দেড় মাস পর ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা
Share on:
দেড় মাস পর অবশেষে একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধিদের দীর্ঘ আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এরপর স্থগিত ও শিক্ষার্থীদের বর্জনে অনুষ্ঠিত না হওয়া টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। বৈঠকের এ সিদ্ধান্ত একাডেমিক কাউন্সিলও অনুমোদন করেছে।
আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১১ মে থেকে সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বুয়েটের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এর আগে আগামী সপ্তাহে পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি প্রকাশ করা হবে। আগামী ৬ জুনের মধ্যে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করার চিন্তা-ভাবনা করছে বুয়েট প্রশাসন।
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল এবং তা পরিচালনার জন্য যে আইনজীবী নিয়োগ করা হবে তা পছন্দ করবেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
লিখিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- গত ১ এপ্রিল সংবাদমাধ্যমে বুয়েটের ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আদেশ স্থগিত করার বিষয়ে হাইকোর্টের রুল জারি সম্পর্কিত আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ বরাবর ক্লাস প্রতিনিধিদের প্রস্তাব করা আইনজীবীদের তালিকা থেকে একজন আইনজীবী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী নিয়োগ দেবে। আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনার নিমিত্তে আইনজীবীর যাবতীয় খরচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা উপর্যুক্ত আইনি প্রক্রিয়ায় পক্ষভুক্ত হতে চান কি না, তা আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। শিক্ষার্থীরা পক্ষভুক্ত না হতে চাইলে তার কারণ উল্লেখ করবেন।
শিক্ষার্থীরা পক্ষভুক্ত হতে চাইলে আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য তাদের প্রস্তাব করা আইনজীবীর মধ্য থেকে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাছাই করা আইনজীবীর যাবতীয় খরচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। এক্ষেত্রে বুয়েট তার প্যানেলভুক্ত আইনজীবী হতে একজনকে বুয়েটের পক্ষে আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনার দায়িত্ব দেবে।
সব ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দলের প্রস্তাব শ্রেণি প্রতিনিধিরা বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর প্রেরণ করবে। শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদল নিয়োগকৃত/পক্ষভুক্ত আইনজীবীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করবেন। আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আপডেট নেবে এবং সব শিক্ষার্থীকে আপডেট দেবে।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে আলোচনায়। সেটা হলো- বুয়েট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নযোগ্য শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
তবে গত ২৭ মার্চ বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দেন। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেনকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন।
তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ মার্চ রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের আসন বাতিল করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। পরে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইমতিয়াজের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সেই জরুরি বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত।
এতে ক্যাম্পাসে আবার ছাত্ররাজনীতি চালুর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি চান না বলে সিদ্ধান্তে অটল। তাদের সঙ্গে একমত বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও।
এমএইচ