কক্সবাজারে স্কুল শিক্ষার্থী ধর্ষণ, 'পর্যটক' তকমা না থাকায় অভিযুক্তরা অধরা ?
Share on:
'পর্যটক' তকমা না থাকায় ঘটনায় পক্ষকাল পার হলেও অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়নি। উল্টো মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ নিপীড়িত কিশোরী ও তার পরিবার।
কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে আটকে রেখে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনার রেশ না কাটতেই পর্যটন নগরীর আরেকটি হোটেলে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে।
তবে, 'পর্যটক' তকমা না থাকায় ঘটনায় পক্ষকাল পার হলেও অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়নি। উল্টো মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ নিপীড়িত কিশোরী ও তার পরিবার।
গত ১৩ ডিসেম্বর তুলে নিয়ে শহরের কলাতলীর একটি হোটেলে আটকে রেখে ওই কিশোরীকে দু'দিন ধর্ষণ করে বখাটে এক যুবক। গত ১৮ ডিসেম্বর এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় ৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
মামলা করার পর ১০দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ বলছে, অভিযুক্তরা পলাতক।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হালিম জানান, গত ১৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
আসামিরা হলেন, কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে মো. আশিক (২৭) ও তার মা রাজিয়া বেগম (৫৫), বাবা নজরুল ইসলাম (৬০), ভাই মো. কামরুল (৩৪) এবং শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকার মো. হায়দার ওরফে হায়দার মেম্বারের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (৪০)।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী (১৪) কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওই স্কুলছাত্রী এক প্রতিবেশীর বাড়িতে যাবার সময় অভিযুক্ত আশিকসহ ৩-৪ জন যুবক জোর করে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
পরে তাকে শহরের হোটেল-মোটেল জোনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে মমস্ গেস্ট হাউজে নিয়ে সেখানে তাকে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে।
অভিযুক্ত আশিকের স্বজনদের দাবি, ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে আশিকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আশিকের পরিবার সামাজিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মেয়েটির পরিবার তাতে রাজি ছিল না।
তবে ছাত্রীর অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে সে স্কুলে ও প্রাইভেটে আসা-যাওয়ার পথে আশিক প্রেম নিবেদন ও কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে রাজি না হওয়ায় আশিক ও তার সহযোগীরা মিলে তাকে উত্ত্যক্ত করত। ব্যাপারটি আশিকের বাবা-মাকেও জানানো হয়েছে।
মেয়েটি বলেছে, দুদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করার পর গত ১৫ ডিসেম্বর রাত ৮টায় আশিক ওই হোটেল থেকে বের হয়ে গাড়িতে তুলে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে কৌশলে সটকে পড়ে। পরে বাবা-মা তাকে উদ্ধার করে।
মেয়েটির বাবা বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়ে রাতেও না আসায় তাকে নানা স্থানে খোঁজাখুঁজি করি।
ঘটনার দুদিন পর গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয়রা আমার মেয়েকে আশিকের বাড়ির সামনে দেখতে পেয়ে খবর দেয়। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, তারা (আশিকের বাবা-মা) উলটো আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ঘটনার ব্যাপারে মামলা করলে বা আইনের আশ্রয় নিলে আমার মেয়েকে পুনরায় অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলবে।
এরপর কোনো উপায় না দেখে আমার মেয়েকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করি।
তিনি আরও বলেন, পরে গত ১৮ ডিসেম্বর এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মো. আশিকসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় এজাহার দায়ের করা হয়।
এখন, মামলা প্রত্যাহারের জন্য আসামিরা নানাভাবে হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে। গত দুদিন আগে অভিযুক্তদের একজন কামরুল আমার ঘরে এসে হুমকি দিয়ে যায়।
এ সময় মামলা প্রত্যাহার না করলে পরিবারের সদস্যদের চোখ উপড়ে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবী রিদুয়ান আলী বলেন, ভিকটিম কিশোরী শিক্ষার্থী পর্যটক না হওয়ায় শৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক সহযোগিতা পাচ্ছি না বলে মনে করছি।
অথচ গত ২২ ডিসেম্বর ধর্ষণের শিকার এক নারী নিজেকে পর্যটক হিসেবে উপস্থাপন করার গণমাধ্যম, প্রশাসন ও শৃংখলা বাহিনী তৎপর হয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। নিপীড়িত শিক্ষার্থী স্থানীয় বলে হয়তো সেই সহযোগিতা পাচ্ছে না।
আশিকের মা ও মামলার ২ নম্বর আসামি রাজিয়া বেগমের মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ করেন তার পুত্রবধূ শাহেনা আক্তার। তিনি বলেন, আশিকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়।
শাহেনা বলেন, তার দেবর আশিক ও ওই স্কুলছাত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। মেয়েটিকে বউ করে আনতে তারা রাজি। কিন্তু এতে মেয়ের পরিবার রাজি নয়।
মামলার দশদিন পরও কোন আসামি গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সদর থানার এসআই আব্দুল হালিম বলেন, মামলার তদন্তকাজ অব্যাহত রয়েছে।
আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আসামি গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, পর্যটক বিবেচনা নয়- নারীর প্রতি পাশবিকতাগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়।
কিন্তু স্কুল শিক্ষার্থীর মামলায় ছেলের সঙ্গে বাবা-মা, ভাই-বোন আসামি হওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে কার কতটুকু সম্পৃক্ততা তা বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগী প্রতিকার পাবার পাশাপাশি নিরহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় তাতে আমাদের সুক্ষ্ম নজর থাকে।
এইচএন