tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অর্থনীতি প্রকাশনার সময়: ১৩ জুন ২০২৪, ০৭:৩০ এএম

ঈদের আগেই বেড়েছে রসুনের দাম


rosun-20240613070743

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদকে ঘিরে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে, তার মধ্যে রসুন অন্যতম। এই অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগে আগে থেকেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পণ্যটির দাম। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় দামে প্রভাব পড়েছে। আর ক্রেতাদের অভিযোগ, কোরবানির ঈদে রসুনের চাহিদা বেশি থাকায় আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।


বুধবার (১২ জুন) রাতে রাজধানীর বাড্ডা ও রামপুরা এলাকার বাজার ঘুরে রসুনের দামের এই চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অথচ গত বছরের এই সময়েও দেশি রসুন বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে।

এদিকে, দেশি রসুনের পাশাপাশি আমদানি করা রসুনের দামও বেড়েছে। বর্তমান বাজারে কেজিপ্রতি বিদেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহেও ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাসখানেক আগেই রসুনের উৎপাদন মৌসুম শেষ হয়েছে। সেই হিসেবে দেশি রসুনের দাম বছরের এই সময়ে তুলনামূলক কম থাকার কথা। কিন্তু ঈদুল ফিতরের পরই বাড়তে থাকে রসুনের দাম। এরপর গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত।

বাড্ডা পাঁচতলা বাজারের ব্যবসায়ী মো. সামছুল হক বলেন, রসুনের দামটা একটু বাড়তির দিকে। আজকের বাজারে আমি দেশি রসুন বিক্রি করছি ২২০ টাকা। আর আমদানি করা রসুন বিক্রি করছি ২৫০ টাকা কেজি। ঈদের আগমুহূর্তে আরেকটু দাম বাড়তে পারেও বলে খবর পাচ্ছি। তবে, ঠিক কী কারণে হঠাৎ রসুনের দাম বেড়েছে, সেটির সঠিক কারণ আমার জানা নেই।

তিনি বলেন, আগের কেনা মাল থাকায় আমি কিছুটা কমে বিক্রি করছি, নতুন নতুন মাল যারা এনেছে, তারা দেশি রসুন ৩০০ টাকার কমে বিক্রি করতে পারছে না। হয়তো স্টক শেষ হয়ে গেলে আমাকেও নতুন দামে বিক্রি করতে হবে।

রামপুরা বাজারের বিক্রেতা আবু হোসেন বলেন, দেশি রসুনের দাম রোজার ঈদের (ঈদুল ফিতর) আগেও বেশ কম ছিল। তবে, তখন দেশি রসুন কাঁচা ছিল। সময় গড়ানোর সঙ্গে রসুন শুকানোর ফলে ওজন কমছে। এতে দামও বেড়েছে। অবশ্য স্বাভাবিকভাবে যতটুকু বাড়ার কথা, ঈদকে ঘিরে দামটা কিছুটা বেশিই বেড়েছে। যেহেতু ঈদে রসুনের চাহিদা বেশি থাকে, এ সময়ে সরবরাহের যেন সংকট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে আরেক দফায় রসুনের দাম বাড়বে।

তিনি বলেন, এক মাস ধরে পেঁয়াজ, রসুন, আঁদাসহ এ জাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে কোনোটিরই দাম কমেনি। শুনেছি বাজেটে কিছু নিত্যপণ্যের দাম কমানো হবে। ঈদের পর হয়তো কিছুটা প্রভাব দেখা যেতে পারে।

বাড্ডা এলাকার পাঁচতলা বাজারে কেনাকাটা করতে আসা রিপন মিয়া নামের এক রিকশাচালক বলেন, সামনে ঈদ তাই সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। পেঁয়াজ, রসুন, আলুসহ এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। এক কেজি চাল কিনতে চলে যায় ৭৫ টাকা। সাড়ে ৩০০-৪০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। আগে মাঝেমধ্যে ব্রয়লার মুরগি খেতাম, তাও এখন ২০০-এর ঘরে। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় করি, তা যদি তিন বেলার খাবারেই চলে যায়, তাহলে অন্য সব আর কী দিয়ে চালাব?

বাজার করতে আসা মোহাম্মদ আল আমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। যে কারণে মাসের খাবার খরচ বেড়েছে প্রায় অর্ধেক। কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। দুটি টিউশনি করিয়ে আগে যা পেতাম, এখনও তাই পাই। কিন্তু যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষদের কিছুই কিনে খাওয়ার উপায় নেই।

জানা গেছে, এ বছর দেশের মোট উৎপাদনকৃত রসুনের ৬৬ শতাংশই উৎপাদিত হয়েছে চলনবিল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। মৌসুমের শুরুতেই রসুনের ভালো দাম পেয়ে খুশি এ অঞ্চলের চাষিরা। তবে উৎপাদনকারী চাষিরা যে দামে বিক্রি করছেন, খুচরা বাজারে তার চেয়ে অনেক বেশি দামে রসুন কিনছেন সাধারণ ক্রেতারা।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, এ বছর দেশে ৮৬ হাজার ৪৯৯ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছিল। আবাদকৃত এসব জমি থেকে প্রায় ৭.২৪ লাখ টন রসুন উৎপাদিত হয়েছে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর রসুনের আবাদি জমি কিছুটা কমলেও আবহাওয়া ভালো থাকায় এর বাম্পার ফলন হয়েছে বলেও জানান তিনি। দেশের উৎপাদিত মোট রসুনের প্রায় অর্ধেকই নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায় উৎপাদিত হয়েছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে গত ৬ জুন। বাজেটে বেশকিছু নিত্যপণ্যের শুল্ক ও কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে, রাজধানীর বাজারে এখনো তার কোনো প্রভাব পড়েনি। অধিকাংশ নিত্যপণ্যই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। কিছু কিছু পণ্য আবার বাজেট ঘোষণার আগে থেকেই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষ করে মসলা জাতীয় পণ্যের মধ্যে এলাচ, গোল মরিচের পাশাপাশি পেঁয়াজ-রসুন ও আদার দামও বেড়েছে।

এনএইচ