tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
শিক্ষা প্রকাশনার সময়: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:১৯ পিএম

রোজায় স্কুল খোলা: শিক্ষকরা নারাজ, খুশি অভিভাবকরা


school-20240210205727

শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ছুটির এ বদল নিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোজার প্রথম ১০ দিন প্রাথমিক এবং ১৫ দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রাখা হবে। হঠাৎ ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তে নারাজ শিক্ষকরা।


বছরের শুরুতে প্রকাশিত ছুটির তালিকায় পবিত্র রমজান মাসজুড়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার কথা ছিল। হঠাৎ তাতে সংশোধনী এনেছে সরকার।

শিক্ষকদের অভিযোগ, বছরের শুরুতে ৭৬ দিন ছুটি রেখে সরকার তালিকা প্রকাশ করেছে। তখন এটা নিয়ে শিক্ষকদের ‘বেশি ছুটি’ দেওয়া হচ্ছে বলে আমলারা নানান অভিযোগও তোলেন। অথচ তার মধ্য থেকে কাঁটছাট করে ছুটি কমিয়ে ফেলা হয়। আবার অবকাশ বিভাগের কর্মচারী হিসেবে অবসরের পর এর জন্য শিক্ষকরা আর্থিক সুবিধাও কম পান।

তবে ছুটি বাতিল করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিভাবকরা। কেউ কেউ এটিকে ‘ইতিবাচক’ বলছেন। আবার অনেক অভিভাবক রোজার মধ্যে ‘ছুটি থাকলেই ভালো হতো’ বলেও মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে অনেক এলাকায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এতে শিখন ঘাটতি হয়েছে। নতুন কারিকুলামে হাতে-কলমে শিক্ষায় জোর দেওয়ায় শিখন ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য রমজানে ছুটি কিছুটা কমানো হয়েছে।

রাজধানীর গভর্নমেন্ট সায়েন্স হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রাকিব। জানতে চাইলে তার মা রেবেকা সুলতানা বলেন, নতুন কারিকুলামে তো বাসায় পড়াশোনা বলে কিছু নেই। স্কুলেই সব কাজ। এজন্য স্কুল যত কম বন্ধ থাকবে, ততই ভালো। আমরা এটাকে ভালোই মনে করছি।

রাজশাহীর সরকারি পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ইফফাত জাহান। তার বাবা রেজাউল হক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, রোজার মধ্যে সব অফিস খোলা থাকে। স্কুল বন্ধ রাখার প্রয়োজন দেখি না। রোজা রেখে সব কাজ করতে পারাটাই প্রকৃত সিয়াম সাধনা। আমার মেয়েটা দুই বছর ধরে রোজা রাখে। আমি ওকে রোজা রেখে ক্লাস করতেই উৎসাহিত করি।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র শিহাব উদ্দিনের মা হাসনা বেগম রমজানে ছুটি রাখাই ভালো বলে মনে করেন। তিনি বলেন, রমজান মাসটা মুসলমানদের কাছে অন্য রকম একটা মাস। আমার ছেলেটা রোজা রাখে। সেহরি শেষ করে ওরা আমার ঘুমাতে চায়। অথচ সকাল ৭টায় স্কুলের জন্য বের হতে হয়। রাতে সেহরি শেষ করে ভোরে উঠে স্কুলে নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর। এজন্য রোজার মধ্যে ১৫টা দিন ক্লাস বন্ধ রাখলে খুব বেশি অসুবিধা হতো না।

প্রাথমিক শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক মু. মাহবুবর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষকরা অবকাশ সুবিধার বিভাগে চাকরি করি। এখানে অবকাশ সুবিধা রয়েছে বলেই চাকরি শেষে আমরা অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের চেয়ে কম সুবিধা পাই। অথচ দিনশেষে অবকাশের বিষয়টি থাকে না। শিক্ষকতা মানে সারা বছর শুধু স্কুলে উপস্থিত হওয়া নয়।

তিনি বলেন, ক্লাস নেওয়া ও শিক্ষার্থীদের শেখার বিষয়টি আনন্দময় হওয়া উচিত। এটা জোর করে চাপিয়ে দিয়ে আদায় করা সম্ভব নয়। আমরা রোজা রেখে ক্লাসে যাবো, যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবো। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী ধর্মীয় কারণে ছোটবেলা থেকেই রোজা রাখার চেষ্টা করে। অনেকে হাফ বেলা রোজা রেখে হয়তো আর পারে না। এমন অবস্থায় তারা স্কুলে আসতে চায় না। স্কুলে উপস্থিতি খুবই কম থাকে। ওই সময় যা শেখানো হবে, তা থেকে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে।

রাজধানীর একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, অষ্টম-নবম ও দশম শ্রেণির মুসলিম শিক্ষার্থীরা অনেকে রোজা রাখার চেষ্টা করে। ষষ্ঠ-সপ্তমের শিক্ষার্থীরাও অনেকে রোজা রাখে। এজন্য স্কুলে আসতে চায় না। রমজানে স্কুল খোলা রেখে খুব বেশি লাভ হয় না। আমরা মনে করি- পড়ালেখাটা মুখ্য নয়। সরকারের কিছু আমলারা এ সিদ্ধান্ত নেন। এটা শিক্ষকদের ওপর জুলুম করা ছাড়া আর কিছু নয়।

রোজায় স্কুল ছুটি নিয়ে শুধু এ দুজন শিক্ষক নয়, অনেকে সমালোচনা করেছেন। তারা সরকারের এমন সিদ্ধান্তে নাখোশ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মন্তব্য করেছেন। পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ছুটি কম-বেশি করা নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছেন অসংখ্য শিক্ষক।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয় সার্বিক দিক বিবেচনা করেই স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করার চেয়ে ক্লাসে শিক্ষকদের মনোযোগ দেওয়া উচিত। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভূমিকাটা বেশি। সেদিকেও তাদের নজর রাখতে হবে।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। মাধ্যমিক শাখার দুজন যুগ্ম-সচিব ও একজন উপ-সচিবের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তারা এ নিয়ে কোনো কথা বলবেন না বলে।

এসএম