রবিউস সানি মাসে করণীয়
Share on:
আরবি বর্ষপঞ্জি ও ইসলামি হিজরি সনের চতুর্থ মাস ‘রবিউস সানি’, একে ‘রবিউল আখির’ও বলা হয়। এটি ‘রবিউল আউয়াল’ মাসের জোড়া মাস। ‘রবি’ অর্থ বসন্ত, ‘আউয়াল’ অর্থ প্রথম, ‘সানি’ অর্থ দ্বিতীয়, ‘আখির’ অর্থ শেষ বা অন্য। ‘রবিউস সানি’ অর্থ হলো বসন্তকালের দ্বিতীয় মাস বা অন্য বসন্ত। মহানবী (সা.)-এর দুনিয়াতে আগমনের মাস, হিজরতের মাস ও তিরোধানের মাস রবিউল আউয়ালের জোড়া মাস হিসেবে রবিউস সানি মাসও বেশ তাৎপর্যময়।
ইসলামী শরিয়তে প্রত্যেক মাস ও সপ্তাহে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যেমন সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুই দিন রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন- বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি। -(সুনানে নাসায়ী, ২৩৫৮)
এছাড়াও আইয়ামের বীযের তথা প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজার রাখার কথা এসেছে হাদিসে। এসব আমল রবিউস সানীতেও রয়েছে। চাইলেই যেকেউ এই আমলগুলো করতে পারে।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর ইবনে আ’স রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান।’- (বুখারী, ১১৫৯, ১৯৭৫)
এছাড়া প্রতি সপ্তাহে অথবা যেকোনও সময় কবর জিয়ারতের কথা আছে হাদিসে। আল্লাহর রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে,, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল-মুজামুল আউসাত, হাদিস : ৬১১৪)।
স্বজনের মধ্যে যারা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, তারা পৃথিবীবাসীর পক্ষ থেকে আমল ও সওয়াব পাওয়ার প্রত্যাশা করে থাকেন। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘মানুষকে যখন কবরে দাফন করা হয়, তখন তার অবস্থা ডুবন্ত মানুষের ন্যায় হয়ে যায়। নদীতে বা সাগরে যদি জাহাজ তলিয়ে যায়, তখন মানুষ যেমন দিশেহারা হয়ে চতুর্দিকে হাত মারতে থাকে এই ধারণায় যে, হাতে কোন কিছু আসে কি-না। যে আঁকড়ে ধরে সে জানে বাঁচাতে পারে। মুর্দারও সেই অবস্থাই হয় এবং সে জিবিতদের সাওয়াব রেসানীর অপেক্ষা করতে থাকে। তখন তার আপনজন, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব যদি কিছু সাওয়াব রেসানী করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা সেটাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে তাদের খেদমতে জীবিতদের পক্ষ থেকে হাদিয়া হিসেবে পৌঁছে দেন’। (বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, ৭৫২৭)
অন্যান্য মাস বা সময়ের মতো এই মাসেও এ আমলের প্রতিও খেয়াল রাখা যেতে পারে। তবে এই আমলকে এই মাসের জন্য অবশ্যক বা এর বিশেষ কোনও ফজিলত আছে এমন মনে করা যাবে না।
এগুলো ছাড়া রবিউস সানি মাসে শরীয়তে বিশেষ কোনো আমলের কথা বর্ণিত হয়নি; কিন্তু দেশের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলের সাধারণ ধর্মভীরু অনেকের মাঝে রবিউস সানি মাসের আমল হিসাবে কিছু ভিত্তিহীন নামাজ ও আমলের প্রচলন রয়েছে।
এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন লাইব্রেরিতে বার চান্দের আমল জাতীয় কিছু কিছু বইয়ে রবিউস সানির নতুন চাঁদ দেখে মাগরিবের পর দুই রাকাত করে মোট ৮ রাকাত নফল নামাজ পড়ার কথা রয়েছে। এর প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা ইখলাস পড়ার কথা রয়েছে...।’-এমন আরো বেশ কিছু আমলের কথা রয়েছে বইগুলোতে।
আলেমেদের মতে, রবিউস সানি মাসের নামাজ ও আমল সম্পর্কিত এমন বানোয়াট বিষয়গুলো জালহাদীস বিষয়ক কিতাবেও তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই বলা যায় এগুলো কিছু মানুষের মনগড়া ও বানানো। -(আলকাউসার, প্রচলিত ভুল, ১৫/১১)
এই আমলগুলোর বাইলে অনেকে আবার রবিউস সানির ১১ তারিখে বড় পীরখ্যাত প্রখ্যাত বুজুর্গ ব্যক্তি হজরত আব্দুল কাদির জিলানি (রহ.)–এর ইন্তেকালের দিনকে ‘ফাতিহায়ে ইয়াজ-দাহম’ হিসেবে বিশেষভাবে পালন করে থাকে। অথচ এসব আমলের সবই ভিত্তিহীন। কোরআন, হাদিস, সাহাবি, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের মাঝে এই আমলগুলো পাওয়া যায় না।
আবদুল কাদের জিলানী রাহ.-এর ওফাত দিবস পালনের বিষয়ে আলেমরা বলেন, ইসলামে জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন ও উরস করা শরীআত সমর্থিত অনুষ্ঠান নয়। তবে তিনি অনেক উঁচুস্তরের অলী ও বুযুর্গ ছিলেন। তাই এই নির্দিষ্ট তারিখের অনুসরণ না করে অন্য যে কোন দিন তার জন্য দোয়া করলে এবং জায়েজ পদ্ধতিতে তার জন্য ঈসালে সওয়াব করা যেতে পারে। -(প্রচলিত ভুল’,১২৬-১২৭)
এমআই