সারাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২ দিনে ২৬ মৃত্যু
Share on:
সারা বাংলাদেশে গত দুই দিনে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এদের মধ্যে বজ্রপাতে ১৯ জন, বন্যার পানিতে ডুবে ৩ জন এবং ভূমিধসে ৪ জন মারা গেছে বলে জানা যায়।
দেশের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ :
নেত্রকোণা :
জেলার বন্যা কবলিত স্বজনদের দেখতে যাওয়ার পথে পানিতে ডুবে মারা গেছেন আক্কাস আলী নামে এক যুবক।
শুক্রবার (১৭ জুন) দুর্গাপুরের চন্ডিগড় ইউনিয়নের তেলাচী গ্রামে বন্যার পানিতে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি।
শনিবার (১৮ জুন) দুপুরে উপজেলার চন্ডিগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা।
নিহত আক্কাস আলী পৌরশহরের দশাল এলাকার মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে। দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিবিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শেরপুর :
জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ২ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৮ জুন) সকাল ৭টার দিকে ওই ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন : ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বরাগীপাড়া গ্রামের মৃত নফেজ উদ্দিনের ছেলে আশরাফ আলী (৬০) এবং ধানশাইল ইউনিয়নের বাগেরভিটা গ্রামের শেখ কাদের আলীর ছেলে আবুল কালাম (৩৩)।
স্থনীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১৭ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাগেরভিটা গ্রামের রাজমিস্ত্রি আবুল কালাম হাঁস ধরতে গিয়ে বন্যার পানিতে ভেসে যান। একই দিন বরাগীপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী অসাবধানতায় বন্যার পানিতে পড়ে তীব্র স্রোতে ভেসে যান। শনিবার সকাল ৬টার দিকে ২ জনের লাশ ভাসতে দেখে উদ্ধার করেন আত্মীয়-স্বজনরা।
ঝিনাইগাতী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক দুইজনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
চট্টগ্রাম :
বন্দর নগরীর আকবরশাহ এলাকায় পাহাড় ধসে ৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আহত হয়েছেন ৩ জন। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে আকবর শাহ থানার বরিশাল ঘোনায় এবং রাত ৩টার দিকে ফয়েস লেকের বিজয় নগর এলাকায় পৃথক দুটি পাহাড় ধসের ঘটনায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
শনিবার সকালে সংবাদ মাধ্যমকে ৪ জন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালি উদ্দিন আকবর।
তিনি বলেন, রাত ১টার দিকে চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানার ১ নম্বর ঝিলের বরিশাল ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসের সংবাদ পাই। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫ জনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাহিনুর আক্তার (২৬) ও মাইনুল আক্তার (২৪) নামে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত তিনটার দিকে আকবরশাহ থানার ফয়েস লেকের লেকসিটি বিজয় নগর এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ করে। সেখানে লিটন (২৩) ও ইমন (১৪) নামে দুজনের মৃত্যু হয়।
ময়মনসিংহ :
ময়মনসিংহ সদর, নান্দাইল ও ধোবাউড়া উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতে ৩ শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুরে ও সকালে তাদের মৃত্যু হয়।
ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ জানান, শুক্রবার দুপুরে নান্দাইল সদরে ফসলের ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাত হলে বক্কর ও জাহাঙ্গীর নামে ২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
এদিকে গাঙ্গাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরশাদুজ্জামান নয়ন জানান, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে বৃষ্টির সময় ৩ শিশু স্থানীয় একটি বিলে মাছ ধরা দেখতে গিয়েছিল। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত ঘটলে ওই ৩ শিশু গুরুতর আহত হয়।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দুইজনকে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং একজনকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে ধোবাউড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টিপু সুলতান জানান, সকালে স্থানীয় গুগড়া বিলে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে সাঈদ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ :
জেলার সদর উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর সিকিউরিটি গার্ডসহ ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। আহতদের সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার সায়দাবাদ ইউনিয়নের শিল্পপার্ক এলাকা ও যমুনার দুর্গম চরাঞ্চল কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্ণি এলাকায় বজ্রপাতে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সংবাদ মাধ্যমকে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাজশাহী :
জেলার গোদাগাড়ী ও মোহনপুর উপজেলায় শুক্রবার দুপুরের পর বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গোদাগাড়ীর রিশিকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, দুপুরের দিকে বৃষ্টির মধ্যে মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফিরছিলেন নাদিরা বেগম। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।
অপরদিকে মোহনপুরের রায়ঘাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন জানান, দুপুরের দিকে বাড়ির পাশের মাঠে গোলাম রাব্বি ও হারুনুর রশিদ ফুটবল খেলছিল।
বল মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায় কুড়াতে গিয়েছিল রাব্বি। ওই সময় তার কাছাকাছি বজ্রপাত হয়। অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গাজীপুর :
জেলার কাপাসিয়া ও কালিয়াকৈর উপজেলায় বৃষ্টির সময় মাছ ধরতে গিয়ে এবং মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে ২ কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ও বিকেলে এই ২ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
বিলে মাছ ধরতে গিয়ে কিরণ মিয়া এবং মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান আব্দুস সোবহান।
কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম নাসিম বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে কাইজলি বিলে মাছ ধরতে যান কৃষক কিরণ মিয়া।
এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হলে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কিরণ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল মোল্লা বলেন, ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের মজিদচালা গ্রামের কৃষক আব্দুস সোবহান (৫৫) শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টিপাতের সময় বাড়ির পাশের মাঠ থেকে গরু আনতে যান।
এ সময় বজ্রপাতে মাঠেই ওই কৃষকের মৃত্যু হয়।
বগুড়া :
জেলার আদমদীঘি উপজেলায় মরিচক্ষেত পরিচর্যা করতে গিয়ে বজ্রপাতে জরুল ইসলাম (২১) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের কোমারভোগ গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে।
আদমদীঘি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ কুমার বর্মন এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া শুক্রবার টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বজ্রপাতে ২ জন এবং ঢাকার কেরাণীগঞ্জ, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা ও দিনাজপুরে ১ জন করে মারা গেছেন বলে জেলা প্রতিনিধিরা এসব মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন।
এইচএন