জরুরি প্রয়োজনে বিনা টেন্ডারে ১৫ লাখ এমআরপি কেনা হচ্ছে
Share on:
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের জন্য ১৫ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বুকলেট ও ১৫ লাখ লেমিনেশন ফয়েল কেনা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বিনা টেন্ডারে এই ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
এই পরিমাণ পাসপোর্ট ও ফয়েল কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠান এই পাসপোর্ট ও ফয়েল সরবরাহ করবে।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় নীতিগত অনুমোদন নেয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। আজ মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রালয়ের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এই বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, ২০২৫ সাল পর্যন্ত এমআরপি চালু রাখার লক্ষ্যে ১৫ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বুকলেট এবং ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল ক্রয়ের লক্ষ্যে এর আগে ২০২৪ সালে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর কর্তৃক আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে পিডব্লিউপিডব্লিউ পোল্যান্ড এবং এইচআইডি সিআইডি, ইউকে নামে দু’টি বিদেশী প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন ৫৮ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার ৫৭২ টাকা দর দাখিলকারী প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউপিডব্লিউ পোল্যান্ডকে নির্বাচনের সুপারিশ করে। সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের অনুমতি দেয়ার জন্য বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর ২০২৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে সুরক্ষা সেবা বিভাগে প্রস্তাব পাঠায়।
সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের পাসপোর্ট ক্রয়প্রস্তাব এ বিভাগে বিবেচনাধীন থাকার সময় ইউএবি এলটি সিকিউরিটি কনসালট্যান্টস ভিলিনিয়াস, লিথুনিয়ার পক্ষে আইনজীবী হাসানুজ্জামান ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে কতিপয় অভিযোগসহ সুরক্ষাসেবা বিভাগ সচিবের কাছে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পরপর বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের জবাব এ বিভাগে পাওয়া পর্যন্ত আলোচিত ক্রয়প্রক্রিয়া কার্যক্রমে অতিরিক্ত কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে পাঠানো ২০২৪ সালের ৮ মে তারিখের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর লক্ষ্যে চেকলিস্ট অনুযায়ী আনুষঙ্গিক কাগজপত্র যাচাই করার সময় নজরে আসে যে, টেন্ডারটির বৈধতার মেয়াদ ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ উত্তীর্ণ হয়ে যায়।
এ অবস্থায় অধিদফতর কর্তৃক সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউপিডব্লিউ পোল্যান্ডের সাথে টেন্ডারের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনাকালে প্রতিষ্ঠানটি টেন্ডার দাখিলের সময় প্রদত্ত স্পেসিফিকেশন পরিবর্তনের প্রস্তাব করে। স্পেসিফিকেশন পরিবর্তনের প্রস্তাব টেন্ডার ডকুমেন্টের স্পেসিফিকেশনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় তা অগ্রহণযোগ্য বিবেচনায় পিপিআর অনুযায়ী টেন্ডারটি বাতিল করা হয়।
সূত্র জানায়,বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি মাসে গড়ে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়ে থাকে। বর্তমানে অধিদফতরের কাছে ৪ লাখ ৩ হাজার ৯৯৪টি পাসপোর্ট বুকলেট ও ৯১ হাজারটি লেমিনেশন ফয়েল মজুদ রয়েছে। বুকলেটের মজুদ চার মাসের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত হলেও লেমিনেশন ফয়েল দিয়ে মাত্র এক মাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
কিন্তু বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল একত্রে ব্যবহার্য হওয়ায় জরুরি বিবেচনায় ন্যূনতম চার মাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে। ৫ লাখ লেমিনেশন ফয়েল সরসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ১৫ লাখ বুকলেট এবং ১০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল ক্রয় করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট তারিখের অনুমোদিত দাফতরিক প্রাক্কলন অনুযায়ী ১৫ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বুকলেট এবং ১০ লাখ লেমিনেশন ফয়েলের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৭৬ কোটি ১৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের পাসপোর্ট বই ক্রয় খাতে (কোড নম্বর ৩২৫৫১০৩) প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রয়েছে বলে বিভাগটি থেকে জানানো হয়েছে।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরে মজুদকৃত পাসপোর্ট বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল সর্বশেষ টেন্ডারের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান এইচআইডি সিআইডি লি. ইংল্যান্ড কর্তৃক সরবরাহকৃত। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সাথে ২০২১ সাালের ২ এপ্রিল তারিখে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল তারিখে ৪ লাখ পাসপোর্ট এবং ৪০ লাখ বুকলেট সরবরাহ করে।
প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তির মেয়াদ ডিসেম্বর, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উত্তীর্ণ হয়েছে। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সর্বশেষ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এইচআইডি সিআইডি লিমিটেডের কাছ থেকেই সরাসরি পদ্ধতিতে ১৫ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বুকলেট এবং ১৫ লাখ লেমিনেশন ফয়েল ক্রয়ের প্রস্তাব করেছে।
এসএম