পর্যটনের দুয়ার খুলছে তিন পার্বত্য জেলায়
Share on:
বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক পর্যটন এলাকা চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।
পাহাড়ে ঘেরা এই অঞ্চলগুলোতে টানা প্রায় এক মাসের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে। পর্যটনের এই স্বর্গরাজ্য রাঙ্গামাটিতে আগামী ১ নভেম্বর থেকে ঘুরতে আসতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা। একইসঙ্গে ৫ নভেম্বর খুলে যাচ্ছে খাগড়াছড়ি ভ্রমণের দুয়ার এবং আগামী সপ্তাহ থেকে বান্দরবানে সীমিত পরিসরে পর্যটন স্পটসমূহ উন্মুক্ত করা হবে।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে খাগড়াছড়ি এবং বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন পর্যটন পুনরায় উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্তে নেয়।
প্রায় এক মাসের নিষেধাজ্ঞায় অনেকটাই থমকে গেছে এই তিন পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনীতি। নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বিপাকে পড়ে এ খাতে সংশ্লিষ্ট হাজারো মানুষ। তাই পুনরায় পর্যটন চালু হওয়ার সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরেছে তাদের মনে। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের আশা, আসছে পর্যটন মৌসুমে তারা এই ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
এর আগে, পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। গত ৭ অক্টোবর বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকরা যুগপৎভাবে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এই তিন জেলায় ‘পর্যটক ভ্রমণ নিরুৎসাহিত’ করেন।
রাঙ্গামাটি
সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় আগামী ১ নভেম্বর থেকে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের আগমনের ওপর সকল প্রকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।
নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় পর্যটকদের বরণের প্রস্তুতি নিয়েছে রাঙ্গামাটির পর্যটন উদ্যোক্তারা। রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সসহ বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের আতিথেয়তায় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়িতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে।
আগামী ৫ নভেম্বর থেকে পর্যটকরা খাগড়াছড়িতে ভ্রমণ করতে পারবেন।
বান্দরবান
বান্দরবানে আগামী সপ্তাহে সীমিত পরিসরে পর্যটন স্পটসমুহ উন্মুক্ত করা হবে বলে বুধবার (৩০ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১২টায় জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বান্দরবান জেলাটি পর্যটন নগরী হিসেবে সুখ্যাতি ছিল দীর্ঘদিন ধরে। যার ফলে আগত পর্যটকদের সেবার বিনিময়ে জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছিল এই পর্যটন শিল্পকে। বর্তমানে এই শিল্পে বিনিয়োগকৃত অধিকাংশ মালিকই ঋণগ্রস্ত।
২০১৯ সালে করোনা মহামারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ক্রমান্বয়ে ক্ষতিকর সম্মুখীন বান্দরবান পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে সর্বশেষ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরোপিত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ৩৬টি খাতে সংশ্লিষ্টদের জীবিকা নির্বাহে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আরোপিত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবি জানান তারা।
এই দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, পর্যটন সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের পক্ষ থেকে দেওয়া সব আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে রুমা-রোয়াংছড়ি ও থানচি ব্যতীত সব উপজেলায় ভ্রমণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এছাড়া রুমা-রোয়াংছড়ি ও থানচি উন্মুক্ত করার বিষয়ে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পর্যটন সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে যখন মতবিনিময় সভা চলছিল তখন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে হোটেল-রেস্টুরেন্টের শ্রমিক, সিএনজি-ইজিবাইকের চালকরা ভাত দেন না হয় পর্যটন খুলে দেন ব্যানার ধরে মিছিল করছিল শত শত পর্যটন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক।
এনএইচ