স্বৈরাচারী শাসন চলছে বাংলাদেশে : রিজভী
Share on:
বাংলাদেশে এখন ‘উত্তর কোরিয়ার মতোই একদলীয় শাসন’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন-গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে এই অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, এটা শুধু একটি একদলীয় দেশ নয়, নিষ্ঠুর একদলীয় দেশ, এখানে সেই রকম একদলীয় শাসন চলছে। উত্তর কোরিয়ার সাথে বাংলাদেশ এখন আর কোনো পার্থক্য নেই… একাকার হয়ে গেছে।
কথা বলা মানে হচ্ছে সে অদৃশ্য হয়ে যাবে, লাশ হয়ে পড়বে। কয়েকদিন আগে যুবদলের এক ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার দুই-তিন দিন পর তার লাশ পাওয়া গেছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের চিত্র।
রিজভী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২০৬ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।
গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দিয়ে এরপর থেকে সারা দেশে ১৩ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। এ সময়ে ১২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, আহত হয়েছে ৫ হাজার ৯৮৭ জনের অধিক নেতাকর্মী।
রিজভী আরও বলেন, ‘সরকার নানাভাবে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সম্পর্কে বিভ্রান্ত তৈরি করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে।
অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা অনর্গল মিথ্যাচার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এক সন্ত্রাসী উপরিকাঠামো, সন্ত্রাসের শৃঙ্খলের মধ্যে সারা বাংলাদেশ নিশ্চুপ হয়ে গেছে। সারা দেশের মানুষ সবকিছু দেখছে। দেখতে দেখতে তাদের ভেতরে যে দ্রোহ, তাদের ভেতরে ভেতরে যে ক্রোধ, ভেতরে ভেতরে তাদের যে ক্ষোভ তা পুঞ্জীভূত হচ্ছে।
এটা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব টের পাচ্ছেন না।’ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘তাণ্ডব’ পরিবারের সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার, গ্রেপ্তারের নানা ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি।
রিজভী বলেন, চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নে ওরা বিভোর। ভেবেছে এভাবে নির্মমতা করে তারা চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকবে।
তারা যেভাবে সাজিয়ে নিয়েছে এই সাজানো বাগান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে অন্য সবাইকে নিয়ে ভেবেছে ক্ষমতা থেকে তাদের কেউ বিচ্যুত করতে পারবে না। ক্ষমতার মসনদ এতই শক্ত ওরা মনে করছে।
এই মসনদ শক্ত করার জন্য পৃথিবীর অনেক স্বৈরশাসকরা ভেবেছিল… কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে যে, অত্যাচারীরা যে অস্ত্র নিয়ে আঘাত করে।
স্বাধীনতাকামী মানুষ, গণতন্ত্রকামী মানুষ সেই অস্ত্র তাদের দিকেই তাক করে। যে দুর্বিনীত অত্যাচারের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারা (সরকার) আবার একটা একতরফা নির্বাচন করবেন, নির্বাচনের নামে একটা প্রহসন দেবেন, ভাগাভাগির নামে তাদের
তথাকথিত যে মহাজোট সেই মহাজোটের কোন দল কয়টা সিট পাবে সেটা তারা ভাগাভাগি নির্বাচন করবেন এবং সেটা সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে… এটা ছাড়া অন্য কোনো পন্থা তাদের নেই।
একটি রাজনৈতিক দল জনগণের ওপর নির্ভরশীল দল হলে তারা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে ভয় পাবে কেন? সরকারের এহেন ‘আশা’ জনগণ পূরণ হতে দেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
আগামী রোববার থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচির প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘আগামী পরশু থেকে শুরু হবে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি। এই কর্মসূচি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করনে।
যারা প্রকৃত গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে, যারা অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিশ্বাস করে, যারা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে বিশ্বাস করে প্রত্যেকে এই অবরোধ কর্মসূচি সাফল্যমণ্ডিত করবে।
সারা বাংলাদেশে রাস্তা-ঘাট, মহাসড়কসহ প্রত্যেকটি জায়গায় উপস্থিত হবে এবং সরকারের যত জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়ন-অত্যাচার প্রতিহত করেই তারা রাজপথে থাকবেন… বিএনপির পক্ষ থেকে সারা দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে সেই আহ্বান আমরা জানাচ্ছি।
এসএম