ইসরায়েলকে সহায়তা করায় জর্ডানে বিক্ষোভ
Share on:
ইরান থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ৩০০টির বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংশ করে জর্ডান। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা জর্ডানের নাগরিকেরা দেশটির সরকারের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন৷
ইরান থেকে ইসরায়েলে হামলা করা হয় গত শনিবার (১৩ এপ্রিল)৷ কিন্তু সেগুলো যেন ইসরায়েল পর্যন্ত না পৌঁছে, সেই চেষ্টা করেছে জর্ডান৷ আত্মরক্ষার জন্য এটি করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশটির সরকার৷ ‘কারণ এগুলো আমাদের জনগণ ও জনবহুল এলাকার জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল’, বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়৷
হুসেইন নামে জর্ডানের একজন রাজনৈতিক কর্মী বলেন, জর্ডান যেভাবে ইসরায়েলকে রক্ষা করেছে, তাতে আমি খুবই বিরক্ত।’ বিপদের আশঙ্কা থাকায় তিনি তার পুরো নাম উল্লেখ করতে চাননি৷ তিনি বলেন, ‘এখানকার অনেকেই এটা মেনে নিচ্ছে না৷ আমরা ইরানকে সমর্থন করি না এবং গাজায় এখন যা ঘটছে, তার পেছনে ইরানের বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করি৷ কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে এমন যেকোনো পদক্ষেপের সঙ্গে আমরা আছি।’
মারিয়াম নামে আম্মানের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, ‘জর্ডানে ইরানের জনপ্রিয়তা নেই৷ কিন্তু আমি ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র জর্ডানের বাধা দেওয়া এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া প্রত্যাখ্যান করি৷’
জর্ডানের রানিসহ প্রতি পাঁচজনের একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত৷ আম্মানের সামরিক বিশ্লেষক মাহমুদ রিদাসাদ বলেন, সপ্তাহান্তে যে ঘটনা ঘটেছে, তাকে কখনও ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য করা হয়েছে, তেমনটা বলা যাবে না। বরং, জর্ডানের সার্বভৌমত্ব ও আকাশসীমা রক্ষার জন্য করা হয়েছে৷ কারণ, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র কোথায় পড়বে তা জানা যায় না।’
এদিকে ইরানের হামলা ঠেকাতে জর্ডান সহায়তা করেছে বলে ইসরায়েলের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ সম্পর্কে রিদাসাদ বলেন, ‘এটা ইসরায়েলের প্রোপাগান্ডা ছাড়া কিছু নয়৷’
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশ্লেষক তাহানি মুস্তফা বলেন, ‘সপ্তাহান্তের ঘটনা নিয়ে জর্ডানের নাগরিকেরা বিভক্ত৷ কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে জর্ডানের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে মানুষ বিস্তারিত জানে না, কারণ এসব বিষয় নিয়ে এখানে বেশি লেখা হয় না।’
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও জর্ডানের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছিল৷ কিন্তু এক্ষেত্রে জর্ডানের সংসদের অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে সমালোচনা রয়েছে৷ এই চুক্তির আওতায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্য, সামরিক যান ও প্লেন বাধা ছাড়াই জর্ডানে ঢুকতে ও ঘুরে বেড়াতে পারবে৷ গাজা নিয়ে আম্মানে বিক্ষোভ শুরুর পর অনেকে জর্ডান থেকে মার্কিনিদের তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে শুরু করেন বলে জানান তাহানি মুস্তফা৷
গাজায় হামলার প্রতিবাদে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আম্মানে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন৷ তারা ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডানের মধ্যে সই হওয়া শান্তি চুক্তি বাতিলেরও আহ্বান জানান৷
এসএম