tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ১৬ জুন ২০২৪, ২০:৫৭ পিএম

ইরানের নির্বাচনে কে হবেন নতুন প্রেসিডেন্ট?


iran-presidential-candidates-20240616204117

ইরানে আগামী ২৮ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মে মাসে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।


দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, কোনো প্রেসিডেন্ট মারা গেলে নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে নির্বাচন দিতে হবে পরবর্তী ৫০ দিনের মধ্যেই। ফলে দলগুলো নিজেদের প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার জন্য খুবই কম সময় পায়।

ইরানের প্রভাবশালী রক্ষণশীল দলগুলোর মধ্যে এখন চূড়ান্ত প্রার্থী নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাছবিচার চলছে। কিন্তু আগের জাতীয় নির্বাচনে প্রচুর পরিমাণ প্রার্থিতা বাতিল হওয়া এবং প্রশাসন যেভাবে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে অনেক সংস্কারপন্থী দল ও নেতারা এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

  • প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে আছেন কারা?

অনেক পর্যবেক্ষকই ইরানের নির্বাচন অবাধ বা প্রতিযোগিতামূলক হবে এমনটি মনে করেন না। কারণ প্রার্থীর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত প্রভাব থাকে।

গার্ডিয়ান কাউন্সিল, যা ইরানের রাজনীতিতে একটি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে, তারা সংসদ, প্রেসিডেন্সি এবং অ্যাসেম্বলি বিশেষজ্ঞদের নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা বাছাই করে এবং এবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত ৮০ জনের মধ্যে ছয়জনের প্রার্থিতা অনুমোদন করেছে।

  • মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ

মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ। তার বয়স ৬২ বছর। গত চার বছর ধরে তিনি ইরানের সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তিনবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে দুবার হেরে গেছেন এবং ২০২১ সালে ইব্রাহিম রাইসির পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।

তিনি দীর্ঘদিন উচ্চপদস্থ সামরিক দায়িত্ব পালন করেছেন এবং রাজধানী তেহরানের মেয়র হিসেবে রেকর্ড ১২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।

  • আমিরহোসেন গাজিজাদে হাসেমি

আমিরহোসেন গাজিজাদে হাসেমি (৫৩)। তিনি পেশায় একজন নাক, কান ও গলার সার্জন। তিনি একজন ইরানিয়ান রক্ষণশীল আদর্শের বাজনীতিক। এর আগে চারবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর আগে ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। প্রায় ১০ লাখের কম ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন তিনি। তবে সেবার প্রায় ৪০ লাখ ভোট বাতিল হয়।

  • সাঈদ জালিলি

আরেক প্রার্থী সাঈদ জালিলি। ৫৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দেশটির এক্সপিডিয়েন্সি ডিসার্নমেন্ট কাউন্সিলের সদস্য। এর আগে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি ছিলেন এবং চার বছরের জন্য ইরানের পারমাণবিক মধ্যস্থতাকারী দলের নেতৃত্ব দেন তিনি।

অতীতে দু’বার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়েছেন এবং ২০২১ সালের নির্বাচনে তিনিও ইব্রাহিম রাইসির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে সরে দাঁড়ান।

  • মাসউদ পেজেশকিয়ান

মাসউদ পেজেশকিয়ান। ৭০ বছর বয়সী পেজেশকিয়ান একজন হার্ট সার্জারি বিশেষজ্ঞ। তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং চার বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন।

তিনি একগুঁয়ে স্বভাবের জন্য পরিচিত। ইরানের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং দুর্নীতির প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন অনেকবার।

সবশেষ ২০২২ সালে পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর বিষয়ে ইরান সরকারের ভূমিকাকে প্রকাশ্যে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তিনি এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংস্কারপন্থী দলের একমাত্র আনুষ্ঠানিক প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত।

ফলে অনেকেই পেজেশকিয়ানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন পাওয়াকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি হিসেবে দেখছেন।

  • মোস্তফা পুরমোহাম্মদী

মোস্তফা পুরমোহাম্মদী, ৬৫ বছর বয়সী রাজনীতিবিদ। ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে গার্ডিয়ান কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত একমাত্র ধর্মগুরু। তিনি ১৯৮৮ সালে রাজনৈতিক বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর তদারকি করার জন্য পরিচিত ডেথ কমিটিতে ভূমিকার জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রাইসিও ছিলেন।

  • আলিরেজা জাকানি

আলিরেজা জাকানি, ৫৯ বছর বয়স। তিনি গত তিন বছর ধরে তেহরানের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত।

তিনি বিপ্লবী গার্ডের সহযোগী বাহিনী বাসিজের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং চারবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

  • বাদ পড়ছেন কারা?

