tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ০৬ মার্চ ২০২২, ১৯:১৩ পিএম

পুতিনের টার্গেটে ইউক্রেন ফার্স্ট লেডি!


পুতিন-জেলনস্কি-ওলেনা

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ চরমে। মস্কো ক্রমাগত আঘাত হেনে চলেছে কিয়েভের ওপর। অন্যদিকে এক কথায় আমেরিকার দেশ ছাড়ার প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কি রুখে দাঁড়িয়েছেন পুতিনের বিরুদ্ধে।


ভয়ংকর পরিস্থিতিতে উঠে এসেছে আরও একজনের কথা। প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কির স্ত্রী প্রেসিডেন্টের মতোই বার্তা দিয়েছেন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে। কার্যত ইউক্রেন ফার্স্ট লেডি উদ্বুদ্ধ করেছেন নিজের দেশের যোদ্ধাদের একটি সোশ্যাল মিডিয়া বার্তায়। পাশাপাশি দেশের পাশে থাকার জন্যও ইউক্রেনবাসীকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে রাশিয়া। সেখানে চলছে ভয়ংকর যুদ্ধ। চলমান পরিস্থিতিতে সকলেই জানেন সম্ভবত পুতিনের এক নম্বর টার্গেট প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা বা কারাগারে নিক্ষেপ করা এমনকি হত্যা না করা পর্যন্ত রুশ প্রেসিডেন্টের ঘুম নেই।

ইউক্রেনে চলমান পরিস্থিতিতে যদি প্রশ্ন করা হয়, পুতিনের দু নাম্বার টার্গেট কে? তবে তা নি:সন্দেহে জেলেনস্কির স্ত্রী, অতি সুন্দরী ওলেনা জেলেনস্কা। রাশিয়ার এক নম্বর টার্গেট প্রেসিডেন্ট ভ্লাদেমির জেলেনস্কি নিজেই এ কথা জানিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট আরো বলেছিলেন, কেবল তিনি বা তার স্ত্রী শুধু নন, পুতিনের প্রধান লক্ষ্যের দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে জেলেনস্কি, জেলেনস্কা-র দু’সন্তান আলেকসান্দ্রা এবং কিরিল।

ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলনেস্কা জানান, দেশের দুর্দিনে প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকা পালন করছেন ভলোদেমির জেলেনস্কি । পবিত্র পিতৃভূমিকে রক্ষা করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। শত্রুপক্ষের হামলার মুখে প্রাচীরের মতো ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট । গোটা বিশ্বের কাছে এভাবেই 'হিরো' হয়ে উঠেছেন জেলেনস্কি।

স্বামীর সাহসের প্রতি কুর্নিশ জানিয়ে তিনি বলেন, চরম এই বিপদে আমি সর্বদাই স্বামীর পাশে রয়েছি।

প্রেসিডেন্টের মতো ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডিও নিয়মিত নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপডেট দিয়ে যাচ্ছেন। ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছেন, আমার প্রিয় ইউক্রেনবাসী, আমি প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। আমি সারাক্ষণ আপনাদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ফলো করছি।

আপনাদের পোস্ট করা ভিডিও গুলি আমার নজরে এসেছে। আপনারা অসাধারণ ধৈর্য্য ও সংযমের পরীক্ষা দিচ্ছেন। আমি গর্বিত আপনারা আমার সহ নাগরিক।

একইসঙ্গে তিনি বলেন, আমি প্যানিক করছি না। আমার চোখে জল নেই। আমি শান্ত রয়েছি। আমি আত্মবিশ্বাসী। আমার সন্তানরা আমার প্রতি নির্ভরশীল। আমি তাঁদের পাশে রয়েছি। আমি আমার স্বামীর পাশে রয়েছি। ওর জন্য আমি গর্বিত।

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের ভোগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওলেনা জেলেনস্কা জানিয়েছিলেন, আমি মানুষের সন্মুখে নয়, নেপথ্য-চারণ পছন্দ করি। আমার স্বামী সামনের দিকে থাকেন, আমি তার ছায়া হয়ে থাকি স্বচ্ছন্দে। পার্টির জন্য নই আমি। আমি জোক বলতে পছন্দ করি না।

ইউক্রেন ফার্স্ট লেডি রূপসি জেলেনস্কা জেনে নেওয়া যাক:

