খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
Share on:
বিএনপিকে খুনিদের দল আখ্যা দিয়ে দলটির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি একরকম উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, খুনিদের সঙ্গে আবার কীসের বৈঠক?
ব্রাসেলস সফর নিয়ে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক সাংবাদিক জানতে চান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন নিয়ে শর্তহীন সংলাপে বসার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলের সঙ্গে। কোন বিরোধী দল? বিরোধী দলটা কে? সংসদীয় নিয়মে বিরোধী দলের একটা ব্যাখ্যা আছে। বিরোধী দল হচ্ছে, সেই দল যাদের সংসদে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে। এর বাইরেরগুলো পরিগণিত হয় না। আমেরিকায়ও হয় না। ট্রাম্পকে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কী বলবে? যদিও আমরা তাদের মতো সরকার ব্যবস্থায় নেই। এটা মাথায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এই যে মানুষগুলোরে হত্যা করা হলো, তাকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) একটা প্রশ্ন করা হলো না কেন- যখন উপনির্বাচনে একটা ঘটনা ঘটেছে, হিরো আলমের ওপর হামলা, বিচার চাইল। এখন পুলিশ হত্যা করল, এতগুলো সাংবাদিককে মারল, তারা এটার বিচার দাবি করল না কেন?
শেখ হাসিনা বলেন, খুনিদের সঙ্গে আবার কীসের বৈঠক। খুনিদের সঙ্গে আবার কীসের আলোচনা? যারা মানুষের সম্পদ নষ্ট করেছে, যারা আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নষ্ট করেছে। সে বসে বসে ডিনার খাক (মার্কিন রাষ্ট্রদূত), ডায়ালগ করুক। এটা আমাদের দেশ, আমরা স্বাধীনতা এনেছি রক্ত দিয়ে।
তিনি বলেন, আমরা যে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র এ কথাটা মনে রাখা দরকার। খুনিদের সঙ্গে সংলাপ এটা আমাদের বাংলাদেশের মানুষও চাইবে না। বরং বাংলাদেশের মানুষ এখন বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে। তারা যেটুক অর্জন করেছে, সেটাও তারা হারিয়েছে। এখন মানুষের কাছে তারা ঘৃণার পাত্র, দুর্নীতিবাজ।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরেফিকে নিয়ে বিএনপির কর্মকাণ্ডে দলটির নেতৃত্বে সমস্যা দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আসলে তাদের নেতাই নেই, দলটার সমস্যা এটাই।
এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, একজন ফ্রড, ভুয়া সে এসে তাদের (বিএনপির) অফিসে বসে সাফাই গাইল। আর যখন ধরা পড়ল তখন বলল, জানে না। আসলে তাদের (বিএনপির) নেতাই নেই। দলটার সমস্যাটাই এটা। নেতৃত্ব নেই, আছে কিছু মাইকবাজ।
শেখ হাসিনা বলেন, সারাদিন মুখে মাইক লাগিয়ে কথা বলে। সেটাও এখন আবার আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে সেই সুবিধা নিয়ে কথা বলছে।
২৮ অক্টোবর বা পরবর্তীতে যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, কিছু অপরাধী জামিন পেয়ে ছুটে এসেছে। জামিন পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেহেতু এরা জামিন পেয়ে গেছে, এরা অপরাধ করছে। এদের দ্রুত সাজা দিয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিত। এভাবে আগুন লাগাবে আর মানুষের ক্ষতি করবে এটা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। যারা এভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে, তাদের সাজাটা যেন ঠিকমতো হয়; সেই ব্যবস্থা নিতেই হবে। যে হাত নিয়ে আগুন দেবে, সেই হাতে শাস্তি দিলে তাহলে তারা কষ্ট বুঝতে পারবে।
এ সময় দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দেশবাসীকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানাই। যারা এসব অগ্নিসন্ত্রাস করছে তাদের ধরিয়ে দিন। এর আগে তারা যখন শুরু করেছে তখনও মানুষ ঠেকিয়েছে। এবারও মানুষই ঠেকাবে।
২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনায় সরকারের পক্ষে গেল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাভ-লোকসানের ব্যাপার না। মানুষকে হত্যা করছে, মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। বরং আমাদের লাভ-লোকসান না জিজ্ঞেস করে বিএনপি জিজ্ঞেস করা দরকার; তারা যে গুন্ডামি-সন্ত্রাসী, অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে তাতে তারা কতটুকু লাভবান হচ্ছে। এটা আপনারা (প্রশ্ন করা সাংবাদিককে প্রধানমন্ত্রী) বরং বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির কপালে আর কিছু জুটবে না। তিনি বলেন, বিএনপি যে সন্ত্রাসী দল, এটা তারা আবার প্রমাণ করল। কানাডার একটি কোর্ট এই বিষয়টি কয়েকবার বলেছে।
