কৃষিজমি যেন অনাবাদি না থাকে : প্রধানমন্ত্রী
Share on:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যমান কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের অভিযাত্রায় কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ এবং নীতি-সহায়তা ও প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। খবর তথ্য বিবরণীর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যমান কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের অভিযাত্রায় কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ এবং নীতি-সহায়তা ও প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। খবর তথ্য বিবরণীর।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে করোনা মহামারিতে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, অধিক প্রকার ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার, করতে হবে।
এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে; এই নির্দেশনা পালনে কৃষিবিদগণের কর্মতৎপরতা প্রশংসার দাবি রাখে।’
প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল রোববার ‘কৃষিবিদ দিবস-২০২২’ উপলক্ষে শনিবার দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন। এ উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে জেনে তিনি আনন্দিত এবং দেশের সকল কৃষিবিদ, কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের চাকরি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদানের ঘোষণা দেন।
যা এ দেশের কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিদদের জন্য ছিল ঐতিহাসিক মাইলফলক। ফলে অধিকতর মেধাবী শিক্ষার্থীরা কৃষি শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১০ টাকায় কৃষকদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ১ লাখ ৫১ হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
কৃষকদের প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ কৃষক উপকরণ কার্ড দেওয়া হয়েছে। বর্গাচাষিদের জন্য জামানত বিহীন কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা কৃষি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।
বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় সারের জন্য ১৮ জন কৃষককে প্রাণ দিতে হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পক্ষান্তরে, কৃষিবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার কয়েক দফা সারের দাম কমিয়েছে। সেচের বিদ্যুৎ বিলে ২০ শতাংশ রিবেট প্রদান করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সার, বিদ্যুৎ ও ইক্ষু খাতে মোট ৮২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকের পুষ্টি নিশ্চিতকরণ ও আয়ের উৎস সৃষ্টি করতে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২টি করে মোট ১ কোটি ৪০ লাখ ৩৮৭টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হচ্ছে। নিরাপদ শাক-সবজির যোগান ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে রাজধানীসহ ৪১ জেলায় ‘কৃষকের বাজার’ স্থাপন করা হয়েছে।
কৃষকের কৃষি যন্ত্রের ক্রয়মূল্যের ওপর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে হ্রাসকৃত মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত কৃষকের জন্য মোট ৭১ হাজার ২৪০টি কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। যার মধ্যে অত্যাধুনিক কম্বাইন হারভেস্টর, রিপার, সিডার, পাওয়ার টিলারসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে কৃষিতে রোল মডেল। আমরা বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজিতে ৩য়, আলু উৎপাদনে ৭ম, কাঁঠাল উৎপাদনে ২য়, আম উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারাতে ৮ম, পাট উৎপাদনে ২য় ও রফতানিতে প্রথম।
আমাদের সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে খাদ্য শস্যের উৎপাদন ২০০৮-২০০৯ সালের ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ২০২০-২০২১ সালে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ আজ মৎস্য উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের সাফল্য আজ বিশ্বজন স্বীকৃত। বিগত এক দশকে বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদনের গড় প্রবৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ১ শতাংশ যা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয়।
বাংলাদেশ বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে ১ম, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে ৩য় স্থান এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থান যথারীতি ধরে রেখেছে। প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পূরণেও আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ছাগদুগ্ধ উৎপাদনে আমাদের অবস্থান ২য়।
আমরা ইতোমধ্যে দেশজ উৎপাদন দিয়ে দেশের মানুষের জন্য মাংস, ডিম ও দুধের চাহিদা পূরণে সক্ষমতা অর্জন করেছি। মাংস ও ডিমের মাথাপিছু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের কৃষি অনুকূল নীতি ও প্রণোদনায় কৃষক ও কৃষিবিদদের মিলিত প্রচেষ্টা আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী ‘কৃষিবিদ দিবস-২০২২’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। সূত্র : বাসস।
এইচএন