নাম ওলেনা জেলেনস্কা। একসময় ছিলেন স্ক্রিপ্টরাইটার। এখন অবশ্য তার জীবনের স্ক্রিপ্টটা নিজের হাত থেকে বের হয়ে গেছে অনেকটাই। কিন্তু যেটুকু হাতে রয়েছে, তাতেই তার কলমের শক্তির প্রমাণ দিচ্ছেন। তিনি স্বামীর পাশে দাঁত কামড়ে রয়েছেন।

শুধুই ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি নন, ওলেনা পেশায় আইনজীবী। বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয় নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এমনকী ইউক্রেনের কূটনীতির বিষয়েও কাজ করে থাকেন।

১৯৭৮ সালে ইউক্রেনের ক্রিভি রিখ শহরে জন্মগ্রহণ করেন ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা প্রথম জীবনে আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে পেশা পরিবর্তন করে তিনি লেখিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পাশাপাশি ওলেনা স্টুডিয়ো ভারতাল ৯৫ নামে একটি প্রোডাকশন হাউসের সহ প্রতিষ্ঠাতা।

স্কুলে নিউট্রিশনের কাজ করার ক্ষেত্রেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও লিঙ্গ নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও মহিলা কংগ্রেসের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী হিসেবে ছাপ রেখেছেন ওলেনা জেলেনস্কা।

৪৪ বছরের এই সুন্দরী যার গলায় হার-মানা-হার পরিয়েছিলেন, সেই স্বামীর জন্য তিনি হার-না-মানা যুদ্ধে নেমেছেন। ফলে সারা দুনিয়ার ফোকাস রয়েছে তার ওপর। চলমান যুদ্ধ তাকেও বদলে দিয়েছে।

ইউক্রেন ফার্স্ট লেডির জন্য আলাদা কোনো অফিস ছিল না, কিন্তু যুদ্ধের দামামা বাজতেই সেটিও হয়েছে। সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলেনস্কি আর ওলেনা সহায়তা করছেন নানাভাবে। স্বামীর জয় চাইছেন কর্মে ও প্রাণে।

এদিকে একটি ভিডিও বার্তায় ফার্স্ট লেডি নিজেও বলেছেন, শত্রুদের হিটলিস্টে রয়েছি আমি। আমার পরিবারের উপরও হামলা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে ওদের। রাষ্ট্রপ্রধানের উপর হামলা চালিয়ে রাজনৈতিকভাবে গোটা দেশকে ধ্বংস করে ফেলতে চাইছে রাশিয়া।

তাঁর মাথার উপর মৃত্যুর খাঁড়া ঝুললেও রাজধানী কিয়েভেই রয়েছেন প্রেসিডেন্ট। জেলেনস্কির কথায়, ''আমি কিয়েভেই থাকব। আমার পরিবারও এখানেই রয়েছে।''

ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ''সততাই আমাদের অস্ত্র। আমরা হারব না। আমাদের দেশ, আমাদের পিতৃভূমি, আমাদের সন্তান। ইউক্রেনকে আমরা রক্ষা করবই। গ্লোরি টু ইউক্রেন। সকলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আমাদের এই মুহূর্তে অস্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে।''

ওলেনা জেলেনস্কার প্রথম জীবন:

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ওলেনা কিয়াশকো জন্মেছেন মধ্য ইউক্রেনের শিল্প শহর ক্রিভি রিহ-তে। এখানেই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও বড় হয়েছেন, প্রাধান ভাষা যেখানে রুশ। এরা দুজনই ক্রিভি রিহ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছেন।

স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ বন্ধু ছিল বেশ কয়েকজন। জেলেনস্কি স্থাপত্য বিদ্যা নিয়ে পড়াশুনো করেন, আর জেলেনস্কা পড়েছেন আইন বিষয়ে।

স্কুল জীবনের প্রেম ভোলোদিমির এবং ওলেনার। দীর্ঘ আট বছরের সম্পর্ক অবশেষে ২০০৩ সালে বিয়ের মাধ্যমে পরিণতি লাভ করে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯-এর এপ্রিল মাসে একজন বিখ্যাত কৌতুকাভিনেতা জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে গেলেন, তখন তার স্ত্রী ওলেনা সম্পর্কে সারা দুনিয়ার কয়জন আর জানতেন?

এইচএন