tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ০১ জুন ২০২৪, ১৩:৫০ পিএম

গাজায় শান্তি স্থাপনে ‘৩ স্তরের পরিকল্পনা’ প্রস্তাব করলেন বাইডেন


biden-2-20240601130350

গাজা উপত্যকায় শান্তি স্থাপনের জন্য এই প্রথম সুনির্দিষ্টভাবে একটি পরিকল্পনার প্রস্তাব করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।


শুক্রবার রাজধানী ওয়াশিংটনে দেওয়া এক ভাষণে এই প্রস্তাব পেশ করেছেন তিনি।

বাইডেনের প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ৩টি স্তর বা পর্যায় রয়েছে। প্রথম স্তরে গাজায় ৬ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে। এই পর্বে রাফাসহ গাজার অন্যান্য জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে এবং ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি কয়েক শ’ ফিলিস্তিনির মুক্তির বিনিময়ে নিজেদের কব্জায় থাকা কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এই দফায় যেসব জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের মধ্যে বয়স্ক এবং নারীরা প্রাধান্য পাবে।

সেই সঙ্গে এ ছয় সপ্তাহের প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করবে অন্তত ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক। হামাস এবং ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা ও প্রতিরক্ষাবাহিনী এই পর্যায়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবে। যদি এই আলোচনা ৬ সপ্তাহ সময়সীমার মধ্যে শেষ না হয়, তাহলে পরিকল্পনার প্রথম পর্ব বা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়বে।

স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস এবং ইসরায়েল— দু’পক্ষের ঐকমত্যের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে গাজায় শান্তি পরিকল্পনার প্রথম স্তর বা পর্যায় এবং তারপর শুরু হবে পরিকল্পনা ২য় পর্ব। এই পর্বে নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের সবাইকে মুক্তি দেবে হামাস এবং তার বিনিময়ে গাজার বাসিন্দারা পাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি।

পরিকল্পনার তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ভবন-রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

নিজ বক্তব্যে বাইডেন বলেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এবং রাজনীতিবিদদের একাংশ যে এখনই গাজা যুদ্ধের অবসান চায় না— সে সম্পর্কে তিনি ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল। তিনি আরও বলেছেন, এই মহলটির নির্দেশনা অনুযায়ী চললে সামনে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

‘তারা গাজা দখল করতে চায়। এ কারণেই তারা সেখানে বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আগ্রহী এবং জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারেও তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। আমি জানি, যে পরিকল্পনা আমি প্রস্তাব করছি, তাতে ইসরায়েলি নেতৃত্বের একটি অংশ ব্যাপকভাবে আপত্তি জানাবে; কিন্তু তারপরও আমি ইসরায়েলের নেতৃত্বকে এই পরিকল্পনা সমর্থনের উদাত্ত আহ্বান জানাব।’

বাইডেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ও একমাত্র প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি যুদ্ধের সময়ে ইসরায়েল সফরে গিয়েছি। শুধু তাই নয়, এই যুদ্ধের সুযোগে ইরান যখন লোহিত ও পারস্য সাগরে জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালানো শুরু করল, তখন আমি সেখানে মার্কিন বাহিনী পাঠিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট এর আগে এমন পদক্ষেপন নেননি।’

‘তাই ইসরায়েলে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আমার আহ্বান, এখন বিরতি দিন এবং একবার চিন্তুা করুন— এখন একটি বিশেষ সময়ে আমরা রয়েছি সবাই। যদি অবহেলায় এই সময় পেরিয়ে যায়, তাহলে কী ভয়াবহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।’

মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, গাজা যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সামনে এক অভূতপূর্ব দোদুল্যমান অবস্থার সৃষ্টি করেছে। একদিকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইসরায়েলের দৃঢ় সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলপন্থি কমিউনিটির কাছে বেশ জনপ্রিয়, অন্যদিকে তার রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি বড় অংশে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ এবং সেখানকার ফিলিস্তিনীদের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য তাকে দায়ী করছেন। গাজা ইস্যুতে ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে যে দিন দিন তার প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে, তার আঁচ ভালোভাবেই পাচ্ছেন বাইডেন।

এদিকে, আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে যুক্তরাষ্ট্রে। সেই নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন জো বাইডেন; আর গত নির্বাচনের মতো এবারও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী এবং বাইডেনের পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, গাজা ইস্যুতে এই মুহূর্তে যদি ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়, তাহলে নির্বাচনে তার সুফল ভোগ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে সবকিছুর পরও সত্য হচ্ছে, ইসরায়েলের একজন দৃঢ় সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের প্রতি যথেষ্ট সহমর্মিতা বোধ করেন তিনি। শুক্রবারের ভাষণে তার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।

‘এই যুদ্ধের উছিলায় গত প্রায় আট মাস ধরে ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণ নরকের চুড়ান্ত রূপ দেখছে। চলতি সপ্তাহে রাফায় যে ভয়াবহ হামলা ঘটল, সেই হামলার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। এখন সময় এসেছে এই যুদ্ধ থামানোর এবং এটি থামাতে হবে,’ ভাষণে বলেছেন বাইডেন।

সূত্র : রয়টার্স

এনএইচ