tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৫ এএম

মাউশিতে ছাত্রলীগের পদধারীরাও ভোল পাল্টে এখন বিএনপি!


Mawshi2_20240901_222746441

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর সব জায়গায় বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। আওয়ামী লীগ টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাবস্থায় যারা দলের জন্য নিবেদিত ছিলেন তারা অনেকে ভোল পাল্টে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেছেন। রাজনীতির মাঠের পাশাপাশি সরকারি দফতরগুলোতে দেখা যাচ্ছে এই ভোল পাল্টানোর দৃশ্য।


মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অনেকেই বিএনপির লোকজনের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু করেছেন। কর্মচারীদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে অন্যদের কোণঠাসা করে রাখতেন, তারাই এখন নিজেদের বিএনপির লোক হিসেবে অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদের কেউ এতদিন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের পদে ছিলেন, গোপালগঞ্জ জেলায় বাড়ি পরিচয় দিয়ে পুরো মাউশি দাপিয়ে বেড়াতেন। আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতেও কেউ কেউ ছুটে যেতেন। অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠানেও থাকতেন সামনের সারিতে। কিন্তু গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন সুর পাল্টে ফেলছেন তারা।

শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ধরনের পোস্টও ডিলিট করে ফেলেছেন এসব কর্মচারী। এদের বেশিরভাগ দীর্ঘদিন ধরে মাউশিতে কর্মরত থাকায় নানা উপায়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে চলা বিভিন্ন পদের এসব কর্মচারীকে এই কাজে মাউশির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। অন্যদিকে আ ন ম এহসানুল হক মিলন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাবস্থায় এপিএস হিসেবে কাজ করা শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য এস এম সোহেলের সঙ্গে ভোল পাল্টানো এসব কর্মচারী সখ্য তৈরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অবশ্য নিজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ এস এম সোহেল। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘যারা এসব কথা বলছে তারা হয়ত ইনটেনশনালি অভিযোগ করছে। মাত্র দুই দিন মাউশিতে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আমাদের নাম করে কেউ কোনো ডিস্টার্ব করছে কি না সেটা জেনে এসেছি। এর বাইরে শোডাউন বা মহড়ার তো প্রশ্নই আসে না। আমরা সরকারি কর্মকর্তা। রাজনীতি করা, আর কে করে সেসব দেখারও সুযোগ নেই।’

মাউশির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে এমন ভোল পাল্টানো ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে ঢাকা মেইল। এদের মধ্যে সদ্য সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক নেহাল আহমদের পিএ-২ সাজ্জাদ হোসেন অন্যতম। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ানো এই উচ্চমান সহকারী এখন হাঁটতে শুরু করেছেন এস এম সোহেলের পেছনে। শোডাউন দিচ্ছেন মাউশি ও আশপাশের এলাকায়।

অভিযোগ আছে, ডিজির পিএ আ. রহিমকে বাদ দিয়ে সাজ্জাদ হোসেনকে এই পদে বসানোর ব্যবস্থা করেছিলেন মাউশির উপ-পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস।

আরেক উচ্চমান সহকারী কাবুল হোসেন মোল্যা। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। তিনি মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষ অধিদফতর কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি। বর্তমানে ইডেন কলেজের প্রধান সহকারীর দায়িত্বে থাকা কাবুল নিয়মিত ঢুঁ মারছেন মাউশিতে। ২০০৮ সাল থেকে মাউশিতে থাকলেও গত ১১ জুলাই বদলি হয়েছেন ইডেনে।

শুধু তাই নয়, নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি কলেজের প্রধান সহকারী হলেও তিনি সেখানে যান না। বছরজুড়ে পড়ে থাকেন মাউশিতে।

একই পদের আরেক কর্মচারী সৈয়দ লিয়াকত আলীর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়। বিয়ে করেছেন গোপালগঞ্জে। এতদিন নিজেকে গোপালগঞ্জের লোক বলে পরিচয় দিতেন। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি লিয়াকত শিকদারের বন্ধু বলেও দাবি করতেন সহকর্মীদের কাছে।

অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন বিএনপির লোক পরিচয় দিয়ে সাবেক এপিএসের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছেন লিয়াকত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাউশির একজন কর্মচারী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চার মেয়াদে কোনো কর্মসূচিতে যেতে লেট করলে এরা কর্মচারীদের পারলে গালিগালাজ করত। বদলির হুমকি দিত। সবদিকে কোণঠাসা করে রাখত সাধারণ কর্মীদের। এখন এরা সবাই বিএনপির লোক বলে পরিচয় দিচ্ছে। হাস্যকর লাগে।’

আওয়ামী লীগের লোক পরিচয় দিয়ে এমপিও করানোসহ নানা কাজের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এই লিয়াকত। তার ভয়ে বিএনপি কিংবা অন্য সাধারণ কর্মচারীরাও তটস্থ থাকত এতদিন। তিনিই এখন রাজনৈতিক সুর বদল করে নিজের প্রভাব ধরে রাখতে চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়াও আরেক উচ্চমান সহকারী অহিদুর রহমান যার কর্মস্থল মাউশির কুমিল্লার আঞ্চলিক কার্যালয়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে অবস্থান করেন ঢাকায়। এতদিন আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে চললেও এখন নিজেকে বিএনপন্থী শিক্ষকদের সংগঠনের নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়ার আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দেন এই অহিদ। তিনি মাউশি থেকে যখন এমপিও দেওয়া হতো তখন থেকে গড়ে ওঠা চক্রের অন্যতম বলে জানা গেছে।

মাউশির উচ্চমান সহকারী বিকাশ মজুমদারের বাড়ি মাদারীপুরে হলেও এতদিন পরিচয় দিতেন গোপালগঞ্জ বলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বিকাশ মাউশির উপ-পরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের বন্ধু। এসব কারণে বেশ দাপটের সঙ্গে চলছেন আওয়ামী লীগের পুরো সময়। এখন ভোল পাল্টে বিএনপি ঘরোনার লোক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে শুরু করেছেন তিনি।

একই পদের মো. রিপন হোসেন ২০০৯ সাল থেকে মাউশিতে কর্মরত আছেন। পরিচালক (মাধ্যমিক) সৈয়দ জাফর আলীর খালাতো ভাই তিনি। ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে অন্য কর্মীদের কোণঠাসা করে রাখলেও এখন বিএনপির লোক বলে পরিচয় দিচ্ছেন রিপন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আরেক উচ্চমান সহকারী গোলাম রসুল। বিগত সরকারের সময়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রমাণ করতে ডিজির পুষ্পস্তবক অর্পণের কর্মসূচিতে ফুল বহন করতেন তিনি। অথচ রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও সুর বদলে ফেলেছেন বলে জানা গেছে।

ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বিভাস বোস যিনি সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া চন্দ্র শেখর হালদারের (মিল্টন) ঘনিষ্ঠ। আওয়ামী লীগ আমলে বেশ সক্রিয় থাকা বিভাস এখন নিজেকে বিএনপি বলে পরিচয় দেওয়া শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

একই পদের আরেক কর্মচারী ফারুক হোসেন উপ-পরিচালকের (প্রশাসন) পিএ। আওয়ামী লীগ ঘরোনার সহকর্মীদের বিএনপির দিকে ভেড়াতে বেশ তৎপর তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা কর্মচারী। স্যাররা যা বলেন তাই করি। সেভাবেই করতেছি। অনেক জায়গায় অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা আছি আগের মতোই। সোহেল স্যাররা এসেছিলেন। সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।’

এনএইচ