কিশোরদের ওপর অনলাইন গেমসের ভয়াবহ প্রভাব
Share on:
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী: পৃথিবীতে বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে আগামী প্রজন্মকে মানবিক বৈশিষ্ট্যে পরিশুদ্ধ করার কতটুকু দায় আমরা বহন করছি, তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। ভিন্নমাত্রায় নানামুখী অপরাধ, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন অপরাধের বিষয়গুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও তদারকির আওতায় আনা অপরিহার্য।
আমাদের অনেকেরই জানা আছে, প্রথম ভিডিও গেমসের আবিষ্কার হয় ১৯৪০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। পরে সত্তর-আশির দশকের মধ্যে এটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথম বাণিজ্যিকভাবে নির্মিত আর্কেড টাইপের ভিডিও গেমটির নাম ছিল কম্পিউটার স্পেস। এরপর বাজারে আসে আটারি কোম্পানির বিখ্যাত গেম পং।
পর্যায়ক্রমে আটারি, কোলেকো, নিনটেনডো, সেগা ও সনির মতো বহুজাতিক ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলো বিভিন্ন উদ্ভাবন-প্রচার-প্রসারে পৃথিবীজুড়ে প্রত্যন্ত এলাকার সব মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন গেম। ২০০০ সালে সনি কোম্পানির এক জরিপে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চারটি বাড়ির একটিতে একটি করে সনি প্লে স্টেশন ছিল।
একই কোম্পানির ২০০৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শতকরা ৬৮ ভাগ আমেরিকানের বাড়ির সব সদস্যই ভিডিও গেম খেলে সময় অতিবাহিত করত। ক্রমান্বয়ে কম্পিউটার ও ভিডিও গেমস বিশ্বের অন্যতম লাভজনক ও দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পে পরিণত হয়ে আজ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, সমগ্র বিশ্বে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে ভিডিও গেম খেলে থাকে, যাদের অধিকাংশই অল্প বয়সি শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণী। মূলত তাদের কারণেই গ্লোবাল ভিডিও গেম বাজারের আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ১০৯ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী সেক্টর হচ্ছে মোবাইল গেমিং। এ ছাড়া স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট গেমিং প্রতিবছর ১৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও ওই সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমান সময়ের আলোচিত অনলাইন গেমসের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে পাবজি (প্লেয়ার্স আননোন ব্যাটেল গ্রাউন্ড)। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতীয় উপমহাদেশে কয়েকগুণ বেড়েছে এ গেমের জনপ্রিয়তা। বিশ্বব্যাপী এখন প্রতি মাসে প্রায় ২২ কোটি ৭০ লাখ এবং প্রতিদিন প্রায় ৮ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এ গেম খেলে থাকে।
বাংলাদেশে প্রতিদিন এ গেম খেলছে আনুমানিক প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। দেশের শিশু-কিশোর-তরুণদের ওপর ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ পরিচালিত জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২ কোটি ৬০ লাখ ছাত্র-তরুণ নিয়মিত বিভিন্ন অনলাইন গেম খেলে থাকে। অনলাইন গেমের বাজার গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ‘নিউজুর’-এর তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় অনলাইন গেমের বাজারে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
এতেই প্রতীয়মান হয় দেশের শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবকদের মধ্যে অনলাইন গেম আসক্তি কোন পর্যায়ে রয়েছে। সাধারণত মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতার কারণে এবং ইন্টারনেট হাতের নাগালে থাকায় পাবজি আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অন্যান্য ব্যাটেল রয়্যাল গেমের মতো পাবজিও অনেক বেশি হিংস গেম এবং এর ভয়াবহতা এত বেশি যে এর প্রভাবে শিশু-কিশোরদের মাঝে এক ধরনের ক্ষিপ্রতা সৃষ্টি হয়। এ গেমটির ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে-চরম সহিংসতা, আসক্তি সৃষ্টিকরণ, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া হ্রাস, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি, ঘুমে ব্যাঘাত, বিভিন্ন কাজ করার সময় কমে যাওয়া ইত্যাদি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব গেমে আসক্তির কারণে কিশোররা পারিবারিক-সামাজিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। খেলার এক পর্যায়ে এসে তারা ভায়োলেন্ট