tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
মতামত প্রকাশনার সময়: ২৭ অগাস্ট ২০২২, ১২:২৯ পিএম

বাজার স্থিতিশীল না করলে মানুষ যাবে কোথায়?


a-20220825144057-2208252101-removebg-preview

অভিজিৎ সাহা: করোনার পর থেকে মানুষের অর্থনীতির বুনিয়াদ সোজা হয়ে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যমূল্য বেড়েছে। সয়াবিন নিয়ে যে তুঘলকি কাণ্ড চলেছে তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, আমাদের সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বাজার নিয়ন্ত্রণে অপারগ। রমজানের ভিতরে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা ছিল সেজন্য টাস্কফোর্স নিয়োগ, গোয়েন্দা বিভাগের নজরদারির কথা শুনে জনগণ আস্বস্ত হয়েছিল, সরকার ৪০টি পণ্যের দামও বেঁধে দিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে আসলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।


বিশ্ববাজারে মূল্য বৃদ্ধির কথা বলে বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়ল, আমাদের সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এমনকি আমাদের দেশের খেত- খামারে উৎপাদিত ধান-সবজির দামও বাড়ানো হলো। এখানেও নিয়ন্ত্রণের কোনো কিছুই চোখে পড়ল না। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ানোর কথা বলে আমাদের দেশের পণ্যমূল্যের দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু দাম কমলে কমে না। রমজানে যেসব পণ্যের দাম বাড়ল তা এখনও কমেনি বরং বিভিন্ন অজুহাতে বেড়েছে। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরে একের পর এক দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকল।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ধাক্কায় জনগণের হাঁসফাঁস অবস্থা। এক জ্বালানি তেলের দামের খড়গ নামায় অস্থির চালের বাজার থেকে কাঁচাবাজার। চাল উৎপাদন করে আমাদের কৃষক সেখানে কোন কথা ছাড়াই চালের বাজার এখন তপ্ত। মিলগেট থেকে শুরু করে খুচরা বাজার পর্যন্ত প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৪-৫ টাকা পর্যন্ত। প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়েছে অন্তত ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

খুচরা বাজারে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। কোনোভাবেই চালের বাজারের এই অস্থিরতা নিরসন করা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়া ও সিন্ডিকেটকেই দুষছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে, চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে দাম বাড়ানোর অভিযোগও রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া একটি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনেও চালের বাজারে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কথা উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও ব্যবসায়ীদের দায়ী করছে এজন্য। কিন্তু প্রতিকার মিলছে না অজ্ঞাত কারণে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের এখন ত্রাহি দশা। এ অবস্থায় চালের দাম বৃদ্ধি মানুষের খাদ্যঝুঁকি আরও বাড়বে। দুর্দশার শেষ থাকবে না। এখনই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী সরকারের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের দাম প্রতি কেজিতে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা বাড়তে পারে। কিন্তু কেজিতে দাম বেড়েছে চার টাকা। কেজিতে এত টাকা দাম বাড়ার কোনো যুক্তি আছে? কিন্তু ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ নিচ্ছেন। আর ব্যবসায়ীরা যখন সুযোগ নেন, একেবারেই নেন। তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচের জন্য চাল প্রতি কেজিতে ৫০ পয়সা করে বাড়তে পারে। সেখানে ব্যবসায়ীরা চার টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এখানে কোনো যুক্তি আছে?

এদিকে, চালের বাজার হঠাৎ অস্থির হওয়ার পেছনে পুরনো সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। এই সিন্ডিকেট আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জানিয়ে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও তুলেছেন তারা। সরকারের মজুদে নতুন রেকর্ড তৈরি হলেও বাজারে চালের দাম কমছে না, বরং বাড়ছে। চালের বাজার অস্থিরতার পেছনে একই ব্যক্তিদের নাম আসছে বারবার।

তারা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সারাদেশেই আছে তাদের সদস্য। এমনকি সিন্ডিকেটের সদস্যরা পাইকারি ও খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীও। আর তাদের পেছনে কাজ করছে শক্তিশালী চক্র। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গঠিত উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন কমিটির কার্যক্রম ও মনিটরিং গতিশীল করারও সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। দেশে গত ৫০ বছরে চালের উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ।

সার, বীজসহ কৃষি উপকরণে ভর্তুকি, কৃষি গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন কর্মসূচিসহ বহুমুখী উদ্যোগের ফলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। সেই সঙ্গে আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে লাখ লাখ টন চাল। তারপরও অতিরিক্ত মজুদ নীতির কারণে স্থিতিশীল হচ্ছে না চালের বাজার। চালের বাজার স্থিতিশীল করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিকল্প নেই।

লেখক: সংস্কৃতিকর্মী ও কলামিস্ট।

এইচএন