বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু, জনসমুদ্র তুরাগ তীরে
Share on:
আজ শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ তাবলীগ জামাতের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ইতেমধ্যে ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। এদিন বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইজতেমার সাফল্য কামনা করে ও মুসল্লিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয়েছে আঞ্চলিক বয়ান। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা দলে দলে ইজতেমা ময়দানে আসছে। মুসল্লিদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠছে তুরাগতীর। মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান। প্রথম পর্বের ইজতেমায় মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা এবং দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা অংশ নেবেন। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে লাখো মুসল্লির স্রোত এখন টঙ্গী অভিমুখে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ উপলক্ষ্যে ১৬০ একর জমির ওপর সুবিশাল প্যান্ডেল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।
ইতোমধ্যে যারা ময়দানে এসে পৌঁছেছেন, তারা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার ও বিভিন্ন নফল ইবাদতে মশগুল রয়েছেন। কিন্তু গভীর রাতে এক পশলা বৃষ্টি তাদের ভোগান্তিতে ফেলেন। অনেকের খিত্তায় শামিয়ানা না থাকায় বৃষ্টিতে তাদের ইস্তেমায়ি সব সামানা ভিজে গেছে। কনকনে বাতাস, ঠান্ডা আবহাওয়া এবং বৃষ্টিতে সাথীদের পরিহিত কাপড় চোপর ভিজে যাওয়ায় রাতভর তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
আসছেন ভারতীয় মুসল্লিরা
ইজতেমায় যোগ দিতে ভারতের ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য থেকে মুসল্লিরা আসছেন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে। গতকাল পর্যন্ত ১ হাজারের মতো ভারতীয় মুসল্লি এসেছেন বলে ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ থাকলেও বিশ্ব ইজতেমায় সাত দেশের মুসল্লিরা একই খিমায় (তাঁবু) অবস্থান করছেন। অন্য দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ ও ইরান।
ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প উদ্বোধন
বৃহস্পতিবার ইজতেমা ময়দানের পাশে স্থাপিত বিভিন্ন ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প উদ্বোধন করেন ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ব ইজতেমার দুটি পর্ব সমাপ্ত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মো. বসিরুল আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, বিশ্ব ইজতেমার প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান, সমন্বয়কারী আবুল হাসনাত প্রমুখ।
৭ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা
র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ইজতেমাকে ঘিরে কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি নেই। র্যাবের পাঁচটি ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে আকাশপথে হেলিকপ্টার টহল, ডগ স্কোয়াড টিম, ফুট প্যাট্রলিং, মোবাইল টিম, টহল টিম, নৌ টহল, সাইবার মনিটরিংসহ সাত স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকছে এবার বিশ্ব ইজতেমায়।
ছুটি বাতিল
ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে টঙ্গী আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
দুই মুসল্লির মৃত্যু
বৃহস্পতিবার রাতে ইজতেমায় দুই মুসল্লি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তারা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌহদ্দীটোলা গ্রামের জামান মিয়া (৪০) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার ধামাউরা গ্রামের ইউনুছ মিয়া (৬০)। তাদের টঙ্গী শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ডা. ফারহানা তাসনিম নিতু বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তারা মারা যান।
এনএইচ