এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবন
Share on:
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। দীর্ঘ জীবনে নানা অর্জনে সমৃদ্ধ এই রাজনীতিক।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী জিয়াউর রহমানের শাসনামলে উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। এর কিছুদিন পর ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০২ সালে সৃষ্ট এক বিতর্কিত ঘটনার জের ধরে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং পরে ২০০৪ সালের ৮ মে আরেকটি রাজনৈতিক দল বিকল্প ধারা বাংলাদেশ গঠন করেন।
তিনি একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। এছাড়া তিনি একজন লেখক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, উপস্থাপক ও সুবক্তা।
১৯৩২ সালের ১ নভেম্বর কুমিল্লা জেলায় নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সেইন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল থেকে ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী লন্ডনে অবস্থিত কারফিউ অ্যান্ড এডিনবার্গ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত কফিল উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ও খ্যাতনামা আইনজীবী। এছাড়াও তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের মন্ত্রী।
বি. চৌধুরী কর্মজীবন শুরু করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে নবীন অধ্যাপক হিসেবে। তিনি স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ষাটের দশকের শেষের দিকে জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘আপনার ডাক্তার’ এর উপস্থাপক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
১৯৭৭ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমানের সরকারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৭৯ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি জিয়াউর রহমান সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এ সময় তিনি স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
ড. চৌধুরী একজন প্রবীণ রাজনৈতিক ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। তিনি বিএনপির মনোনয়নে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিজ নির্বাচনি এলাকা মুন্সীগঞ্জ-১ আসন (সিরাজদিখান-শ্রীনগর) থেকে। বিভিন্ন সময়ে বিএনপির পাঁচবারের শাসনামলে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিএনপির জয়লাভের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ও পরে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব লাভ করেন এবং পদত্যাগের আগ পর্যন্ত (২১ জুন, ২০০২) দায়িত্বে বহাল ছিলেন। পদত্যাগের পর তিনি বিকল্প ধারা বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ড. চৌধুরী ব্যক্তিগত জীবনে হাসিনা ওয়ারদা চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। তার পুত্র মাহি বি চৌধুরী তরুণ রাজনৈতিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব। তার বড় মেয়ে ব্যারিস্টার মুনা চৌধুরী পেশায় একজন আইনজীবী এবং ছোট মেয়ে ডা. শায়লা শারমিন চৌধুরী পেশায় একজন চিকিৎসক। বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাজনীতি ও সমাজ উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৩ সালে দেশের সর্বোউচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। শ্রেষ্ঠ টিভি উপস্থাপক হিসেবে তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন পুরস্কারও লাভ করেন।
এনএইচ