদের কিনতে হবে। অথচ একটু স্লো করে কিনলেই হয়।
টিপু মুনশি বলেন, একটি প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করেছি, রোজা শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে ধরে নেয় যে সবকিছু নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢোকাতে হবে। তাহলে সাপ্লাই চেইন কোথা থেকে আসবে? সাপ্লাইয়ের তো একটি সিস্টেম আছে। সারা মাসেরটি যদি একবারে কিনতে যান, গাছে তো আর এক মাসের বেগুন একদিনে হবে না। এগুলো আপনাদের ইতিবাচকভাবে বলতে হবে। আপনাদের নেতিবাচক নিউজে বাজারে খারাপ প্রভাব পড়ে যাবে।
তিনি বলেন, দেশে কৃষিপণ্যেরও যথেষ্ট মজুত আছে। আমরা খুব সতর্ক অবস্থানে যাচ্ছি। বিশেষ করে মুরগির দাম যেটি বেড়েছে, এটিকে ক্রয়সীমার মধ্যে নিয়ে আসার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মুরগির দাম নিয়ে পদক্ষেপ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুরগির বিষয়টি আমাদের মন্ত্রণালয়ের না। তারপরও যেহেতু ঘুরেফিরে আমাদের ওপর এসে পড়ে, আমরা মনে করি যে কোনো দায় আমরা এড়াতে পারি না। আজ আমাদের সিনিয়র সেক্রেটারি মৎস্য ও প্রাণসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন। যাতে তারা এটি দেখে একটি ব্যবস্থা নেয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেছে, দেশের বাজারে কমানো হবে কি না— জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেছে এটা সত্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের তেলের দাম কমলেও ডলারের দাম বেড়ে গেছে। যদি এমনটা হতো তেলের দাম কমেছে ডলারের দাম আগের অবস্থায় রয়েছে তাহলে তেলের দাম কমানো যেত। তারপরও প্রতিনিয়ত আমরা দেখছি।
এমআই