হয়ে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গবেষণামতে, ভিডিও গেমে আসক্তি এক ধরনের মানসিক রোগ। ভিডিও গেমগুলো খেলোয়াড়ের ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অতিরিক্ত হিংস্রতার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে পাবজি গেম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ উপমহাদেশে প্রথম এ গেমটি নিষিদ্ধ করে ভারত। প্রথম পর্যায়ে মাত্র দুটি রাজ্যে নিষিদ্ধ করা হলেও পরে আরও কয়েকটি প্রদেশে নিষিদ্ধ করা হয় এ গেম। ভারতের পর নিষিদ্ধ হয় নেপালে। এ ছাড়া চীন, ইরাক, জর্ডানে হিংস্রতার অভিযোগে গেমটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশে ২০২১ সালের ২৪ জুন সব অনলাইন প্ল্যাটফরম থেকে অবিলম্বে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ সব ক্ষতিকর গেম বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় অনলাইন প্ল্যাটফরম থেকে পাবজি খেলা বন্ধের রায় প্রত্যাহার চেয়ে পাবজি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের করা আবেদন ২০ এপ্রিল ২০২২ খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিশ্বব্যাপী ইতঃপূর্বে ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান, মনস্টার হান্টার ওয়ার্ল্ড, ডাটা টু, ভাইস সিটি এবং হাঙ্গারগেমসহ নাম না জানা অসংখ্য গেমে মানুষের ভীষণ আসক্তি ছিল। কল্পনার জগতে গিয়ে গেমের প্রিয় চরিত্রের নায়কের সাক্ষাৎ লাভের জন্য ২৪ তলা ভবনের ছাদ থেকে কিশোরের লাফিয়ে আত্মহত্যা করা, অতিরিক্ত গেম খেলায় বাবার বকুনি খেয়ে অভিমানী তাইওয়ানি কিশোরের নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া, একটানা ২৪ ঘণ্টার লাইভ ভিডিও গেম খেলতে খেলতে ২২ ঘণ্টার মাথায় যুবকের মৃত্যুবরণ, অনলাইন ভিডিও গেমের টাকা জোগাড় করতে ১৩ বছরের ভিয়েতনামি কিশোর কর্তৃক ৮১ বছরের বৃদ্ধাকে রাস্তায় শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার মানিব্যাগ চুরি এবং লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলা, চীনা দম্পতির কম্পিউটার গেমের অর্থের জন্য নিজেদের তিন সন্তানকে ৯ হাজার ডলারে বিক্রি করে দেওয়াসহ বহু মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক গেমাসক্তির ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিলক্ষিত হয়েছে।
এ ছাড়া গেমসের কারণে সারা বিশ্বে বিবাহ বিচ্ছেদ, চাকরি হারানো, মারমুখী আচরণ, বাবা-মার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, অল্পতেই ধৈর্যহারা হয়ে পড়া, ইন্টারনেট না থাকলে অথবা মোবাইল বা কম্পিউটারের চার্জ ফুরিয়ে গেলে অস্থির-আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ার ঘটনা চোখে পড়ার মতো।
বাংলাদেশেও এ ভয়ংকর অনলাইন গেমের প্রভাবে সৃষ্ট নানা অঘটনের চিত্র প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। ২০২১ সালের ২৭ জুলাই মাগুরা সদরে পাবজি-ফ্রি ফায়ার খেলা ও অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের বিরোধের জেরে এক কিশোর বন্ধুর হাতে আরেক কিশোর নিহত হয়। একই বছরের অক্টোবরে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ইন্টারনেটে পাবজি গেম খেলাকে কেন্দ্র করে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ১৬ বছরের অপর কিশোর। ১১ মার্চ ২০২২ খুলনার নিউমার্কেট এলাকায় রেললাইনে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে পাবজি গেম খেলার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও রেললাইনের পাশে বসে পাবজি খেলায় বিভোর এক যুবক পুলিশের তাড়া খেয়ে ট্রেনে ধাক্কা লেগে মৃত্যুবরণ করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের লাহোরে পাবজি আসক্ত ১৪ বছর বয়সি এক কিশোরের বিরুদ্ধে তার মা, ভাই ও দুই বোনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় অনলাইনে গেম খেলার কারণে কিশোরটির কিছু মানসিক সমস্যা তৈরি হয়েছিল।
বিশ্বখ্যাত দার্শনিক সিগমুন্ড ফ্রয়েড মনঃসমীক্ষণ অনুধ্যানে মানব মনের তিনটি স্তর বা সজ্ঞান, অর্ধ-সজ্ঞান ও নির্জ্ঞান স্তরের ব্যাখ্যায় বলেছেন, সজ্ঞান বা চেতন স্তরে ব্যক্তি মানুষ চিন্তাভাবনা ও ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে পরিপূর্ণ সচেতন থাকে। এ স্তরে নিরন্তর কর্মশীল থাকে অন্তরের অগোচরে অবদমিত কামনা-বাসনা ও ইচ্ছার অফুরন্ত নির্যাস। দ্বিতীয় অর্ধজ্ঞান বা অবচেতন স্তরে নানা ঘটনা, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদি কারণে-অকারণে সাময়িক বিস্মৃত হলেও সুকৌশল অবলম্বনে তা মনের সজ্ঞান স্তরে ফিরিয়ে আনা যায়।
