২৮ অক্টোবর ঢাকায় জামায়াতের মহাসমাবেশ
Share on:
আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সোমবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সভায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসার পর তারা জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ আজ রাজনৈতিক নেতৃত্বশূন্য। সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের কোনো নেতা যেন কথা বলতে না পারেন, তার জন্য নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে বিরোধীদলকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোদীদলের নেতাকর্মীরা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, তার জন্য মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনের প্রহসন করে আবারো ক্ষমতায় আসে। ২০১৪ সালে মূলত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৫৪টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে দেশের অর্ধেক মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো নির্বাচন ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে মধ্যরাতের পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতা দখল করে তারা। ২০১৮ সালের নির্বাচন মধ্যরাতের নির্বাচন হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। এই সরকার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের গভীর ষড়যন্ত্র করছে। ইতোমধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে সকল রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, আইনজীবী ও পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার সেদিকে কোনো কর্ণপাত করছে না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাহী পরিষদ লক্ষ্য করছে, গত ১৫ বছর ধরে বর্তমান সরকার দেশে হত্যা, নৈরাজ্য, গুম, খুন, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশকে এক অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশ একটি গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, ভোটাধিকারবিহীন, গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর মাত্র তিন মাস পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক দল হিসেবে আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ সকল রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং কেয়ারটেকার সরকারের দাবি মেনে নিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার তা অগ্রাহ্য করে অব্যাহতভাবে গণ-গ্রেফতার চালিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে গোটা জাতি আজ এক দফার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। এমতাবস্থায় সংসদ ভেঙে দিয়ে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর সর্বস্তরের জনশক্তি ও দেশবাসীকে সুশৃঙ্খলভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য নির্বাহী পরিষদ আহ্বান জানাচ্ছে।
মুজিবুর রহমান বলেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ মনে করে, রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাজনৈতিক দলসমূহের সভা-সমাবেশ ও মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করা। মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার যেন তারা প্রয়োগ করতে পারে, তার জন্য সহযোগিতা করা পুলিশের দায়িত্ব। তাতে বাধা দেয়া পুলিশের দায়িত্ব হতে পারে না। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে বিগত সময় ৫০ থেকে ৬০ বারেরও বেশিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করার সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। এই ভূমিকা থেকে বিরত থাকার জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ আগামী ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে সুশৃঙ্খলভাবে সমবেত হয়ে কেয়ারটেকার সরকারের এক দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সাথে কোনো ধরনের উস্কানি, অসাংবিধানিক ও গণতন্ত্র বিরোধী অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য নির্বাহী পরিষদ দেশবাসী এবং সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি