tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
সারাদেশ প্রকাশনার সময়: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৪৩ পিএম

ইসকন সমর্থকদের হাতে খুন আলিফ চিরনিদ্রায় শায়িত


LohagaraCTG-67472dc5f28d7

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ফারাঙ্গা এলাকায় পশ্চিম কূল হযরত আব্দুল লতিফ শাহের (রা.) মাজার মাঠ প্রাঙ্গণে চতুর্থ দফা জানাজা শেষে নিজ ভিটায় দাফন করা হয়েছে ইসকন সমর্থকদের হাতে খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে।


দুপুর ২টা থেকে দূর-দূরান্তের লোকজন জমায়েত হন লতাপীর শাহ মসজিদ ও মাদ্রাসা মাঠে। ওই সময় বিক্ষুব্ধ জনতা নানান স্লোগান দিতে থাকেন। মুহূর্তের মধ্যেই পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়।

বিকাল সাড়ে ৩টায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ পাহারায় অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের মরদেহ মাঠে পৌঁছলে শোকের ছায়া নেমে আসে। হু হু করে কাঁদতে দেখা যায় মুসল্লিদের। লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হন আলিফ। আসরের নামাজের পরপরই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মাওলানা কাজী মোহাম্মদ বদর উদ্দীন সাঈদী।

সন্ধ্যার পর নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তার গ্রামের বাড়িতে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।

এ সময় তারা নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন এবং আলিফ হত্যায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

জানাজাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনজীবী সমিতির নেতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা।

গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। বুক চাপড়ে কাঁদছেন স্বজনরা। বাকরুদ্ধ তার পরিবার। তার পিতা জামাল উদ্দিন, মা হোসনে আরা বেগম ও স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন বারবার কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যান। আলিফের অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে পেল না বলতে বলতেই মা হোসনে আরা বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

নিহত আলিফের তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের কন্যাসন্তান বুঝতে পারছে না তার বাবা আর নেই। তাকিয়া অপলক চোখে তাকিয়ে আছে সবার দিকে।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে চালানো সংঘর্ষের সময় মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশমুখে রঙ্গম কনভেনশন হলের পেছনে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে।

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তৃতীয়। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি মেধাবী ছিলেন। সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাশ করেছিলেন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি এলএলএম পাশ করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।

২০১৮ সাল থেকে আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে প্র্যাকটিস করতেন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

নিহত আলিফের বড় ভাই খানে আলম বলেন, সাড়ে তিন বছর আগে বিয়ে করেন আলিফ। তাদের তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের এক কন্যাসন্তান আছে। তারিন এখন ৭ মাসের সন্তানসম্ভবা। আমার ভাইয়ের পরিবারকে কী দিয়ে সান্ত্বনা দেব বলেই কেঁদে উঠেন।

তিনি আরও বলেন, খুনিরা আমার ভাইয়ের অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে দেয়নি, নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করেছে। অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

কথা হয় নিহতের কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে। তারা জানান, আলিফ অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও ধর্মভীরু ছিল। তার মৃত্যুতে পুরো এলাকার মানুষ শোকের সাগরে ভাসছে।

এনএইচ