tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
খেলা প্রকাশনার সময়: ০৬ জুলাই ২০২৩, ০৯:০৯ এএম

বৃষ্টি আইনে টাইগারদের বিপক্ষে আফগানদের জয়


১

প্রথমে বাংলাদেশি ব্যাটারদের তোপের মুখে ফেলেছিলেন আফগান বোলাররা। ফলে টাইগার পেসারদের সামনে জয় পাওয়ার লড়াইটা কঠিনই ছিল। শুরুটা ভালোভাবে করলেও, স্বল্প পুঁজি নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানানোটা তাদের জন্য ছিল অনেকটা ‘অসম্ভবকে সম্ভব করা’র মতো! কেননা এর ভেতরই আফগানিস্তানকে জিতিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি। তৃতীয় দফা বৃষ্টি শুরুর সময়ই তারা ১৭ রানে এগিয়ে ছিল। ফলে শঙ্কাই সত্যি হলো, বল আর মাঠে না গড়ানোয় বৃষ্টি আইনে জয় পেয়েছে সফরকারীরা।


এর আগে প্রথম দুই দফা বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের ওভার কমিয়ে ৪৩ করা হয়েছিল। নির্ধারিত ওভার শেষে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে ১৬৯ রান সংগ্রহ করে। কিন্তু বৃষ্টি আইনে আফগানদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬৪ রান। তবে তৃতীয় দফা বৃষ্টি যেন বাংলাদেশের জন্য মড়ার ওপর খাড়ার ঘা! ১০.৩৫ মিনিটের ভেতর বৃষ্টি থামলে আফগানদের সামনে নতুন লক্ষ্য দাঁড়াতো। ৭.২ ওভারে তাদের দরকার হতো আর মাত্র ২৮ রান।

তবে শেষ পর্যন্ত বল আর মাঠে গড়াতে দেয়নি বৃষ্টি। ফলে আফগানিস্তানের আগেই বৃষ্টি বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছে! খেলা বন্ধ হওয়ার আগে আফগানিস্তান ২১.৪ ওভারে ২ উইকেটে ৮৩ রান করেছিল। জয়ের জন্য নির্ধারিত রানের চেয়ে তারা এগিয়ে ছিল ১৭ রানে। শেষ পর্যন্ত ওই রানে জিতেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল আফগানিস্তান।

বাংলাদেশের দেওয়া ১৬৪ রানের সহজ লক্ষ্যে আফগানিস্তানের শুরুটা ছিল আঁটসাঁট। মুস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদের করা প্রথম চার ওভারে তারা মাত্র ১০ রান তুলতে পারে। এরপর অবশ্য তাদের রানের গতি কিছুটা বাড়ে। ওই ধারাবাহিকতায় উইকেট না হারিয়েই নিরাপদে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইবরাহীম জাদরান। সেই যাত্রায় সফরকারীদের ৫৪ রানের মাথায় প্রথম আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। ৪৫ বলে করেছেন ২২ রান করা গুরবাজকে তিনি নাজমুল শান্ত’র তালুবন্দী করেছেন।

অবশ্য আগে থেকেই দুই ওপেনারকে ভোগাচ্ছিলেন সাকিব। অবশেষে সফল হয়েছেন তিনিই। তার বলে সামনে এগিয়ে এসে লেগ স্কয়ারে খেলতে গিয়ে গুরবাজ ক্যাচ তুলে দেন। সাকিবের পথ ধরে আফগান শিবিরে এরপর দ্বিতীয় আঘাত করেন পেসার তাসকিন আহমেদ। রহমত শাহ ক্রিজে নেমে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আগের ওভারেই তিনি দারুণ শটে চার হাঁকান হাসান মাহমুদের বলে। এরপর তাসকিনের বলেও শট খেলতে গিয়ে স্লিপে থাকা লিটন দাসের তালুবন্দী হয়েছেন তিনি। রহমত ফিরে যান মাত্র ৮ রান করে। তখন দুই উইকেট হারিয়ে তাদের সংগ্রহ ছিল ৭০ রান।