তিনি বলেন, ‘মাঝখানে তারা (বিএনপি) কিছুটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করছিল। আমাদের সরকার তাদের কোনো বাধা দেয়নি। তাদের ওপর একটি শর্ত ছিল তারা যেন অগ্নিসন্ত্রাস-ভাঙচুর, এগুলো না করে। তারা সুষ্ঠু রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসও ধীরে ধীরে অর্জন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৮ তারিখে তাদের যেই ঘটনা, বিএনপি যে সমস্ত ঘটনা ঘটালো, বিশেষ করে মাটিতে ফেলে পুলিশকে যেভাবে কোপালো, সাংবাদিকদের ওপর হামলা— এই ঘটনার পরে জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছু জুটবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে, সেখানেও পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। আজকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর যেভাবে হামলা করছে, এখানে হাসপাতালে বোমা হামলা করল, নারী শিশুদের অত্যাচার করেছে, তাদের সবকিছু বন্ধ করে রেখে দিয়েছে, আমি তফাৎ কিছু দেখতে পারছি না। আমরা এর নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নিজেরাই পালাল, পালিয়ে গিয়ে এখন আবার অবরোধের ডাক। কীসের অবরোধ? কার জন্য অবরোধ? যখন সারা বিশ্ব বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করছে তখন তাদের কাজ হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। বাংলাদেশের এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, দেখাবে বাংলাদেশে কিছু হয়নি। তাদের হামলার শিকার একদিকে পুলিশ, আর হচ্ছে সাংবাদিক। এদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছে। সেগুলো কারা করেছে, তাদের নাম ডাক....। তারা তো প্রকাশ্যে করেছে। শুধু তাই নয়, গতকাল তারা লালমনিরহাটে আমাদের যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা আর মানুষের সম্পদ নষ্ট করা, আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করাই তাদের চরিত্র। হঠাৎ কেন সাংবাদিকদের ওপর তারা চড়াও হলো? সাংবাদিকরা তাদের পক্ষে ভালো ভালো নিউজ দিচ্ছিল, টকশোতে ভালো ভালো কথা, বরং সরকারের দোষটাই সাংবাদিকরা বেশি দেখে। তাহলে তাদের রাগটা কেন সাংবাদিকদের ওপর হলো? সেটাই বুঝতে পারলাম না।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েল যেভাবে হামলা করছে ২৮ অক্টোবরে ঢাকায় হওয়া হামলার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি নিয়ে বিএনপি কেন কথা বলে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, গাজায় যেমন ইসরায়েল হাসপাতালে হামলা করল বিএনপি একই কায়দায় পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। মনে হয়, ইসরায়েল আর ওদের মধ্যে ভালো একটা সমঝোতা আছে। ঠিক একইভাবে ওখানেও শিশু-নারী হত্যা। এরাও এখানে পুলিশ হত্যা করছে। আমি কোনো তফাৎ দেখি না।
সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি বা জামায়েত এরা কিন্তু এখন পর্যন্ত টু শব্দ করছে না। অথচ আমরা সবসময় কিন্তু ফিলিস্তিনের সঙ্গে আছি। তাদের জনগণের সঙ্গে সবসময় আছি। আমি আন্তর্জাতিকভাবে যেখানে যাই তাদের কথা বলি। তাদের ন্যায্য অধিকার কিন্তু ফেরত দিতে হবে, এটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু যারা এত কথা বলে, আবার ইসলামিভাব ধরে তারাও টু শব্দ করছে না। কাদের স্বার্থে? সেটা আমারও প্রশ্ন। বিএনপি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না কেন? এই যে শিশুদের হত্যা করছে, হাসপাতালে বোমা মারছে কই তারা তো টু শব্দটাও করছে না।
সংসদে ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিন্দা প্রস্তাব বা রেজ্যুলেশন নেওয়া হলেও সংবাদ সম্মেলনে কোনো গণমাধ্যমকর্মী সরকারকে ধন্যবাদ না দেওয়া বা এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন না তোলায় মন খারাপ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, সংসদে আমরা ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিন্দা প্রস্তাব নিয়েছি। সাংবাদিকরা এটা নিয়ে কথা বলল না, ধন্যবাদ দিল না। কেন কথা বলল না জানি না, দুঃখ পেলাম।
এমবি