নির্মাণ ও সেবাখাতে গতি কম, কৃষিতে ভর করে এগোচ্ছে অর্থনীতি
Share on:
চলমান ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। অনিশ্চয়তার মধ্যেও কৃষি ও ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদনখাতের কল্যাণে সম্প্রসারণ ধারাতেই রয়েছে দেশের অর্থনীতি।
তবে নির্মাণ ও সেবাখাতের কারণে অর্থনীতির গতি কিছুটা কমেছে। পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্সের (পিএমআই) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে এ সূচক প্রকাশ করে। কৃষি, ম্যানুফ্যাকচারিং, নির্মাণ ও সেবাখাতের ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন ৫০০ জনের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সূচক তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্যের ক্রয়াদেশ, মজুত, উৎপাদন, সরবরাহ পরিস্থিতি ও কর্মসংস্থানের তথ্য নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) এমসিসিআই কার্যালয়ে এ রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল। এছাড়া এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
পিএমআই সূচক হলো একটি দেশের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যদি কোনো দেশের পিএমআই সূচক ৫০ এর ওপর থাকে তাহলে ধরে নেওয়া হয় সেই দেশের অর্থনীতি সম্প্রসারণ ধারায় রয়েছে। বিপরীতে পিএমআই সূচক ৫০ এর নিচে নেমে গেলে অর্থনীতি সংকোচন হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
এমসিসিআই এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের পিএমআই সূচক দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ২০ পয়েন্টে, যা মার্চে ছিল ৬৪ দশমিক ৩০ পয়েন্ট। অর্থ মাসের ব্যবধানে পিএমআই সূচক ২ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমেছে।
এপ্রিলে পিএমআই সূচক নিম্নমুখী হলেও অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন বক্তারা। এ বিষয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, পিএমআই সূচক যদি ৫০ এর নিচে নেমে যায় তাহেল অর্থনীতির সংকোচন ধারা বোঝায়। ৫০ এর ওপর থাকলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ বোঝায়। পিএমআই সূচক ৬২ দশমিক ২০ পয়েন্ট হওয়ার অর্থ অর্থনীতি সম্প্রসারণ ধারায় রয়েছে। তবে সেই সম্প্রসারণ এপ্রিলে কিছুটা কমেছে। যদি এ সূচক ধারাবাহিকভাবে কমে সেটি খারাপ লক্ষণ।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এপ্রিল মাসে কৃষিখাতের পিএমআই সূচক দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯০ পয়েন্ট, যা মার্চে ছিল ৫৫ দশমিক ৭০ পয়েন্ট। এ হিসাবে এপ্রিলে কৃষিখাতে পিএমআই সূচক ৫ দশমিক ২০ পয়েন্ট বেড়েছে। অর্থাৎ কৃষিখাতের সম্প্রসারণ ভালো অবস্থানে রয়েছে বা এক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
কৃষির মতো ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন খাতেও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এপ্রিলে এ খাতের পিএমআই সূচক দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৫০ পয়েন্ট, যা মার্চে ছিল ৬৮ দশমিক ৪০ পয়েন্ট। অর্থাৎ এপ্রিলে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের পিএমআই সূচক বেড়েছে ৬ দশমিক ১০ পয়েন্ট।
অপরদিকে সম্প্রসারণ ধারায় থাকলেও নির্মাণ খাতের পিএমআই সূচক এপ্রিলে প্রায় ৪ পয়েন্ট কমেছে। এপ্রিলে এ খাতের পিএমআই সূচক দাঁড়িয়েছে ৬৩ দশমিক ৮০ পয়েন্ট, যা মার্চে ছিল ৬৭ দশমিক ৭০ পয়েন্ট। অর্থাৎ নির্মাণ খাতের পিএমআই সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৯০ পয়েন্ট।
নির্মাণ খাতের মতো সেবা খাতের পিএমআই সূচকও নিম্নমুখী। এপ্রিলে এ খাতের পিএমআই সূচক দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট, যা মার্চে ছিল ৬৩ দশমিক ৬০ পয়েন্ট। অর্থাৎ এপ্রিলে সেবা খাতের পিএমআই সূচক কমেছে ৭ দশমিক ৪০ পয়েন্ট।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট ডেটা প্রয়োজন। শুধু পর্যাপ্ত ডেটা থাকলেই হবে না, আমাদের প্রয়োজন গুণগত, উপযুক্ত ও নির্ভরযোগ্য ডেটা। নির্ভরযোগ্য ও মানসম্পন্ন ডেটা নীতি নির্ধারণ, সম্পদের সুষম বণ্টন ও জনসেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের আর্থিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন এবং সহায়ক শুল্কনীতির মাধ্যমে দেশের রপ্তানি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। প্রতি বছর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনীতি এবং বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন ও অগ্রগতি প্রকাশ করছে অর্থ মন্ত্রণলায়।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। রিয়েল টাইম ডেটার মাধ্যমে এটি অর্থনীতির সব খাতের তথ্য প্রদান করবে। জনগণের সার্বিক উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি খাত একসঙ্গে কাজ করবে।
এমএইচ