সবুজ পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি, ঝরছে রক্ত
Share on:
অস্ত্রের ঝনঝনানিতে আতঙ্ক বাড়ছে সবুজ পাহাড়ে। সম্প্রতি বান্দারবানে এক পাড়াপ্রধান ও তার চার ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একদিন পরই জেএসএসের এক সাবেক কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার কয়েকদিন আগে বান্দরবানের রুমা জোনের একটি টহল দলের সঙ্গে জেএসএস মূল দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ের ঘটনায় সেনাবাহিনীর একজন সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার নিহত হন। এসময় তিনজন সশস্ত্র সন্ত্রাসীও নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয় একজন সেনা সদস্য।
সম্প্রতি এ ধরণের কয়েকটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে পাবত্য অঞ্চলে। পাহাড়ে প্রাণহানির ঘটনা কিছুতেই থামছে না। প্রায় প্রতি মাসে একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে। এতে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন পাহাড়ের মানুষ। হিসাব মতে গত এক বছরে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলায় সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন। আর চলতি বছরের ফেব্রয়ারিতেই নিহত হন ১০ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতারাও হাতে তুলেছেন অস্ত্র। আত্মগোপনে থেকে চালাচ্ছেন শান্তিচুক্তি বিরোধী তৎপরতা। গহীন পাহাড়ে আধুনিক মারনাস্ত্র নিয়ে আঞ্চলিক নেতারা জোট বাঁধছেন নিজের দেশের বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে শঙ্কিত ও আতঙ্কিত পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষ। পাহাড়ে আসলে হচ্ছেটা কী, কারাই-বা দেশের বিরুদ্ধে করছে ষড়যন্ত্র; এসব প্রশ্ন হচ্ছে জোরালো।
জেএসএসের বাইরেও পাহাড়ে তৎপরতা বেড়েছে ইউপিডিএফসহ কয়েকটি সশস্ত্র দলের। তাদের উপস্থিতি ও চলাফেরায় ফের সন্ত্রস্ত অবস্থায় আছে বাংলাদেশের পার্বত্য জনপদ। একেবারে দুর্গম পাহাড়েও তাই লেগেছে চাপা উত্তেজনার আঁচ। তিন দেশের সীমান্তের সবচেয়ে কাছের পাড়া ধোপানীছড়া। ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত কারণে এই জায়গাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সশস্ত্র গোষ্ঠীর আনাগোনা বেশি বেড়েছে এর উত্তরের শিপ্রু পাড়া থেকে দক্ষিণে জারুছড়ি পাড়া পর্যন্ত। নতুন করে এলাকাগুলো দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে তারা।
জানা গেছে, দুর্গম এ সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ চলছে এবং বেড়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিওপি। সতর্ক নজরদারি আছে সেনাবাহিনীরও। তবে নানা প্রতিকূলতায় ভরা বিশাল এ জনপদকে নিশ্ছিদ্র রাখা সহজ কাজ নয়। জনসংহতি সমিতি (সন্তু), ইউপিডিএফ-প্রসিতসহ কয়েকটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সশস্ত্র অবস্থানের খবর পাওয়া যায় তিন পার্বত্য জেলার আরও অনেক গ্রামে। শান্তিচুক্তির পরে অস্ত্র যেভাবে জমা হওয়ার কথা ছিল, অস্ত্রগুলো সেভাবে জমা হয়নি।
সন্ত্রাসীদের কাছে এখনও সেসব অস্ত্র রয়ে গিয়েছে। নতুন অস্থিরতার শঙ্কায় বথি পাড়া, রুমার যে গ্রামে সবশেষ রক্ত ঝড়েছে। এখানকার মানুষের ভয়ের কারণ হচ্ছে চুক্তি ভেঙে আবারও আগের পথে যাচ্ছে হয়তো আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো। বথিপাড়ার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন, আমরা তো শান্তিতেই থাকতে চাই। পরিবার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ভাল থাকতে চাই। এ রকম অশান্তি কে চায় বলেন? আপনারা বা আমরা কেউই এমন অশান্তি চাই না।
শান্তিচুক্তির সময় আত্মসমর্পণ করা বেশ কয়েকজন আবারও অস্ত্র তুলে নিয়েছে হাতে। গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন সূত্রের আভাস মতে, দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বড় কোনো ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টা চালাচ্ছে তারা। বান্দরবান ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর সাধারণ সম্পাদক উবামং মারমা বললেন, বান্দরবানে জেএসএসের মূল ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের যে নেতৃবৃন্দ আছে এরা শক্তভাবে অবস্থান নিচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, যেখানে এভাবে হত্যা করা হয় সেখানে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন।
এদিকে গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী বাঘাইছড়ি রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার সমর বিকাশ চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ৪ মার্চ রাঙ্গামাটির লংগদুতে নদীতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হয় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ। ১ এপ্রিল রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়িতে সহকর্মীর গুলিতে জে এস এস এমএন লারমা দলের সশস্ত্র কমান্ডার বিশ্ব চাকমা ওরফে যুদ্ধ নিহত হন ।
১০ এপ্রিল রাজস্থলী সীমান্ত সড়কে ১ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয় । ১৫ জুন রাঙ্গামাটি জুরাছড়ি উপজেলার লুলাংছড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে কার্বারী (গ্রাম প্রধান) নিহত হন। ২০ জুন বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে এক যুবককে। ২৭ জুন খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ইউপিডিএফ’র কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে। ২৮ জুন বান্দনবানের নাইক্ষংছড়ির সীমান্তে অজ্ঞাত পুরুষের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।