tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৬:৩১ পিএম

ক্ষুধা সূচকে আমরা ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে: আব্দুর রাজ্জাক


hungre-20240306161926

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে গত বছরের তুলনায় কিছুটা এগিয়েছে বাংলাদেশ।


ক্রমাগত এ সূচকে ভালো অবস্থান তৈরি হচ্ছে। এক সময় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। খাদ্য সহায়তার জন্য, খাদ্য কেনার জন্য দেশে দেশে ঘুরতে হয়েছে। এখন সেই দেশ খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এটা আমাদের বড় সফলতা।

বুধবার (৬ মার্চ) গুলশানের আমারি হোটেলে ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ২০২৩ বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত এবং ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এক সময় বছরে ১৮ থেকে ২০ লাখ টন চাল আমদানি করতে হতো। কিন্তু এখন বিগত এক বছরে এক কেজিও চাল আনতে হয়নি। এত জনসংখ্যার এ দেশে তুলনামূলক আমরা ক্ষুধা সূচকে অনেক ভালো অবস্থায় আছি। উন্নত দেশের মতো না হলেও সাউথ এশিয়ায় আমরা ভারত পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে।

তিনি বলেন, ভারতের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, কিন্তু অনেক সামাজিক সূচকে তারা আমাদের থেকে পিছিয়ে। তাদের অনেক এলাকায় এখনো চরম দারিদ্র্য রয়েছে। আর পাকিস্তান এখন আমাদের প্রায় সব সূচকে পিছিয়ে।

সাবেক এ কৃষিমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা টেকসই উন্নয়নের সঠিক পথে রয়েছি। খাদ্য নিরাপত্তায় অনেক এগিয়েছি। এখন কৃষি অনেক আধুনিক, বাণিজ্যিক। চাষিদের সামাজিক গুরুত্বও বেড়েছে। চাষাবাদে এখন মাসে লাখ টাকা ইনকাম করা সম্ভব। অনেক তরুণ জিন্স প্যান্ট পরে চাষাবাদ করছেন।

তিনি বলেন, তরুণদের আরও সহযোগিতা ও সুবিধা দেওয়া হলে দেশ এগিয়ে যাবে। সেজন্য কৃষি সংশ্লিষ্টদের দরদি হতে হবে। সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২৩ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১৯। যা গত বছর ছিল ১৯ দশমিক ৬। ফলে গত বছরের তুলনায় সামান্য উন্নতি করেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ২০১৪ সালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে যেখানে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬.৩। আর ২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৩ দশমিক ৮।

ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতার দিক থেকে ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮১তম। বাংলাদেশ বর্তমানে ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধায় আক্রান্ত দেশ। চলতি বছরের ক্ষুধা সূচকে মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।

গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (বিশ্ব ক্ষুধা সূচক) ২০২৩ বিশ্বব্যাপী গত কয়েকমাস আগে প্রকাশিত হয়। প্রতিবছর আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও জার্মানভিত্তিক ভেল্ট হ্যুঙ্গার হিলফে যৌথভাবে এ সূচক প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল।

একটি দেশে অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার হিসাব করে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক, আঞ্চলিক বা জাতীয়— যেকোনো পর্যায়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করতে এ সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়।

বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে কারও স্কোর শূন্য হলে বুঝতে হবে, সেখানে ক্ষুধা নেই। আর স্কোর ১০০ হওয়ার অর্থ, সেখানে ক্ষুধার মাত্রা সর্বোচ্চ। ক্ষুধা সূচক ১০ থেকে ১৯ দশমিক ৯-এর মধ্যে থাকলে ওই দেশ ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধায় আক্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

অনুষ্ঠানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিটের মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেন, আমাদের নিজের উৎপাদন খাদ্য দিয়ে ক্ষুধা মেটাতে হবে। শাক-সবজির ভোগ বাড়াতে হবে, কমাতে হবে চালের ভোগ। কারণ আমার চালের উৎপাদনে প্রচুর ব্যয় করছি। সেচের তেল, সার সবকিছু আমদানি-নির্ভর, এগুলোতে সরকারের প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

এছাড়া খাদ্যের ভ্যালু অ্যাড বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে ৩১ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে অপচয় হচ্ছে। উৎপাদন মাড়াই পরিবহন সবক্ষেত্রে। আবার আমাদের খাদ্য নিয়ে বিলাসিতার প্রবণতা আছে। পরিবার ও সমাজে প্রচুর খাদ্য নষ্ট হচ্ছে।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিপার্টমেন্ট অফ ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টের মহাপরিচালক গাজী মো. সাইফুজ্জামান, ওয়েন্ট হাঙ্গার হিলফে বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর পঙ্কজ কুমার, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনিশ কুমার আগারওয়াল, হেলভিটাস বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম আহমেদ প্রমুখ।

এমএইচ