tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অর্থনীতি প্রকাশনার সময়: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৬ এএম

থেমে গেল ব্যাংক একীভূতকরণ


Bank-400x206

বিগত সরকারের আমলে বেহাল অর্থনীতির মধ্যে নাজুক অবস্থায় পড়ে কয়েকটি ব্যাংক। তখন তড়িঘড়ি করে সেগুলোকে তুলনামূলক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেয় সরকার।


তারপর ১০টি ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণাও দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে চুক্তি হয় কয়েকটি ব্যাংকের মধ্যে। যদিও অনেক ব্যাংক এই পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেয়নি, অভিহিত করেছিল ‘জবরদস্তি’ হিসেবে।

তবে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে ভেবেচিন্তে ধীরে চলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগের চুক্তিগুলো বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গর্ভনর। তবে একীভূতকরণ প্রচেষ্টা থেকে পুরোপুরি পিছু হটছে না এই সরকার। তারা বলছে, প্রয়োজন হলে কিছু ব্যাংক একীভূত করা লাগতে পারে। তবে সেটা ‘জবরদস্তিমূলক’ হবে না; বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বীকৃত ‘প্রম্প্ট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী নতুন করে একীভূতকরণ হবে। সেটাও শুরু হতে পারে আগামী বছরের জুন নাগাদ।

সূত্র জানায়, ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় জোরজবরদস্তি করে ব্যাংক একীভূতকরণের চুক্তি বাতিলের দাবি তোলেন ব্যাংক নির্বাহীরা। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দাবি মেনে নিয়ে দ্রুততম সময়ে চুক্তি বাতিলের নির্দেশনা জারির আশ্বাস দেন। পাশাপাশি পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী ২০২৫ সালের মার্চ থেকে একীভূত করার কথা জানান। কিন্তু মার্চে অনেক ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত হয় না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানালে গভর্নর জুন মাস থেকে একীভূতকরণ কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলেন।

জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগের গভর্নরের চাপানো একীভূতকরণ চুক্তির বিষয়ে নতুন গভর্নর ‘না’ করেছেন। আগের চুক্তিগুলো এখন অচল। এসব জবরদস্তির চুক্তি তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। সুতরাং তা বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।’

জানা গেছে, একীভূতকরণের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিধি লঙ্ঘন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত ১৪ মার্চ দুর্বল পদ্মা ব্যাংককে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। একই ধারাবাহিকতায় গত ৩ এপ্রিল দুর্বল বিডিবিএলকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককের সঙ্গে একীভূতকরণের ঘোষণা করা হয়। আর ৮ এপ্রিল বেসিক ব্যাংককে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে এবং ৯ এপ্রিল ন্যাশনাল ব্যাংককে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিসি) সঙ্গে একীভূতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে বিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং সিইও হাবিবুর রহমান গাজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংক একীভূতকরণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে। সাবেক গভর্নর কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেননি। তিনি একীভূতকরণের চুক্তি করতে বাধ্য করেন।’

এই অবস্থায় ২ সেপ্টেম্বর বিডিবিএলের ৩২৪তম বোর্ড সভায় সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান এমডি হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সেই সিদ্ধান্তের আলোকে একীভূতকরণ চুক্তি বাতিল চেয়ে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, একীভূতকরণে সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে এর আগেই চিঠি দিয়েছে বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। বর্তমান গভর্নর আগের একীভূতকরণ চুক্তি বাতিল করার পক্ষে মত দেওয়ায় খুব শিগগির এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য সাবেক মুখপাত্র (গত বৃহস্পতিবার নতুন মুখপাত্র নিয়োগ দেওয়া হয়েছে) ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘সরকারের পালাবদলে নতুন করে একীভূতকরণ নীতিমালা কার্যকর হবে। আগের সিদ্ধান্ত থাকছে না। পরে পিসিএ অনুযায়ী ব্যাংক একীভূত হবে।’

গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পিসিএ নীতিমালায় বলা হয়, ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংকের স্বাস্থ্য যাচাই করে ২০২৫ সালের মার্চের পর থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের আগ্রহের মাধ্যমে একীভূত হতে পারবে। পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী কোনো দুর্বল ব্যাংক ইচ্ছাকৃতভাবে একীভূত না হলে আগামী ডিসেম্বরের প্রতিবেদন প্রকাশের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যদি বড় কোনো পরিবর্তন না আসে, তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরভিত্তিক প্রতিবেদনে অন্তত ১৪টি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় পড়তে পারে। তখন যদি মনে হয়, কোনো ব্যাংক একীভূত করা প্রয়োজন, তখন সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সূত্রমতে, বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে জনতা ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও এবি ব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংক একীভূতকরণের আগের উদ্যোগ ভালো ছিল। তবে তাড়াহুড়া করা উচিত হয়নি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক ধরে ব্যাংক একীভূত করতে চাইলে ২০২৫ সালের মার্চের পরে তা হতে পারে। তবে অপেক্ষা করতে হবে, ভবিষ্যতে কী হয় তা দেখার জন্য।’

এফএইচ