দরিদ্র দেশে ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য সরবরাহে প্রস্তুত রাশিয়া
Share on:
রাশিয়া আগামী চার মাসে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য সরবরাহের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির কৃষিমন্ত্রী দিমিত্রি পাত্রুশেভ। তুরস্কের সহায়তায় এই খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার রুশ বার্তা সংস্থা তাসের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। রাশিয়া বলেছে, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের অবরুদ্ধ বন্দরগুলো থেকে যেসব খাদ্যশস্য ছাড় হয়েছে, সেসবের অর্ধেকেরও বেশি চালান পশ্চিমা দেশগুলোতে গেছে। ইউক্রেন থেকে যাত্রা করা খাদ্যশস্য চালানের মাত্র ৩ শতাংশ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো পেয়েছে।
গত ২২ জুলাই জাতিসংঘের সমর্থনে তুরস্কের মধ্যস্থতায় ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনের অবরুদ্ধ বিভিন্ন বন্দরে আটকা কোটি কোটি টন খাদ্যশস্য বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে সরবরাহের পথ খুলে যায়। কিন্তু ইউক্রেনের বন্দর ছেড়ে আসা খাদ্যশস্যের বেশিরভাগই দরিদ্র দেশগুলোর পরিবর্তে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে কয়েক লাখ টন ভুট্টা, গম, সূর্যমুখী পণ্য, বার্লি, সরিষা এবং সয়া রপ্তানি করা হয়। রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, ইয়েমেন, সুদান এবং আফগানিস্তানের মতো অভাবী দেশগুলো বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কাছ থেকে মাত্র ৩ শতাংশ খাদ্যশস্য পেয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে অভিযোগ করে বলেছেন, এই চুক্তিতে গুরুতর সমস্যা রয়েছে। দরিদ্র দেশে খাদশস্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি পূরণ না করা হলে মস্কো চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারে বলেও বিভিন্ন সময়ে সতর্ক করে দিয়েছে।
পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক ইউক্রেন থেকে বৈশ্বিক বাজারে যেকোনও সরবরাহ খাদ্য সংকট কমিয়ে দিতে পারে।
বিশ্বের অন্যতম দুই প্রধান খাদ্য ও জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে ৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বৈশ্বিক এই সংকটের সমাধানে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গত ২২ জুলাই কিয়েভ এবং মস্কোর কর্মকর্তারা ইউক্রেনে আটকা আড়াই কোটি টন গম ও ভুট্টা বিশ্ববাজারে সরবরাহের লক্ষ্যে তুরস্কে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
চুক্তির ফলে ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরু হওয়ায় বৈশ্বিক খাদ্য সংকট এবং বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম কমবে বলে আশা করা হয়। চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানির কাজ তদারকির জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র (জেসিসি) চালু করা হয়।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেনে আটকা শস্য বহনকারী বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ যেন নিরাপদে কৃষ্ণসাগরে চলাচল করতে পারে, সেজন্য তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র খোলা হয়। সেই কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে জাতিসংঘ, রাশিয়া ও তুরস্ক।
কূটনীতিকদের মতে, চুক্তিতে ট্রানজিটে থাকাকালীন কোনও চালান অথবা বন্দরগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে না বলে রাজি হয়েছে রাশিয়া। যদিও চুক্তি সাক্ষরের পরদিনই ওডেসা বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। অন্যদিকে, ইউক্রেন মাইন পেতে রাখা সাগর দিয়ে কার্গো জাহাজ পরিবহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই চুক্তিতে পৌঁছাতে সময়ে লেগেছে প্রায় দুই মাস, আর এই চুক্তির স্থায়িত্ব হবে ১২০ দিন। তবে উভয়পক্ষ রাজি হলে চুক্তির মেয়াদ নবায়ন করা হতে পারে।
রাশিয়ার অবরোধের কারণে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গম-ভিত্তিক তৈরি রুটি এবং পাস্তার মতো অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া রান্নার তেল এবং সারের দামও বিশ্বজুড়ে বেড়েছে।
এমআই