‘ইন্ডিয়া বনাম ভারত’ বিতর্ক নিয়ে যা বললেন রাহুল
Share on:
দেশের নাম ইন্ডিয়া থাকবে না কি না পরিবর্তন করে ভারত করা হবে— এই বিতর্কে গত কয়েক দিন ধরে উত্তপ্ত ভারতের জাতীয় রাজনীতি। এবার এই ইস্যুতে প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন বিরোধী দল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী।
বর্তমানে ইউরোপ সফরে রয়েছেন রাহুল। শুক্রবার রাজধানী প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে ভারত এবং ইন্ডিয়া— দুই নামই রয়েছে। সংবিধানের শুরুতে বলা হয়েছে— ‘ইন্ডিয়া অথবা ভারত হবে একটি রাজ্যপুঞ্জ’। তো, ইন্ডিয়া কিংবা ভারত… কোনো নামেই আমি সমস্যা দেখছি না। দু’ নামই চমৎকার ভাবে গ্রহণযোগ্য।’
‘কিন্তু আমার ধারণা, এই বিতর্কের প্রধান কারণ আমাদের রাজনৈতিক জোট। আপনারা জানেন, কিছুদিন আগে আমরা ‘ইনডিয়া’ নামে একটি জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক জোট করেছি। আমদের জোটের এই নামের কারণে সরকারি দলের মধ্যে একপ্রকার মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়েছে এবং সে কারণেই তারা দেশের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
‘আমার মনে হয় আপনারা বুঝতে পারছেন যে মূল ব্যাপারটি আসলে কী…আমরা চাইলেই আমাদের জোটের অন্য কোনো নাম দিতে পারি; কিন্তু তাতে এই বিতর্ক শেষ হবে না, উল্টো আরও ঘনীভূত হবে। মানুষের চিন্তাভাবনা, কার্যক্রম খুবই বিচিত্র।’
প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে জি২০ সম্মেলনে বিদেশি অতিথিদের রাষ্ট্রপতি ভবনে নৈশভোজের নিমন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে। নিমন্ত্রণপত্রে ভারতের রাষ্ট্রপতির দ্রৌপদী মুর্মুর পরিচয় হিসেবে বলা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’।
‘ভারত’ নামটি ভারতে প্রচলিত থাকলেও আন্তর্জাতিক ও দাপ্তরিকভাবে এই দেশটির নাম ‘ইন্ডিয়া’। তাই যে কেনো সরকারি নথিপত্রেও ব্যবহার করা হয় ‘ইন্ডিয়া’ নামটিই।
তাই জি২০ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক নিমন্ত্রণপত্রে ‘ভারত’ নামের ব্যবহার স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনেও এই ইস্যুতে গত কয়েক দিন ধরে চলছে তুমুল আলোচনা।
বিজেপির নেতারা বলছেন, ‘ইন্ডিয়া’ নামটি ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অপরদিকে বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ— কিছুদিন আগে গঠিত তাদের নির্বাচনী জোট ‘ইনডিয়া’কে খাটো করতেই দেশের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।
গত ৭ সেপ্টেম্বর আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে ইন্দোনেশিয়া গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার সফরের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) সফরসূচির অংশবিশেষের ফটো ইমেজ পোস্ট করেন বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। সেখানে দেখা যায়, নরেন্দ্র মোদিকে প্রাইম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়ার পরিবর্তে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তারপর থেকেই ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গণে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের নাম পরিবর্তন করতে চায় বিজেপি সরকার।
কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও কোনো ব্যাখ্যা বা প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
তবে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্দোনিও গুতেরেসের সহকারী ফারহান হক জানিয়েছেন, ভারত যদি দাপ্তরিক সব প্রক্রিয়া মেনে জাতিসংঘ বরাবর আবেদন করে, সেক্ষেত্রে নাম পরিবর্তনে কোনো বাধা নেই।
এদিকে পাকিস্তানে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে যে যদি ভারত জাতিসংঘে আবেদনের মাধ্যমে ইন্ডিয়া নামটি পরিত্যাগ করে, সেক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ সিন্ধের নাম পরির্তন করে ‘ইন্ডিয়া’ রাখা হবে।
এমবি