tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অর্থনীতি প্রকাশনার সময়: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১৬:৩৯ পিএম

বড় ধাক্কা খেল রেমিট্যান্স


download (2)

দেশে ৫ দিনের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে । রেমিট্যান্সের এ নেতিবাচক প্রবাহ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভের ওপরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।


এ অবস্থায় রিজার্ভ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে সরকার। নানা কৌশলে যেকোনো মূল্যে রেমিট্যান্স বাড়াতে কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্ধারিত রেটের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৮ই জুলাই থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় রেমিট্যান্স সংগ্রহ বন্ধ ছিল। এরপর সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হলে রেমিট্যান্স সংগ্রহ শুরু হয়। কিন্তু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা আংশিক চালুর পর ব্যাংক ও এমএফএসের রেমিট্যান্স সংগ্রহ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ব্যাপক কমেছে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশে পাঠানো হয়।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল ৬ অনুযায়ী, ৩০শে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১.৭৮ বিলিয়ন ডলার।

এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা স্বাভাবিক দিনে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা রেমিট্যান্স পেলেও, ইন্টারনেট সংযোগের ধীরগতির কারণে তা ৮০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। গত ১লা জুলাই থেকে ১৩ই জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৭৮ মিলিয়ন ডলার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে চলতি মাসে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আন্দোলনে সহিংসতায় বহু হতাহতের প্রতিবাদে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন অনেক প্রবাসী।

তাদের ক্যাম্পেইন যদি সফল হয় আর সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি এর বিপরীতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারে তাহলে রেমিট্যান্স আহরণে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে বাংলাদেশ।

এদিকে সাধারণত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আগের সপ্তাহের রেমিট্যান্সের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ২৮শে জুলাই রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ১৯ থেকে ২৪শে জুলাই দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর আগে ১ থেকে ১৮ই জুলাই এসেছিল ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ হিসাব বলছে গত সপ্তাহে দেশে রেমিট্যান্স আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রেমিট্যান্স কমে গেছে। তবে এটা যদি দীর্ঘমেয়াদে কমতে থাকে তাহলে ভয়াবহ বিষয় হবে। কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে অর্থ পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে দেখা যাবে প্রবাসীরা অর্থ পাঠাবে, তার আত্মীয়স্বজন টাকা পাবে, কিন্তু দেশে ডলার আসবে না। যা অর্থনীতির জন্য খারাপ ফল বয়ে আনবে।

রেমিট্যান্স না পাঠাতে নেতিবাচক প্রচার হচ্ছে, এতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা? জানতে চাইলে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, তারা ক্ষোভের কারণে এ প্রচার করছে। ক্ষোভ কমে গেলে ঠিক হয়ে যাবে। তবে এটা দেখতে হবে সরকারকে। দেশকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। স্থিতিশীল না হলে বিনিয়োগ করার মতো বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স আসবে না।

এদিকে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বেশি রেটে রেমিট্যান্স আনতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রেমিট্যান্স আহরণ করে এমন ১২টির মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রবাসে রেমিট্যান্স না পাঠানোর প্রচার, গুজব না শোনার আহ্বান পলকের দেশ জুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সংঘাত-সংঘর্ষে হতাহত ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৈধপথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর প্রচারণা করছেন বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলমান গুজব ও অপপ্রচার বিশ্বাস না করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, রেমিট্যান্স না পাঠালে দেশে আসতে দেয়া হবে না- এমন একটি মিথ্যা তথ্য ও গুজব সোশ্যাল মিডিয়াতে অপপ্রচার হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জনবান্ধব সরকার সবসময় প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আমাদের সকলকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। সকল ধরনের গুজব ও অপপ্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অপপ্রচারকারীদের রুখতে হবে।

এফএইচ