যেভাবে ঈদ কাটবে খালেদা জিয়ার
Share on:
শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজা’য় ঈদ উদযাপন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
ঈদের দিন সকালে ছোট ভাইসহ কয়েকজন নিকট আত্মীয় বাসায় আসবেন, তাদের নিয়ে ঈদের সময় কাটাবেন তিনি। রাতে দলের সিনিয়র নেতারা ঈদের সালাম জানাতে আসবেন ফিরোজায়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা বলতে গিয়ে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, ম্যাডাম অসুস্থ, গুলশানের বাসায় মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন। বোর্ডের চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে আছেন তিনি। ঈদের দিনে ঢাকায় উনার যেসব নিকট আত্মীয়-স্বজন আছেন উনারা বাসায় দেখা-সাক্ষাত করতে আসবেন। তাদের নিয়ে সময় কাটাবেন ম্যাডাম। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উনার ছেলে তারেক রহমান, তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান ভার্চুয়ালি কথা বলবেন। উনার এবারকার ঈদটা এ রকমই ।
এর আগের কয়েকটি ঈদে লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শার্মিলা রহমান সিঁথি এবং তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান ঢাকায় এসেছিলেন। খালেদা জিয়া তাদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন। এবার তাদের কেউ আসেননি।
তবে বড় বোন প্রয়াত খুরশীদ জাহান হকের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানে প্রবাসী তিন ছেলে এবং আরেক বোনের ছেলের মেয়ের ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে চলে গেছেন এই রোজার মধ্যেই।
খালেদা জিয়ার কারাবন্দি অবস্থায় ঈদ কাটানোর বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, একটা স্বৈরচারের যে শত রূপ থাকে তার প্রমাণ হচ্ছে বর্তমান সরকার। বিনা অপরাধে জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত চার বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাকে কারাবন্দি অবস্থায় ঈদ করতে হচ্ছে। সরকারের বাধার কারণে তার জামিন হচ্ছে না। ন্যায়বিচার পেলে তিনি অনেক আগেই ছাড়া পেয়ে যেতেন।
জানা গেছে, ঢাকায় আছেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ছেলে অভিক এস্কান্দারসহ কয়েকজন নিকট আত্মীয়। ঈদের দিন তারা ফিরোজা’য় আসবেন, দুপুরে তাদের বাসা থেকে রান্না করা খাবার খাবেন খালেদা জিয়া।
ডা. জাহিদ হোসেন জানান, ঈদের দিন রাত ৮টার দিকে দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ম্যাডামকে ঈদের সালাম জানাতে আসবেন।
৭৯ বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, ফুসফুস জটিলতা, ডায়াবেটিক, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে ভোগছেন। হঠাৎ হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবণতি হলে কয়েক বার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ গভীর রাতে গুলশানের বাসায় হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েলে বিএনপি চেয়ারপারসনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন দিন ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন ২ এপ্রিল।
জাহিদ জানান, অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিতৎসকদের নিয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড সার্বক্ষনিক তার চিকিৎসার দেখভাল করছেন।
২০১৮ সালে কারাবন্দি হওয়ার পর ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড়ের পরিত্যক্ত পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে দুটি ঈদ পার করেন খালেদা জিয়া। এরপর ২০১৯ সালের বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুটি ঈদ উদযাপন করতে হয় তাকে।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া পর রাধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১টি ঈদ এবং গুলশানের ফিরোজায় ৭টি কাটিয়েছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। এবার ঈদুল ফিতর ঈদও গুলশানের বাসায় কাটাবেন খালেদা জিয়া।
২০১৮ সালে খালেদা জিয়াকে বন্দি করা হয়। এর পর থেকে বন্দি অবস্থায় তাকে ঈদ পালন করতে হচ্ছে। এর আগে প্রতি বছর খালেদা জিয়া রাজনীতিবিদ, দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিদেশি কূটনীতিকসহ সর্বসাধারণের সঙ্গে যে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। তবে তিনি কারান্তরীণ থাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হলেও তিনি মূলত গৃহবন্দি। বেগম খালেদা জিয়া বন্দি হওয়ার পর থেকে আমরা সব সময় তার শূন্যতা অনুভব করছি। তিনি আমাদেরকে সন্তানতুল্য ভালোবাসতেন। তাকে বন্দি অবস্থায় রেখে আমারা কীভাবে ঈদ করি?
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভুঁইয়া মিল্টন বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক ও সাবেক সেনাপ্রধান এবং প্রেসিডেন্টের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া । তিনি নিজেও একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আজকে তাকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। এভাবে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, আমার যারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কাজ করেছি তাদের আবেগ অনুভূতি আর দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর আবেগ অনুভূতির মধ্যে কোনো তফাত নেই। প্রতিটি মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়ার শূন্যতা অনুভব করি। মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি তিনি যেন এই সরকারের প্রতিহিংসা মূলক নির্যাতন থেকে মুক্তি পান ও সবসময় সুস্থ থাকেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনো পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।
এনএইচ