tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৩০ পিএম

রেকর্ড ভেঙে ভারতে এত গরমে কেন ভোট, নেপথ্যে যে রাজনীতিক


image-795539-1713342517

ভারতে আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত মোট সাতটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ১৮তম সংসদীয় নির্বাচন। দেশটিতে সবচেয়ে তীব্র গরম মাসগুলোতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ নির্বাচন উৎসব।


অথচ এর আগে মাঝে দু’একটা ছাড়া গত শতাব্দী পর্যন্ত ভারতে সাধারণ নির্বাচন কিন্তু শরৎ বা শীতের মনোরম আবহাওয়াতেই হয়ে এসেছে।

কিন্তু দুদশকের ওপর হলো চরম গ্রীষ্মেই ভারতে লোকসভার ভোট হচ্ছে। যার ফলে ২০০৪ থেকে শুরু করে এ নিয়ে টানা পঞ্চমবার এই অসহ্য গরমে ভারতীয়দের ভোটের লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে।

আর এই যে এত গরমে ভোট হচ্ছে–তার জন্যও বোধহয় দায়ী করা চলে দেশের একজন সুপরিচিত রাজনীতিবিদকে।

না, তিনি বিজেপি বা কংগ্রেস জাতীয় স্তরের কোনো দলেরই নন, বরং দেশের একটি আঞ্চলিক দলের নেতা!

তার কথায় পরে আসছি– তার আগে জেনে নেওয়া যাক ভারতে এবারের নির্বাচন নিয়ে কিছু সাধারণ তথ্য।

সারা দেশে এই নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯৬ কোটি, তারাই বেছে নেবেন ৫৪৩টি লোকসভা আসন থেকে কারা পার্লামেন্টে যাবেন।

বিজয়ী দল বা জোটের এমপিরাই স্থির করবেন নতুন সরকারের নেতৃত্ব কে দেবেন।

ভোটার বা প্রার্থীদের সংখ্যায়, খরচের বহরে এবং আরও নানা মাপকাঠিতে এটিই যে বিশ্বের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড়’ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই।

পাঁচ বছর আগে ২০১৯-এ ভারতে যে সংসদীয় নির্বাচন হয়েছিল, সেটাই ছিল এযাবৎকালের ‘বৃহত্তম’ নির্বাচন– এবারে সেই রেকর্ডও যথারীতি ভাঙতে চলেছে।

এবারে ভারতের লোকসভা নির্বাচনও হতে চলেছে প্রায় দেড় মাস (৪৪ দিন) ধরে– ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম নির্বাচনটি বাদ দিলে এত লম্বা সময় ধরে ভারতে কখনো নির্বাচন হয়নি। ফলে প্রায় তিয়াত্তর বছরের মধ্যে এটি ভারতের দীর্ঘতম নির্বাচনও হতে যাচ্ছে।

আগামী ১ জুন ম্যারাথন ভোটগ্রহণ পর্বের শেষে দুদিন বিরতি দিয়ে ৪ জুন মঙ্গলবার সকালে সারাদেশের ভোট একসঙ্গে গোনা শুরু হবে।

যেহেতু পুরো দেশেই ইলেকট্রনিক ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে, ভোটের ফল সে দিন বিকেলের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে বলেও ধারণা করা যাচ্ছে।

  • কিন্তু এত গরমে ভোট কেন!

গ্রীষ্মপ্রধান ও ‘ট্রপিক্যাল’ দেশ ভারতে এপ্রিল-মে-জুনেই তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ, দেশের একটা বিস্তীর্ণ অংশে এ সময় দিনের পর দিন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ঘোরাফেরা করে।

রাজস্থানের মরু অঞ্চল, উড়িষ্যার কালাহান্ডি বা বোলাঙ্গিরের মতো কোনো কোনো জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৬ বা ৪৭ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যায় প্রায়শই। ‘লু’ বা তাপপ্রবাহ এই সময় ভারতের বেশিরভাগ অংশে খুব সাধারণ ঘটনা।

আবার কোথাও কোথাও ৪০ ডিগ্রি ছাড়ানো তাপমাত্রার পাশাপাশি বাতাসের ভয়ঙ্কর আর্দ্রতায় পরিস্থিতি হয়ে ওঠে অসহনীয়।

এই অসহ্য গরমে কাহিল হয়ে আর ঘামে ভিজে যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ভোটের প্রচারে বেরোতে হয়, যে ভোটকর্মীদের নির্বাচনের সব আয়োজন সম্পন্ন করতে হয় বা যে সাংবাদিকদের ভোটের খবর করতে পথে নামতে হয়– তাদের কারও জন্যই যে বছরের এই সময়টা স্বস্তিদায়ক নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না!

ভারতের বর্ষীয়ান সাংবাদিক রাজদীপ সারদেশাই এ কারণেই প্রশ্ন তুলেছেন, আমার কথাটা হয়তো বিয়েবাড়িতে নানা বাহানা তোলা প্রবীণ চাচাজির মতো শোনাবে, কিন্তু ভারতে কি আর একটু ঠান্ডা সময়ে ভোট হতে পারত না?

  • চন্দ্রবাবুর ‘আবদার’

আসলে তখন যেটা হয়েছিল, ২০০৪ সালেও ভারতে নির্বাচন অক্টোবর মাসেই হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু তখন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও তেলেগু দেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়িকে অনুরোধ করেন, লোকসভা নির্বাচনটা বরং কয়েক মাস এগিয়ে আনুন।

তেলেগু দেশম তখন ছিল বিজেপি জোটের খুব গুরুত্বপূর্ণ শরিক– তাদের অনুরোধ ফেলা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেও বেশ কঠিন ছিল।

রাজদীপ সারদেশাইয়ের কথায়, চন্দ্রবাবু নাইডু চেয়েছিলেন তার রাজ্যের বিধানসভা ভোট ও দেশের লোকসভা ভোট একসঙ্গে করাতে– যাতে বাজপেয়িজির উজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে তিনি রাজ্যেও জিতে যেতে পারেন।

বাজপেয়ি ও তার প্রবল আস্থাভাজন প্রমোদ মহাজন সেই অনুরোধ রক্ষা করে লোকসভা ভোট পাক্কা ছয় মাস এগিয়ে আনলেন– আর নির্বাচন হলো এপ্রিল-মে মাসে!

সেই নির্বাচনেই বিজেপি ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ ক্যাম্পেইনে ভর করে তুমুল প্রচার চালিয়েছিল, আর অটলবিহারি বাজপেয়ির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল তেলেগু দেশমও।

এনএইচ