তৃতীয় স্তরের ক্ষেত্রে প্রেষণা ও নানামুখী প্রেরণা সম্পর্কে মানব হৃদয় সজাগ থাকে না এবং লুকায়িত ইচ্ছা-আগ্রহ-স্মরণ পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় না। মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড ব্যক্তিত্ব কাঠামোর উন্নয়নে কিছু মৌল উপাদান ও অধিসত্তার বিশ্লেষণে মানুষের সহজাত জৈবিক প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ করেছেন। আদিম সত্তার সঙ্গে পরিবেশের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায় জন্ম নেওয়া বিবেক বা বাস্তবতাবোধ, আদর্শবোধ তথা শুভ-অশুভ, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, সুন্দর-অসুন্দরের বিভাজিত যুক্তি-জ্ঞান প্রচলিত মূল্যবোধ ও অনুসৃত পরিশুদ্ধ বিবেকের সমন্বয় ঘটিয়ে থাকে।
সমাজের সদস্য হিসাবে মানুষ সামাজিক মূল্যবোধ শুধু লালন-পালন করে না; প্রকৃষ্ট পরিচর্যায় বিপরীতপন্থি কর্মযজ্ঞে স্বকীয় সত্তাকে বিলীন করতেও চায় না। এ স্বাভাবিক ও সাবলীল সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে অবজ্ঞা করা হলেই বিচ্যুত আচরণের মনোবৃত্তি বৈপরীত্য সচলতায় সমাজকে কলুষিত করে তোলে।
কঠিন সত্য হচ্ছে, শিশু-কিশোররা সহিংস সিনেমা বা গেম ইত্যাদির চরিত্রগুলোর সঙ্গে মিশে গিয়ে নিজেরাই সে চরিত্ররূপে আবির্ভূত হয়। গেমের চরিত্রের কর্মকাণ্ড তাদের বাস্তব জীবনে ঘটাতে ইচ্ছা জাগে। অনলাইন গেমিংয়ে অস্ত্রের নানারকম ব্যবহার, দ্রুতগতিতে প্রতিপক্ষকে মেরে ফেলার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান, বোমা মেরে ত্রাস সৃষ্টি করে মজা দেখা ইত্যাদি সহিংস আচরণ শিশু-কিশোরদের মনে গেঁথে যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে এক সহিংস জগৎ, যা থেকে তারা আর বের হতে পারে না। প্রচলিত সমাজের নানা সমস্যার সমাধানে তার মধ্যে জাগরিত হওয়া সহিংস আচরণে জড়িয়ে নিজেকেই বিপদে ফেলে দেয়।
এমনটি আমাদের সমাজেও প্রতিফলিত। এভাবেই বিশ্ব আজ অনলাইন গেমিংয়ের কালো থাবায় আক্রান্ত। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর অপরাধ বা কিশোর গ্যাং অপসংস্কৃতি সমাজের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগর-শহর-জেলা-উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এ অপসংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, গবেষণার ফলাফল ও জনশ্রুতি অনুযায়ী, পারিবারিক-সামাজিক-ধর্মীয় অনুশাসনের অপচর্চা, অপরাজনীতির কদর্য প্রভাব বা আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টা, অনৈতিক-অবৈধ পন্থায় বিভিন্ন দল-প্রতিষ্ঠানে কুৎসিত অর্থ ও তদবির বাণিজ্যের আড়ালে অন্ধকারের শক্তির বশংবদদের নানাভাবে পদ-পদায়ন এবং তাদের আনুকূল্যে সন্ত্রাস-মাদক ব্যবসা-দুর্নীতির ভয়াবহতায় কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ড অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গণমাধ্যম সূত্রমতে, গত ১০-১১ বছরে রাজধানীতে ঘটে যাওয়া আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই কিশোর অপরাধীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের প্রতিটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ এবং এদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদারদের নেতৃত্বে এরা বড় ধরনের চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, যৌন হয়রানি এবং মাদক বিক্রির মতো কাজে যুক্ত হচ্ছে। এর পেছনে কখনো কখনো কাজ করে শক্তিশালী সন্ত্রাসী ও অপরাধী চক্র।
সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যরা ছিন্নমূল পরিবারের কিশোরদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের অর্থের প্রলোভনে নিজেদের দলে টানে। বুদ্ধিমান ও সাহসী কিশোরদের চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ছোটখাটো অপরাধের বাইরেও লোভনীয় অর্থের বিনিময়ে মাদক বিক্রি, অস্ত্র ও বোমা বহনের মতো বিপজ্জনক কাজে ব্যবহার করা হয়। অর্থের প্রলোভনে পড়ে কিশোররা এক সময় অপরাধের স্থায়ী সদস্যে পরিণত হয়।
কিশোর অপরাধ নির্ধারণে কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণি-পেশাকে বিবেচনায় না নিয়ে সামগ্রিকভাবে তাদের মধ্যে আদর্শের শিক্ষা দেওয়া একান্ত আবশ্যক। দেশপ্রেমিক-সৎ-যোগ্য-মেধাবী-নীতি-নৈতিকতায় ঋদ্ধ ব্যক্তিদের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত দিয়ে কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা দূর করা যেতে পারে। তাদেরকে পাঠ্যবই ও অন্যান্য বিষয়ে রচিত পুস্তকসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা গেলে এই ভয়ংকর অপসংস্কৃতির অবসান হবে, নিঃসন্দেহে তা বলা যায়।
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
এইচএন