আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জামায়াতের আলোচনা সভা
Share on:
স্বাধীনতার এই ৫০ বছর পর জাতি অধিকার হারা জাতিতে পরিণত হয়েছে। এখন মানুষের কোন অধিকারই নেই। থাকা, খাওয়া, বেচে থাকা, ইজ্জত রক্ষা, ভোট দেয়া, কথা বলা, ধর্মীয় স্বাধীনতা সবই এখন কেড়ে নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে ইতিহাস বিকৃতির কথা ঘনঘন উচ্চারিত হয়ে। কিন্তু যারা ইতিহাসের উপর বারবার ছুরি চালিয়েছেন, তারাই আজ ইতিহাস বিকৃতির কথা বলে। ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর ভূমিকাকে বাদ দিলে, ডাকসুর ভূমিকাকে মাইনাস করে, অধ্যাপক গোলাম আযমের নাম মুছে ফেললে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসই থাকে না।
তিনি উল্লেখ করেন, ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা পাশবিক চিন্তা ছাড়া আর কিছুই না। কিছু মানুষ ইতিহাস থেকে কাউকে মুছে দিতে চাইলে, তা হতে পারে না। ভাষা আন্দোলনে যারা ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার এই ৫০ বছর পর জাতি অধিকার হারা জাতিতে পরিণত হয়েছে। এখন মানুষের কোন অধিকারই নেই। থাকা, খাওয়া, বেচে থাকা, ইজ্জত রক্ষা, ভোট দেয়া, কথা বলা, ধর্মীয় স্বাধীনতা সবই এখন কেড়ে নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মু’মিনরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। ভয় পাওয়া জায়েজও নেই। মনজিলে মকসুদে পৌছতে কারো সাথে আপোষ করার সুযোগ নেই।
আমাদের নেতৃবৃন্দ ফাঁসির রশিকে গ্রহন করে সবাইকে দাত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন। যা গোটা মুসলিম উম্মাহর শির উচু করে দিয়েছে। আমরা তাদেরই উত্তরসুরি। ঈমান রক্ষার তাগিদে অপকর্ম রুখে দাড়াতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
আজ রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।
বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভুইয়া, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, শামছুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।
ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হয়েছে। পাকিস্তানের স্বাধীনতার ৭৩ বছর হয়েছে। যারা পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের শ্লোগান ছিল-পাকিস্তানের সংবিধান হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। কুরআন-ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তারা জনগনের সমর্থন নিয়েছিল।
কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা তাদের ওয়াদা থেকে সরে গেলো। তিনি বলেন, পাকিস্তানের ৪টি প্রদেশের মধ্যে ৩টিই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। আর ১টি প্রদেশ নিয়ে ছিল পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু ওই ৩টি প্রদেশের চেয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল বেশী।
বিবেকের দাবী ছিল, পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হলে বাংলাই হবে প্রধান ভাষা। তা না হলে অন্যতম রাষ্ট্রভাষাও করা যেতো। কিন্তু পাকিস্তানে সে সময় যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানে যারা ছিলেন, তারা ইনসাফের ভিত্তিতে বিষয়টি দেখলে, তাহলে এমনটি হতো না।
অধিকার কেড়ে নেয়ার কারনে এদেশের মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সাথে যারা জড়িত ছিলেন, তিনি তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করেন।
জামায়াত আমীর বলেন, দেশে ইতিহাস বিকৃতির কথা ঘনঘন উচ্চারিত হয়ে। কিন্তু যারা ইতিহাসের উপর বারবার ছুরি চালিয়েছেন, তারাই আজ ইতিহাস বিকৃতির কথা বলে।
ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর ভূমিকাকে বাদ দিলে, ডাকসুর ভূমিকাকে মাইনাস করলে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসই থাকে না। বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী ঐতিহাসিক স্মারকলিপিটি ড্রাফট করেছিলেন, সেই ড্রাফটি সাহসের সাথে যিনি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামনে পাঠ করেছিলেন, ডাকসুর জিএস অধ্যাপক গোলাম আযমের নামটি পর্যন্ত তারা মুখে নিতে চান না। ডাকসু ভবনে জিএসদের বোর্ডে এই নামের স্থানটি খালি রাখা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ এই স্থানটিও পূরণ হবে একদিন।
তিনি উল্লেখ করেন, ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা পাশবিক চিন্তা ছাড়া আর কিছুই না। তিনি বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমকে অশ্রদ্ধা করা, কোন ব্যক্তিকে অশ্রদ্ধা করা নয়, গোটা ডাকসুকে অশ্রদ্ধা, অপমান করার শামিল।
প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম, আবদুল গফুর, আবদুল মতিনসহ যারাই ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেছেন, পরবর্তীতে যে যেই দলই করুক না কেন, আমরা সকলকেই স্মারণ করি, শ্রদ্ধা জানাই। যারা আমাদের ভাষার এই অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন, বেইনসাফ পাকিস্তান সরকারের হাত থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে গেলেন, আমরা সব সময় তাদের স্মরন করি, এটা আমাদের দায়িত্ব। আল্লাহ যেন তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার এই ৫০ বছর পর জাতি অধিকার হারা জাতিতে পরিণত হয়েছে। এখন মানুষের কোন অধিকারই নেই। থাকা, খাওয়া, বাচার, ইজ্জতের, ভোট দেয়া, কথা বলা, ধর্মীয় স্বাধীন সবই এখন কেড়ে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এদেশের আলেম উলামা, মাদরাসা, মসজিদ, মক্তব, মারকাজগুলো যেন সরকারের প্রতিপক্ষ, সরকারের আচরণ থেকে এমনটিই মনে হয়। সরকারের কেউ কেউ নিজেদের তাহাজ্জুদগুজার বলে দাবী করেন।
তাহাজ্জুদের সাথে এগুলো মানায় না। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বই মেলা হয়। চট্টগ্রামের বই মেলায় ইসলামী প্রকাশনাগুলোকে অনুমতি দেয়া হয়নি। এমনকি স্টলগুলোতে ইসলামী বই যেন না রাখা হয়, সেই উদ্যোগ তারা নিয়েছে।
জামায়াতের আমীর বলেন, মাদকের লাইসেন্স অবাধ করার পায়তারা করা হচ্ছে। ২১ বছরের বেশী বয়স হলেই অবাধে পানাহার করতে পারবে, এমন ব্যবস্থা করা হচেছ। তিনি বলেন, সরকারের ব্যর্থতায় মাদকের ছয়লাব হয়ে গেছে। এখন এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। যারা এধরনের নিদের্শনা জারি করেন, হয় তারা নিজেরা মাদকাসক্ত।
তাই নিজেদের পানাহার অবাধ করার জন্য এই্ ব্যবস্থা করছে। না হলে তাদের সন্তান এদেশে থাকে না। তাই দেশের মানুষের সন্তানদের জন্য তাদের কোন মায়া নেই। তিনি উল্লেখ, আল্লাহ তায়ালা যা হারাম করেছেন, ৯৫% মুসলমানের এই দেশে তা হালাল করতে পারে না। ঈমান রক্ষার তাগিদে এই অপকর্ম রুখে দাড়াতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পৃথিবীর সব ভাষায়ই আল্লাহ তায়ালা নবী পাঠিয়েছেন। সব ভাষাই গুরুত্বপূর্ন। তবে কুরআনের ভাষার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।
কুরআনের ভাষা হাশরের ভাষা, জান্নাতের ভাষা। তাই কোন ভাষাকে অমর্যাদা করার অধিকার কারো নেই। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন শাসকরা বাংলা ভাষার অমর্যাদা করেছিলেন, ভাষার অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তার প্রতিবাদেই গড়ে উঠেছিল আন্দোলন।
তিনি বলেন, মু’মিনরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। ভয় পাওয়া জায়েজও নেই। মনজিলে মকসুদে পৌছতে কারো সাথে আপোষ করারও সুযোগ নেই। আমাদের নেতৃবৃন্দ ফাসির রশিকে গ্রহন করে সবাইকে দাত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন। যা গোটা মুসলিম উম্মার শির উচু করে দিয়েছে। আমরা তাদেরই উত্তরসুরি।
