tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৪৭ পিএম

চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি, মাঠ ছাড়বে না বিএনপি


170

বিএনপি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লক্ষ্য পূরণে যে কোনো পরিস্থিতি এবার মাঠেই মোকাবিলা করবে দলটি। গড়ে তোলা হবে শক্ত প্রতিরোধ। হামলা হলে পালটা আঘাত। কেন্দ্র থেকে সারা দেশের নেতাকর্মীদের কাছে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে।


সাম্প্রতিক কয়েকটি সমাবেশেও হামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে। এসব কর্মসূচিতে বাঁশের লাঠি ও পাইপের মাথায় জাতীয় পতাকা লাগিয়ে অংশ নেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশ চলাকালে আশপাশে ছিল তাদের সতর্ক পাহারা।

তবে এখনই আগ বাড়িয়ে কোনো সংঘর্ষে জড়াবে না দলটি। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক এসব তথ্য সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

নেতারা আরও জানান, গত এক মাস ধরে সারা দেশের নেতাকর্মীরা প্রতিদিন মার খেয়ে ঘরে ফিরছেন। প্রতিরোধ না করেও হয়েছেন মামলার আসামি। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে আস্থাহীনতা। যা ভবিষ্যৎ সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

সাধারণ মানুষের মধ্যেও এমন বার্তা যেতে পারে যে বিএনপির আন্দোলনের শক্তি নেই। তাই নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখা এবং সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের বিকল্প নেই।

সংবাদ মাধ্যমকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিরোধী রাজনীতি নিশ্চিহ্নে সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। মামলা-হামলা গুমের মাধ্যমে দেশে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। যাতে কেউ সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদে রাজপথে নামতে না পারে।

কিন্তু জনগণের দল হিসাবে বিএনপি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে রাজপথে আন্দোলন করছে। এটা বন্ধে সরকার ও ক্ষমতাসীনরা অতীতের পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারাও হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিএনপির নেতাকর্মীরা সাহসের সঙ্গে রাজপথে নেমেছেন। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে। এবার রাজপথেই হবে ফয়সালা। আর মাঠে থেকেই মোকাবিলা করা হবে যে কোনো পরিস্থিতি।

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে। উভয় দলই ঘোষণা দিয়েছে মাঠ দখলের।

ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে এর নমুনাও। জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে সারা দেশে বিএনপির প্রায় অর্থশতাধিক কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা ও মামলা এড়িয়ে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেওয়ায় কোথাও বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি। অতি উৎসাহী হয়ে কোনো নেতাকর্মী যাতে সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা ছিল।

কিন্তু ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এসব কর্মসূচিতে ধারাবাহিক হামলা ভাবিয়ে তোলে বিএনপির হাইকমান্ডকে। হঠাৎ করে সরকারের কঠোর মনোভাব জানার চেষ্টা করেন তারা। সবকিছু পর্যালোচনা করে দলটির নীতিনির্ধারকদের ধারণা, সরকার বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে হামলা-মামলা করে বিএনপিকে মাঠছাড়া করতে চায়। সরকারের এমন মনোভাব বুঝতে পেরে তারা পালটা হামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

কিন্তু রাজধানীর সমাবেশে হামলার পর সংঘাত এড়ানোর কৌশল থেকে সরে আসে বিএনপি। বিশেষ করে বনানীতে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তরুণ নেতা তাবিথ আওয়াল এবং কুমিল্লায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুর ওপর হামলার পর নীতিনির্ধারকরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। বিভিন্ন স্তরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মতামত নেন।

কর্মসূচিতে হামলা হলে করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বেশিরভাগ নেতাই মনে করেন, এভাবে হামলা ও নেতাকর্মীরা মার খেতে থাকলে এক সময় তাদের মনোবলে চিড় ধরবে। তাই নেতাকর্মীদের চাঙ্গাভাব ধরে রাখতে বিনা প্রতিরোধে মার খাওয়া উচিত হবে না।

হামলা হলেই পালটা আঘাতের প্রস্তুতি থাকা উচিত। কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। থাকতে হবে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। দলের এমন সিদ্ধান্তের পর নয়াপল্টন, ধোলাইখাল, খিলগাঁওয়ের সমাবেশে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

এসব সমাবেশে দলের নীতিনির্ধারকরা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, এবার থেকে হামলা হলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। নেতাকর্মীদের পালটা হামলার প্রস্তুতি নিতেও নির্দেশ দেন তারা। তাদের এমন ঘোষণার পর নেতাকর্মীরাও সমাবেশে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীর মহাখালী, মিরপুরের সমাবেশে সরেজমিন দেখা যায়, বেশিরভাগ নেতাকর্মীর হাতে ছিল বাঁশ, কাঠের লাঠি, লোহা ও প্লাস্টিকের পাইপ।

যদিও তারা কৌশল হিসাবে লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে নিয়ে যান। বুধবার মিরপুরের সমাবেশের আশপাশে স্থানীয় যুবলীগ লাঠি হাতে অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত হামলার ঘটনা ঘটেনি।

এ সমাবেশ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আন্দোলনের ‘রিহার্সাল চলছে, ফাইনাল খেলা’ এখনও শুরু হয়নি।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেভাবে জেগে উঠেছেন তা সত্যিই আশান্বিত করে। এখন আপনারা যেমন পুলিশ দেখলে দৌড় দেন না, সামনে দাঁড়ান। এ সামনে দাঁড়ানোর কাজটা অব্যাহত রাখুন।

বুধবার রাস্তায় আপনাদের হাতে পতাকাসহ লাঠি ছিল ছোট ছোট। এরপর মোটা মোটা বাঁশের লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। প্রত্যেকের হাতে লাঠি থাকবে। কাউকে আঘাত করার জন্য নয়, নিজেদের আত্মরক্ষার্থে। তবে আঘাত আসলে পালটা আঘাত করতে হবে। ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

রাজধানীর বাইরেও নেতাকর্মীরা যে কোনো বাধা মোকাবিলা শুরু করেছে। বুধবার মুন্সীগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। কিন্তু পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা সমাবেশ করতে চাইলে শুরু হয় ধাওয়া-পালটাধাওয়া।

পুলিশের হামলায় তারা সমাবেশস্থল ছেড়ে যাননি। পালটা প্রতিরোধ করেন। পুলিশের টিয়ার শেলের জবাবে বৃষ্টির মতো ইট-পাথর ছুড়ে মারেন। এতে বিএনপির নেতাকর্মীর পাশাপাশি পুলিশের বেশ কিছু সদস্য আহত হন।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, এবার রাজপথে গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে। এটা বুঝতে পেরেই বিএনপিকে মাঠছাড়া করতে চায় তারা।

কিন্তু এবার আমরা মাঠ ছাড়ছি না। কারণ আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। যত বাধাই আসুক তা মাঠেই মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাব।

এন