আগের নির্বাচনগুলোর মতো, দেশটিতে আগে থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কিছু সুপরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তির প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার বিষয়টা ইরানের রাজনৈতিক মহলে এখন ভীষণ আলোচিত একটি বিষয়।

মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কলেজ অব আর্টস, সায়েন্সেস অ্যান্ড এডুকেশনের ডিন ইরান বিশেষজ্ঞ মেহরজাদ বোরুজেরদি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এবং সাবেক স্পিকার আলী লারিজানির বাদ পড়া সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত।

তিনি বলেন, আহমাদিনেজাদের আট বছরের প্রেসিডেন্ট পদে থাকার অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও এবং সর্বোচ্চ নেতার একটি প্রভাবশালী উপদেষ্টা সংস্থা এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলে তার বর্তমান অবস্থান থাকা সত্ত্বেও তাকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

যদিও একসময় আহমাদিনেজাদ আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রিয়পাত্র বলে বিবেচিত ছিলেন। কিন্তু তার দ্বিতীয় মেয়াদের শেষের দিকে তিনি সর্বোচ্চ নেতার আস্থা হারান। বোরুজেরদি বলেন, ‘‘একইভাবে আলি লারিজানি, সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাবেক মন্ত্রী, সংসদের স্পিকার এবং সেক্রেটারি হিসাবে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ভিত্তি থাকা অন্য আরেকটি এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য, তিনিও অযোগ্য ঘোষিত হন।’’

বারবার তাদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়াটা প্রমাণ করে যে তাদের রক্ষণশীলতার ধরন আর সুপ্রিম লিডার এবং গার্ডিয়ান কাউন্সিল পছন্দ করছে না। কিন্তু কারণ কী?

অনেক বিশেষজ্ঞই গার্ডিয়ান কাউন্সিলের এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাথে আগের নির্বাচনগুলোর পদ্ধতির কোনো পরিবর্তন দেখছেন না।

কাউন্সিল সাধারণত সংস্কারপন্থী-মধ্যপন্থী শিবির থেকে একটি বা দুটি নাম অনুমোদন করে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ নাম রক্ষণশীল শিবির থেকে থাকে। ‘‘মধ্যপন্থী দলগুলো থেকে একমাত্র প্রার্থী হলেন মাসউদ পেজেশকিয়ান। যার প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে হতাশ জনগণকে ভোট দিতে উৎসাহিত করা,’’ বোরুজেরদি ব্যাখ্যা করেন।

‘‘যদি তিনি এতে সফল হন, তাহলে প্রধান লড়াইটা আশা করা হচ্ছে তার এবং বর্তমান সংসদের স্পিকার ও সরকারের আস্থাভাজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ বাকের কালিবাফের মধ্যে হবে।’’

ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ইরানি বংশোদ্ভূত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হতে হবে এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নীতি ও দেশের সরকারি ধর্মের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে। তবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত কয়েক দশকে, সরকার গার্ডিয়ান কাউন্সিলকে বারবার ব্যবহার করেছে সেইসব ব্যক্তিদের অযোগ্য ঘোষণা করতে, যাদের সম্ভাব্য কার্যক্রম বা নীতিগুলো সর্বোচ্চ নেতার নীতি থেকে ভিন্ন হতে পারে।

গার্ডিয়ান কাউন্সিল ছয়জন ধর্মগুরু এবং ছয়জন আইনজীবী নিয়ে গঠিত। সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে সর্বোচ্চ নেতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এই কাউন্সিল। যিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ছয়জন ধর্মগুরুকে নিয়োগ করেন। ছয়জন আইনজীবী নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত বিচার বিভাগের প্রধান সংসদে নির্বাচিত প্রার্থীদের একটি তালিকা উপস্থাপন করেন।

যারা ইরানের নির্বাচনকে সাজানো বলে বর্ণনা করেন তারা প্রার্থীর এই স্বেচ্ছাচারী অনুমোদন প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করেন।

  • নারীরা কি নির্বাচনে লড়তে পারবেন?

নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত পাঁচ দিনের মধ্যে, চারজন নারী প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। প্রথমবারের মতো, তাদের মধ্যে দু’জন রক্ষণশীল শিবির থেকে, একজন সংস্কারপন্থী এবং চতুর্থজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন।

যদিও এই চারজন নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। কিন্তু সংবিধানে যে বলা আছে প্রেসিডেন্টকে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক পুরুষদের মধ্য থেকে নির্বাচন করতে হবে— সেটা মূলত আরবি শব্দ ‘রিজাল’-এর প্রচলিত অনুবাদের ভিত্তিতে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১৩টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কখনো কোনো নারীকে প্রার্থী হতে অনুমোদন দেওয়া হয়নি; যা অধিকার কর্মীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিতর্কের উৎস হয়ে উঠেছে।

অনেক নারী অধিকারকর্মী যুক্তি দেন যে ‘রিজাল’ আরবিতে ‘পুরুষ’ অর্থে ব্যবহৃত হলেও, ফারসিতে এটি ‘প্রখ্যাত ব্যক্তি’ অর্থেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই অধিকারকর্মীরা যুক্তি দেন যে সংবিধান লেখার সময়কার উদ্দেশ্য ছিল ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’, বিশেষভাবে পুরুষ নয়।

  • সাম্প্রতিক আন্দোলন কি ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে?