এরপর অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদিকে সঙ্গী করে রানের চাকা বাড়ান জাদরান। তবে ৮৩ রান তুলতেই ফের অঝোরে বৃষ্টি নামে। মাঠ ছাড়ার আগে জাদরান ৫ চারের বিনিময়ে ৪১ (৫৮ বল) এবং শহীদি ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব ও তাসকিন।

এর আগে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মেঘ মাথায় নিয়ে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদী। কোমরের চোট থাকায় তামিমের খেলা নিয়ে কিছুটা দোলাচল থাকলেও তিনিই টাইগারদের প্রতিনিধি হয়ে নেমেছিলেন। এরপর ম্যাচের শুরুটা দেখেশুনে শুরু করেন দুই ওপেনার তামিম ও লিটন দাস।

ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন তামিম। বেশিক্ষণ থিতুও হতে পারলেন না উইকেটে। ফজলহক ফারুকির অফস্ট্যাম্পের বলে আলতো করে ব্যাট চালিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনলেন। উইকেটরক্ষক রহমানউল্লাহ গুরবাজের তালুবন্দী হয়ে ফিরেছেন ২১ বলে মাত্র ১৩ রান করে। এরপর থিতু হয়েও ফিরেছেন লিটনও। ইনিংসের ১২তম ওভারে তিনি আফগান স্পিনার মুজিব-উর রহমানের করা বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন। মুজিবের খাটো লেংথের বলটি তুলে মারতে গিয়ে তিনি ফিরেছেন ৩৫ বলে ২৬ রান করে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে বড় ভরসার নাম নাজমুল হোসেন শান্ত। আজও তিনি শুরুটা করেছিলেন ইতিবাচক। তবে ইনিংস বড় করা হয়নি। মোহাম্মদ নবির প্রথম বলেই তিনি সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন। তিনি ফিরেছেন মাত্র ১২ রানে। পরপর ২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ বেশ চাপে পড়ে যায়। এরপরই চোখ রাঙিয়ে চট্টগ্রামের সাগরিকায় নামে মুষলধারে বৃষ্টি। যার কারণে আধাঘণ্টারও বেশি সময় খেলা বন্ধ ছিল।

বৃষ্টি শেষে টাইগারদের পথ দেখাতে থাকা সাকিব আল হাসানও চাপে ভেঙে পড়েন। রানের গতি বাড়াতে গিয়েই আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে অফ-সাইডে শট খেলতে গিয়ে মোহাম্মদ নবির তালুবন্দী হন তিনি। এতে হৃদয়ের সঙ্গে জুটি বড় করার স্বপ্নে দারুণ ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। সাকিব ৩৪ বলে ১৪ রান করেছেন। তার পরপরই আউট হয়ে যান মিস্টার ডিফেন্ডেবলখ্যাত মুশফিকুর রহিম। রশিদ খানের ভয়ঙ্কর এক গুগলিতে তিনি ৩ বলে ১ রান করেই বোল্ড হয়ে ফিরে যান।

এরপর একে একে ফিরেছেন আফিফ হোসেন এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। মাঝে মূল স্কোয়াডের বাইরে থাকা আফিফ এই সিরিজ দিয়ে ফের দলে ফিরেছিলেন। কিন্তু তিনিও তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গ দিতে পারেননি। রশিদের লেগ স্পিন ব্যাকফুটে ভর করে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন আফিফ, তবে মিস করে যান। প্রথমে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও আফগানিস্তানের রিভিউ কাজে লেগে যায়। মাত্র ৪ রানে ফেরেন আফিফ। ২৩ বলের সংগ্রাম শেষে ৫ রানে মিরাজ ফারুকির বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছেন।

এরপর আরও এক দফা বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ থাকে। সে সময় পর্যন্ত একপ্রান্ত তরুণ তাওহীদ হৃদয় আগলে রাখলেও, অন্যপ্রান্তে তিনি সতীর্থদের আসা-যাওয়া দেখেছেন। দলের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার। তার ব্যাটে চড়েই মূলত দেড়শ’র কোঠা পেরিয়েছে টাইগাররা।

আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়েছেন পেসার ফজলহক ফারুকী। এছাড়া স্পিন অলরাউন্ডার রশিদ খান ও মুজিব-উর রহমান দুটি করে উইকেট পেয়েছেন।

এমআই