গাজায় বোমাবৃষ্টি : মধ্যপ্রাচ্যকে পরিবর্তন করে দেয়ার প্রত্যয় নেতানিয়াহুর
Share on:
গাজায় বোমাবৃষ্টি। সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় অব্যাহতভাবে হচ্ছে এই বোমাবৃষ্টি। হামাসের রকেট হামলার পর সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছে ইসরাইল। সেখানে পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্যসহ সমস্ত সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। একদিকে মৌলিক এসব চাহিদার অভাবে মানুষের ত্রাহি অবস্থা। তার ওপর রাতভর বোমাবৃষ্টি। পুরো গাজা এখন অবর্ণনীয় এক দুরবস্থায়।
হামাস ও ইসরাইলের এই যুদ্ধ ৫ম দিনে পড়েছে। এর মধ্যে উভয়পক্ষে কমপক্ষে ২১০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে হামাসের হামলায় ইসরাইলে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১২০০ মানুষ।
গাজায় মারা গেছেন কমপক্ষে ৯০০ ফিলিস্তিনি। তবে ইসরাইলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে ইসরাইলের ভিতরে হামাসের ১৫০০ সদস্যের মৃতদেহের সন্ধান পেয়েছে তারা। যদি তাদের এই দাবি সত্য হয়, তাহলে মোট নিহতের সংখ্যা ভয়াবহ। বিবিসি বলছে, নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার (থাউজেন্ডস)।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে সিরিয়ার বাহিনী এবং ইসরাইলের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হয়ে পড়ার এক ভয়াবহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ হামাসের প্রতি মৌন সমর্থন দিচ্ছে। তারা উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে।
অন্যদিকে প্রকাশ্যে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স ও ইতালি। এ দেশগুলোর নেতারা এ বিষয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।
তারা বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধভাবে উচ্চাকাংক্ষাকে আমরা স্বীকার করি। কিন্তু ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য অধিক সন্ত্রাস ও রক্তপাত ছাড়া অন্য কিছু দিতে পারছে না হামাস। তাদের এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বিপরীতমুখী অবস্থানের ফলে এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, ছড়িয়ে পড়তে পারে মধ্যপ্রাচ্যে। বহুমুখী রূপ নিতে পারে যুদ্ধ।
এরই মধ্যে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের সামরিক অভিযান হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সূচনা মাত্র এবং ‘মধ্যপ্রাচ্যকে পরিবর্তন’ করে দেয়ার পদক্ষেপ।
আগেই হামাস সতর্কতা দিয়েছে। বলেছে, পূর্ব সতর্কতা বা হুঁশিয়ারি দেয়া ছাড়া গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের একটি বাড়িতে হামলা চালানো হলে প্রতিটি হামলার বিপরীতে তারা একজন করে ইসরাইলি জিম্মিকে হত্যা করবে। উল্লেখ্য শিশুসহ হামাসের হাতে ১৫০ জন ইসরাইলি জিম্মি আছেন। গাজা উপত্যকায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করাসহ পূর্ণাঙ্গ অবরোধ আরোপ করার পর এই হুমকি দিয়েছে হামাস। এই অবরোধের ফলে গাজায় মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, সিরিয়া থেকে ইসরাইলের ভিতরে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। গুলি ও মর্টার শেল ছুড়ে এর জবাব দিয়েছে সেনারা।
হামাসকে আইসিস সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করেছেন নেতানিয়াহু। বলেছেন, আইসিস সিরিয়া ও ইরাকে ব্যাপক এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যেমন নৃশংসতা চালিয়েছিল, হামাসও ইসরাইলের বেসামরিক লোকজনকে সেভাবে হত্যা করেছে। তারা শিশুদেরকে পর্যন্ত হত্যা করেছে।
মঙ্গলবার আবেগঘন এক বক্তব্যে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হামাসের হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, ওই অঞ্চলে আরও সামরিক ব্যবস্থা মোতায়েনে প্রস্তুত ওয়াশিংটন।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সংহতি প্রকাশ করতে ইসরাইলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ইসরাইল সফরে আসার কথা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, এই সফর হবে সংহতি ও সমর্থনের বার্তা। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও এই যুদ্ধে বেশ কিছু দেশের নাগরিকরা নিহত হয়েছেন, অপহৃত অথবা নিখোঁজ রয়েছেন। এর মধ্যে আছে ব্রাজিল, কম্বোডিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো, নেপাল, পানামা, প্যারাগুয়ে, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ইউক্রেন।
এনএইচ