প্রায় দুই বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাশা আমিনির মৃত্যু ঘিরে ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক প্রতিবাদের পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, ইরানের নারী, জীবন ও স্বাধীনতা নিয়ে আন্দোলনের সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৫৫১ জন প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন; যাদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ হন।

ইরান সরকার যে শুধু কঠোর দমন-পীড়ন যাতে যা বহু প্রতিবাদকারীর মৃত্যু এবং গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে, সেসবের দায় নিতে ব্যর্থ হয়েছে সেটাই নয়। বলং পরবর্তীতে তারা যে কারণে মাশা আমিনিকে আটক করা হয়েছিল, সেই সরকার অনুমোদিত হিজাব ছাড়া জনসমক্ষে উপস্থিত নারীদের পুনরায় গ্রেপ্তার ও শাস্তি দেওয়া শুরু করে।

কর্তৃপক্ষের এই আচরণে অনেক ব্যক্তি এবং দল যারা আগে সরকারের সংস্কার করার উদ্দেশ্যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তারা যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বর্জনের আহ্বান জানান। এই রাজনৈতিক বয়কটের প্রভাব পড়ে গত মাসে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে, যখন সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কেবল ৪১ শতাংশ যোগ্য ভোটার ভোট দিয়েছিলেন; যা ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতি।

সরকারের ভোটার-মোট ভোটার উপস্থিতির পরিসংখ্যান এসবের কোনোটাই বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না। সংসদ এবং বিশেষজ্ঞ পরিষদের নির্বাচনে, জাতীয় আইডি কার্ড ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানে বহু প্রতিবেদনে জানা যায়, ভোটারকে না জানিয়েও তাদের আইডি নম্বর ব্যবহার করে ভোট দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ভোটাররা জানান, তারা ভোট দিতে পারেননি।

  • নতুন প্রেসিডেন্ট কি কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন?

অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, ইরানের শাসন ব্যবস্থার যে সার্বিক দিক তা প্রেসিডেন্ট দ্বারা চালিত হয় না, বরং সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং তার অধীনে থাকা শক্তিশালী সংস্থাগুলো এটি নিয়ন্ত্রণ করে।

সে কারণে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি না চাইলে রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তনের খুব একটা সম্ভাবনা নেই। বেশিরভাগ বিশ্লেষকের বিশ্বাস, ইরানের পারমাণবিক গবেষণা বিষয়ে নতুন করে চিন্তা করা বা ইরানের দ্বারা ইসরায়েলের স্বীকৃতি এসব পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনার ক্ষমতা কেবল এককভাবে নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে থাকবে না।

কারণ এসব বিষয়ে সবসময় সর্বোচ্চ নেতা তার প্রভাব ও কর্তৃত্ব বজায় রাখবেন। একইভাবে খামেনির অনুমতি ছাড়া কোনো প্রেসিডেন্ট নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব বা এরকম কোনো রাষ্ট্রীয় বিষয়েও পরিবর্তন আনতে পারবেন বলে মনে হয় না। তার ওপর গার্ডিয়ান কাউন্সিল অনুমোদিত চূড়ান্ত যে তালিকা দেখা যাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগেরই আসলে এসব পরিবর্তনের পক্ষে থাকার সম্ভাবনাও কম।

‘‘নতুন প্রেসিডেন্ট যেই সিদ্ধান্তই নেবে সেটাই আসবে আসলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে,’’ বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ সাফিরি।

  • পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা কে বাছাই করবে?

ইরানের ভবিষ্যত কি আসন্ন নতুন প্রেসিডেন্টের হাতেই? আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বয়স ৮৫ বছর হয়ে গেছে। তাই তার জায়গায় কে আসবে সে প্রশ্ন এখন স্বাভাবিকভাবেই উঠে যায়। ইরানের সংবিধান অনুসারে, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বাছাইয়ের দায়িত্ব বিশেষজ্ঞ অ্যাসেম্বলির ওপর।

যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী নেতা বাছাইয়ে প্রেসিডেন্টের কোনো ভূমিকা থাকে না। তারপরও যদি কোনো কারণে সর্বোচ্চ নেতা মারা যান, তাহলে ওই অস্থির সময়ে প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। সবমিলে এটা পরিষ্কার, সংবিধান যে দায়িত্ব অর্পণ করে প্রেসিডেন্টকে, গত চার দশকে আসলে প্রেসিডেন্টের সেসব কাজ সীমিত হয়ে এসেছে।

‘‘আয়াতুল্লাহ খামেনি গত ৩৫ বছর ধরে যেভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো সাজিয়েছেন, তাতে আসলে তিনি মারা যাওয়ার পরও যিনিই প্রেসিডেন্ট হিসেবে আসুন, এসব প্রতিষ্ঠানই তাদের নিজেদের মত করে দেশকে পরিচালিত করতে পারবে, বলেন সাফিরি। তিনি বলেছেন, ‘‘এটা অনেকটা পূর্বাঞ্চলের কমিউনিস্ট দলগুলোর মতোই হবে।’’ বিবিসি বাংলা।

এমএইচ