‘হানিট্র্যাপ’ কে এই সিলিস্তি রহমান?
Share on:
যার আরেক নাম সেলে নিস্কি। তিনি এখন রয়েছেন গোয়েন্দা জালে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে শুরু করেছে। এ ঘটনায় সামনে এসেছে সিলিস্তি রহমান নামে এক নারীর নাম।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপিকে হত্যার জন্য কলকাতার নিউটাউনে অভিজাত ‘সঞ্জীবা গার্ডেন্সে’ যে ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া হয়, সেখানে অবস্থান করেছিলেন ওই নারী। হত্যা মিশন ঘটিয়ে মূল ঘাতক আমানউল্লাহ আমানের সঙ্গে তিনি গত ১৫ মে দেশে ফেরেন। ওই নারীকে এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাদের হেফাজতে নিয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, এমপি আনার খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী সিলিস্তি রহমান। তার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
কলকাতা পুলিশও ফ্ল্যাট কম্পাউন্ডের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৩ মে ওই ফ্ল্যাটে তিনজন একসঙ্গে প্রবেশ করেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। এক দিন ফ্ল্যাটে অবস্থানের পর বের হয়ে আসেন এক পুরুষ ও এক নারী।
এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় নাম আসা নারী শিলাস্তি রহমান চেয়েছিলেন মডেল হতে। কিন্তু পুরান ঢাকার এই তরুণী বিত্তশালী আক্তারুজ্জামান শাহীনের খপ্পরে চলে যান অন্ধকার জগতে। মার্কিন পাসপোর্টধারী শাহীন দেশে এলেই ঘুরে বেড়াতেন তার সঙ্গে। বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিতেন শাহীনের ফ্ল্যাটে।
কলকতায় এমপি আনার খুন হওয়ার পর মাস্টারমাইন্ড শাহীনের বান্ধবী হিসেবে নাম আসে এই শিলাস্তি রহমানের, যার আরেক নাম সেলে নিস্কি। তিনি এখন রয়েছেন গোয়েন্দা জালে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৩ মে কলকাতায় এমপি আনার খুন করার পর ১৫ মে ঢাকায় চলে আসেন প্রধান কিলার আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরেন শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি রহমান। বিমানবন্দর থেকে চলে যান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শাহীনের অভিজাত ফ্ল্যাটে। এমপিকে খুন করে সফল হওয়ায় ওই রাতেই শাহীন সেখানে ফুর্তি পার্টির আয়োজন করেন। সেখানে মনোরঞ্জন করেন এই শিলাস্তি ওরফে সেলে নিস্কি। এর আগে ৩০ এপ্রিল শাহীনের সঙ্গে গিয়েছিলেন কলকাতায়। ১০ মে শাহীন দেশে ফিরলেও শিলাস্তিকে রাখা হয় কলকাতাতেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেছেন, এমপি আনার খুনের সময়ে এই শিলাস্তি কলকাতায় শাহীনের ভাড়া ফ্ল্যাটে অবস্থান করছিলেন। তবে যে ফ্লোরে হত্যাকাণ্ড ঘটে, সেখানে তিনি ছিলেন না। পরে হত্যার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এখন পর্যন্ত হত্যায় সরাসরি তার সম্পৃক্ততা মেলেনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিলাস্তির গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। তবে তিনি বড় হয়েছেন পুরান ঢাকায়। অবশ্য বিত্তশালীদের ডেরায় গিয়ে নিজেও এখন থাকেন উত্তরার অভিজাত ফ্ল্যাটে।
ওই সূত্র জানায়, এই শিলাস্তিকে দিয়েই এমপি আনারকে কলকাতা নেওয়ার ফাঁদ পাততে পারেন খুনের মাস্টারমাইন্ড শাহীন। হয়তো ওই হানি ট্র্যাপেই পা দিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন এমপি আনার। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চললে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে অকাট্য তথ্য মেলেনি।
দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোনো সংসদ সদস্য দেশের বাইরে গেলে জাতীয় সংসদ সচিবালয়কে তা অবহিত করার নিয়ম রয়েছে। তবে আনার এক্ষেত্রে তা হয়েছিল কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। তাছাড়া কলকাতায় যে ফ্ল্যাটে খুন, সেখানেও তিনি স্বাভাবিকভাবে গিয়েছেন বলে এখন পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। তার সঙ্গে গাড়িতে এক নারীও ছিল। সেই নারী শিলাস্তি কি না, তদন্ত চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৩ মে এমপি আনার যখন কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনের ৫৬ বিইউ নম্বরের ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাটে যান, তখন খুনিদের সঙ্গে শিলাস্তিও ছিলেন সেখানে। ভবনে প্রবেশ করে তিনি অবস্থান নেন তৃতীয় তলায়। নিচতলায় আনারকে হত্যা করা হয়। হত্যার কিছু সময় পর তার লাশ কয়েক খণ্ডে ভাগ করে ফেলা হয়।