গরুকে নয় বয়কট কসাই, সাড়া ফেলেছে ‘গোশত সমিতি’
Share on:
ঈদের আগে অস্থির হয়ে উঠেছে মাংসের বাজার। সারাদেশে গরুর গোশতের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। নিম্নবিত্তদের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে গরুর গোশত। নিম্ন-মধ্যবিত্তও পড়ছেন দুচিন্তায়, এত দাম দিয়ে গরুর গোশত কেনা কঠিন হয়ে পড়ছে। গরুর গোশত কিনতে গিয়ে ঈদের আনন্দ যেন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে তাদের। ভাটা পড়ছে ঈদের আনন্দে।
তবে নোয়াখালীতে পবিত্র ঈদুল ফিতরে গ্রামের পাড়া-মহল্লায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ‘গোশত সমিতি’। কসাইদের নানা অনিয়মের কারণে সমিতির মাধ্যমে টাকা সঞ্চয় করে, পশু কিনে গোশতের চাহিদা পূরণ করে এলাকার সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, ফজরের খাওয়ার পরই শুরু হয় গরু জবেহ। আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পাড়া-মহল্লা। রাস্তার পাশে দেখা যায় মানুষের জটলা। জায়গায় জায়গায় সাজানো থাকে গোশতের পসরা। এভাবে গরু কিনে ঈদের পূর্ব মুহূর্তে কমদামে গোশত ভাগাভাগি করে নিয়ে অনেক খুশি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।
বছর শেষে ঈদ, শবে বরাত, শবে কদর, ইসলামী জালসা এবং গ্রামীণ মেলাকে কেন্দ্র করে সেই সমিতির মাধ্যমে জমাকৃত টাকায় গরু কিনে গোশত ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়। এতে গোশতের দাম বাজারের তুলনায় অনেক কম পড়ে। কম দামে ভেজালমুক্ত গোশত পেয়ে সমিতির সকল সদস্যদের মুখে দেখা যায় হাসি।
বুধবার (১০ এপ্রিল) নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের পাড়া-মহল্লায় ঘুরে গোশত সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সমিতিতে সাপ্তাহিক অথবা মাসিক হারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখেন। এভাবে জমাকৃত টাকায় কেনা হয় গরু। ঈদের দু-একদিন আগে ক্রয়কৃত পশু জবাই করে গোশত সমিতির প্রত্যেক সদস্য তা ভাগ করে নেন। এতে ঈদ উদযাপনে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের আর্থিক চাপ যেমন কমে, তেমনি ঈদের আগে সবার বাড়িতে বাড়তি আনন্দ যোগ হয়। সাধারণত এই সমিতিতে ৩০ থেকে ৭০ জন সদস্য হয়ে থাকে।
কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুরের বাসিন্দা ইয়াছিন আরাফাত বলেন, অন্যান্য জায়গার মতো আমাদের নোয়াখালীতেও গোশত সমিতি জনপ্রিয় হয়েছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে নোয়াখালীতে প্রচলিত তবে কোনো নাম ছিল না। আমরা কসাইকে বয়কট করেছি, গরুকে নয়। সিন্ডিকেট ভাঙতে নিজেরা নিজেরা গরু কিনে করে নিজেরা জবাই করে ভাগ করে দিয়ে দিচ্ছি। এতে সবাই খুশী।
মুছাপুরে গোশত সমিতির উদ্যোক্তা ইউপি সদস্য শেখ মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে গোশত সমিতি তত্ত্বাবধান করছি। এ বছর সমিতির সদস্যের জমাকৃত জমাকৃত টাকায় গরু কিনে সমহারে বন্টন করা হয়। আমাদের ইউনিয়নে প্রতিটি গ্রামে এরকম সমিতি আছে। বাজার দরের চেয়ে কম দামে এবং একই সঙ্গে বেশি পরিমাণ গোশত পেয়ে সবাই যারপরনাই খুশি।
মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী বলেন, আমি নিজেও গোশত সমিতির সদস্য। ভালো মানের গরু দেখে যাচাই-বাছাই করে জবাই করা হয়েছে। নিজেরা শ্রম দিয়ে এটি ভাগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে একটা আনন্দ বিরাজ করছে। আমরা এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাবো।
নোয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটা খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ। সকল শ্রেণির লোকজনের অংশগ্রহণে এ ধরনের গোশত সমিতি সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে সকলের মধ্যে ঈদের আনন্দটাও অনেক বাড়িয়ে দেয়।
এনএইচ