দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে ফের রাজনীতিতে উত্তাপ
Share on:
গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর দেশের রাজনীতির চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। একদফা কর্মসূচি নিয়ে এগোতে থাকা বিএনপি ওই দিনের পর থেকে রাজনীতির মাঠে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে যায়।
গ্রেফতার করা হয় দলটির শত শত নেতাকর্মীকে। ফলে ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি একদফা দাবিতে নানা ধরনের কর্মসূচি দিলেও নেতাকর্মীরা রাস্তায় না নামায় তা সফল করতে পারেনি দলটি। এছাড়াও নির্বাচন প্রতিহত করতে বিএনপি নানা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এতে টানা প্রায় ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা অনেকটা হতাশ। তাদের সেই হতাশা কাটাতে রাজপথের কর্মসূচির কোনো বিকল্প দেখছেন না নীতিনির্ধারকরা।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বড় কোনো কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। দলটি কিছুটা বিরতি দিয়ে আবার রাজপথে নামছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) জেলায় জেলায় কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। একই দাবিতে আগামীকাল শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীসহ মহানগরে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
এদিকে বিএনপি যতবারই কর্মসূচি দিয়েছে পাল্টা কর্মসূচি দিতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। তারা শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথ দখলে রেখেছে। তাদের দাবি, বিএনপি সুযোগ পেলেই রাজপথে সহিংসতার চেষ্টা করে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলে। এই শঙ্কা থেকেই মাঠে তারা।
টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে বেশ ফুরফুরে মেজাজে থাকা আওয়ামী লীগ এবারও বিএনপিকে মাঠ ছেড়ে দিতে নারাজ। এজন্য দলটির এবারের কর্মসূচিতেও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীনরা। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার রাজধানীতে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
অনেক দিন পর বড় দুটি দলের কর্মসূচি ঘিরে উত্তাপ চড়াচ্ছে রাজনীতিতে। আবার রাজপথে দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি মুখোমুখি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনের পর যেহেতু কোনো কর্মসূচি ছিল না, এজন্য বিএনপি চাইছে বড় জমায়েত করে সেই সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে চায় দলটি। বিশেষ করে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলে বিএনপি আবার তাদের জনসমর্থনের প্রমাণ দিতে চায়।
কালো পতাকা মিছিল সফল করতে গত বুধবার রাতে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এতে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সংঘাত এড়িয়ে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন থামেনি। আমরা কিছুদিন বিরতি দিয়েছি মাত্র। আজ থেকে আবার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।
কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, আমরা তো আমাদের এক দফা থেকে এখনো একচুল সরে আসিনি। সরকার রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমাতে চায়। সেজন্য বিএনপি এখন তার কৌশল ঠিক করছে।
এদিকে বিগত দিনের মতোই বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও। বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের জবাবে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার মতে, বিএনপি সুযোগ পেলেই রাজপথে সহিংসতার চেষ্টা করবে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলবে। এই শঙ্কা থেকেই মাঠে থাকবে তারা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা তাদের দলের নেতাদের নেতৃত্বকে ব্যর্থ মনে করছেন। সার্বিক পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এই নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্ত করে মাঠে নামানো অনেক কঠিন হবে। ফলে বিএনপি, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন বিদেশিদের যোগসাজশে কীভাবে সরকার পতন ঘটানো যায় সেই চেষ্টায় আছেন। ফলে যেকোনো সময় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো একটি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সহিংসতার পথ বেছে নিতে পারে। এজন্য মাঠ নিজেদের দখলে রাখার বিকল্প দেখছে না ক্ষমতাসীন দল। এ কারণেই নির্বাচনকেন্দ্রিক দলে যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি সৃষ্টিই করাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ এত দেউলিয়া হয়নি যে, বিএনপিকে অনুসরণ করবে। আমরা আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি দিই, সেটি তাদের সাথে মিলে যেতেই পারে।
এনএইচ