যে আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ফাসির রশিকে চুম্বন করতে ভয় পায় না, তাদের উত্তরসুরীরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন, অধিকারহারা জাতিকে উদ্ধার করতে আল্লাহ যেন আমাদের তৌফিক দান করেন, এজন্য আমাদের রক্ত পছন্দ হলে, আল্লাহ যেন তা গ্রহন করেন।
এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযম ভাষা আন্দোলনের কারনে বারবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। ডাকসুর জিএস হিসেবে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়ার পর ২ বার গ্রেফতার হয়েছিলেন। রংপুরের কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা করার সময় আবারো গ্রেফতার হয়েছিলেন।
তিনি উল্লেখ করেন, কিছু লোক কারো নাম উচ্চারণ না করলে তাদের অবদান ছোট হয়ে যায় না। তিনি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ২১ শে ফেব্রুয়ারি, গুলি চালিয়ে ৪জনকে হত্যা করে আন্দোলন থামিয়ে দেয়া যায়নি। গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করলে তার কী পরিণতি হয়, বর্তমান সরকার তা টের পাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, পৃথিবীর একমাত্র ভাষা বাংলা ভাষা, যে ভাষার জন্য মানুষ রক্ত দিয়েছে। ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠান, রাস্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য আন্দোলনের সূচনা করেছিল তমদ্দুন মজলিস।
ভাষা আন্দোলনে ইসলামী ভাবধারায় বিশ্বাসীরাই ছিলেন অগ্রসেনানী। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহও মহান ভাষা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন ভাষা আন্দোলেনর অন্যতম পুরোধা।
তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ডাকসুর জিএস হিসাবে লিয়াকত আলীর খানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছিলেন। মূলত: ইসলমপন্থীরাই ছিলেন ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে। কিন্তু আজ সরকার ইতিহাস বিকৃত করে রাম আর বামদের এই আন্দোলনের স্বীকৃতি দিচ্ছে। তিনি বলেন, মহান একুশের চেতনায় স্বাধীনতা আন্দোলনের উন্মেষ ঘটে।
১৯৭১ সালে মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও ভাষা আন্দোলনের বিকৃত ইতিহাস চর্চা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ফেব্রুয়ারি আসলেই বাংলা ভাষার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক কথায় বলা হয়।
কিন্তু ভাষার উৎকর্ষ ও বিকাশ সাধনে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করলেও রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে এখনও বাংলা ভাষার প্রচলন করা সম্ভব হয়নি। আমরা বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতিতে ক্রমেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছি।
বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে তা রীতিমত ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যা আমাদের ভাষা, সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিহীন। তিনি একুশের চেতনায় উদ্বৃদ্ধ হয়ে অধিকার হারা জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, যে জাতি গুনিজনকে যথাযথ সম্মান জানাতে পারে না, সেখানে গুনিজন জন্মায় ন। ভাষা আন্দোলনের সেনানী অধ্যাপক গোলাম আযমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিহাস থেকে তার অবদান মুছে ফেলা যাবে না।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ৫২ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদেশের স্বাধীকার, স্বাধীনতার আন্দোলনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হয়েছিল। ভাষা শহীদদের নাম শুনলেই মনে হয়, এ আন্দোলনে কোন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, তারা অন্যায়ের কাছে মাথানত করেনি বলেই অন্যায় তাদের কাছে নত হয়েছিল। ২১ আমাদের সেই শিক্ষায়ই দেয়। ( প্রেস বিজ্ঞপ্তি)
এইচএন