tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশনার সময়: ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০১ এএম

পুনঃতফসিল হয়েছিল যেসব নির্বাচনে


election

নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ই জানুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে। যদিও ভোটের মাঠে সব রাজনৈতিক দল নেই। বিএনপিসহ অনেক দল তফসিল প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন করছে।


জাতীয় পার্টি এখনো নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেনি। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ পৃথকভাবে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

তারা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের পরামর্শ দিয়েছেন। নির্বাচনের তফসিল পেছানোর কথা বলেছেন রওশন। এ ছাড়া গতকাল প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর গড়া দল ইসলামী ঐক্যজোট নির্বাচনে যাওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়ে নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবি জানিয়েছে। এমন অবস্থায় সব দলকে নির্বাচনে আসার সুযোগ করে দিতে সংলাপের পাশাপাশি তফসিল পূননির্ধারণের পরামর্শ এসেছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে।

তারা বলছেন, রাজনৈতিক জটিলতা ও নানা কারণে এর আগের বিভিন্ন নির্বাচনে তফসিল পরিবর্তন করার নজির রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত দেশে অনুষ্ঠিত হওয়া ১১টি নির্বাচনের মধ্যে ৪টিতে পুনঃতফসিল হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নবম সংসদ নির্বাচনে ৫ বার নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করতে হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। আর ১৯৯৫ সালে তিনবার পুনঃতফসিল হয়েছিল। সংবিধানেও নির্বাচনের তফসিল পুনঃনির্ধারণে নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দেয়া আছে। সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পদের ও সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং নির্বাচন কমিশন এই সংবিধান ও আইনানুযায়ী দায়িত্ব পালন করিবেন।

পুনঃতফসিলের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় মোট ৪টি সংসদ নির্বাচনে পুনঃতফসিল হয়েছিল। সেগুলো হলো- ১৯৭৮, ১৯৯৫, ২০০৮ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন। এসব নির্বাচনে বিভিন্ন কারণে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করতে হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে।

১৯৭৮ সালের ২রা ডিসেম্বর দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে ভোট হয় পরের বছর ১৮ই ফেব্রুয়ারি। ১৯৯৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। যেটি বর্জন করে সংসদের প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। যার কারণে পরপর ৩ বার পুনঃতফসিল ঘোষণা করে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। আর ভোট হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি। যদিও পুনঃতফসিলের পরও সেই সময় দলীয় সরকারের অধীনে ভোট করেনি আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল।

সবচেয়ে বেশি নাটকীয়তা দেখা যায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে। এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৫ বার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হয়েছিল। শুরুতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ২০০৬ সালের ২৭শে নভেম্বর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণের তারিখ ঠিক করা হয় ২০০৭ সালের ২১শে জানুয়ারি। এরপরই ১৪ দল জানিয়ে দেয় তারা এ তফসিল মানে না। বিএনপিসহ ৪ দলীয় জোট তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। এরপর রাজনৈতিক সংঘাত ও নানামুখী অবস্থা বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন ৭ই ডিসেম্বর সংশোধিত তফসিল ঘোষণা করে। এতে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২২শে জানুয়ারি। সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন ছিল ২০০৬ সালের ২১শে ডিসেম্বর। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ফের নির্বাচনের তারিখ পুনঃনির্ধারিত করতে হয় কমিশনকে। ২০শে ডিসেম্বর তফসিলে তৃতীয়বারের মতো সংশোধন আনে কমিশন। তবে এবার ভোটগ্রহণের তারিখে কোনো পরিবর্তন করা হয় না। ২২শে জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঠিক রেখে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় ৩ দিন পিছিয়ে ২৪শে ডিসেম্বর করা হয়। একপর্যায়ে ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ২০০৮ সালের ২রা নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয় ১৮ই ডিসেম্বর। যেটি প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিসহ সমমনারা। একপর্যায়ে বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনা করে আবারো নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন। সবশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ২৯শে ডিসেম্বর।

এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও পুনঃতফসিল দিতে হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। নির্বাচনে শুরু থেকেই বিএনপিসহ সমমনারা অংশ নেবে না বলে জানায়। নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের ৮ই নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করে। ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হয় ২৩শে ডিসেম্বর। তখন নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি জানায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে আওয়ামী লীগ ভোটের তারিখ পেছানোর বিরোধিতা করে। ৩ দিন পর ঘোষিত পুনঃতফসিলে ভোটের তারিখ নির্ধারণ হয় ৩০শে ডিসেম্বর।

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও বিভিন্ন পক্ষ থেকে পুনঃতফসিলের পরামর্শ এসেছে।

গত রোববার (১৯ নভেম্বর) প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। তিনি নির্বাচনের পুনঃতফসিলের দাবি করেন। অন্যদিকে ২০ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ঐক্যজোটও নির্বাচনের পুনঃতফসিলের দাবি জানায়।

নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানাও প্রয়োজনে পুনঃতফসিলের ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, বিএনপি মত বদলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে আইন মেনে সুযোগ তৈরি করা হবে। যারা (নির্বাচনে) আসতে চাচ্ছেন না, এই মুহূর্তে যারা জানাচ্ছেন যে, আমরা যাচ্ছি না-যাবো না, উনারা সিদ্ধান্ত নিলে, উনারা আসতে চাইলে নিশ্চয়ই আমরা স্বাগত জানাবো। উনারা আসতে চেয়েছেন, আমরা ফিরিয়ে দেবো- এটা কখনোই হবে না। পুনঃতফসিলের বিষয়ে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা হইনি। উনারা যদি আসেন, আমরা কমিশনাররা বসবো, আইন-কানুন দেখবো, তারপর যেটা সিদ্ধান্ত হয়- হবে।